নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের হাশেম ফুডস অ্যান্ড বেভারেজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এবার কারখানার চেয়ারম্যান ও উপমহাব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর।
শ্রম আদালতে মামলায় চেয়ারম্যান আবুল হাশেম ও উপমহাব্যবস্থাপক মামুনুর রশিদের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
নিউজবাংলাকে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জের উপমহাপরিদর্শক সৌমেন বড়ুয়া বৃহস্পতিবার বিকেলে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, আদালত দুপুর ১২টার দিকে মামলা নেয়। মামলাটি করেছেন সংস্থাটির পরিদর্শক নেছার আহমেদ।
সৌমেন বড়ুয়া বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডে নিহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ প্রদান ও আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য খরচ যদি ওই কারখানার মালিক না দেন তাহলেও আমরা তার বিরুদ্ধে শ্রম আদালতে আরও কয়েকটি মামলা করব।’
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের ওই কর্মকর্তা জানান, অগ্নিকাণ্ডের আগে ওই কারখানা পরির্দশন করা হয়েছিল। তখন নানা সমস্যা খুঁজে পাওয়ায় যায়। পরে সংস্থাটির নারায়ণগঞ্জ কার্যলয়ের সহকারী শ্রম পরিদর্শক সৈকত মাহমুদ শ্রম আদালতে ৩০ জুন হাশেম ফুডের বিরুদ্ধে মামলা করেন। কিন্তু কারখানার মালিকসহ কর্তৃপক্ষ সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে কোনো জবাব দেননি।
তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনাজনিত প্রাণহানি হলে দুই কার্যদিবসের মধ্যে ওই ঘটনা কলকারখানা পরিদর্শককে নোটিশ করে জানানোর বিধান থাকলেও কারখানা কর্তৃপক্ষ তা করেনি। এ কারণেই আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে আবুল হাশেম ও মামুনুর রশিদের বিরুদ্ধে আজ মামলা করা হলো।’
৮ জুলাই সন্ধ্যায় হাশেম ফুড লিমিটেডের কারখানায় আগুন লাগে। শুরুতে তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলেও পরের দিন উদ্ধার করা হয় ৪৯ জনের মরদেহ। মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫২ জনে।
বেশির ভাগের মরদেহই পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়ায় পরিচয় শনাক্তের জন্য স্বজনদের নমুনা সংগ্রহ করে ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়। বৃহস্পতিবার আগুন লাগলেও শুক্রবার রাতের আগে পুরোপুরি আগুন নেভানো যায়নি।
আগুন নেভাতে দীর্ঘ সময় লাগার কারণ মনে করা হচ্ছে কারখানার প্রতি ফ্লোরে মজুত করা দাহ্য পদার্থ। ছিল বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক, যা আগুন আরও ছড়িয়ে যেতে অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে।
মালিকপক্ষ থেকে দাবি করা হয়, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকেই এই আগুনের সূচনা। তবে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনার পেছনে কারখানা কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলা ও অব্যবস্থাপনা দায়ী বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে বিভিন্ন দায়িত্বশীল সংস্থা।
ঘটনার তদন্তে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করেছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। গঠিত এই উচ্চপর্যায়ের কমিটি সরকারের কাছে একটি প্রতিবেদন জমা দেবে।
এ ঘটনায় করা মামলায় চেয়ারম্যান হাশেমসহ ৮ আসামিকে চার দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। রিমান্ডে শেষে আদালতে তোলা হলে বুধবার হাশেমসহ ৬ জনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত।