বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ব্যবসায়ীকে পিটুনি: এবার ইউএনওর সম্পৃক্ততা তদন্তে কমিটি

  •    
  • ১১ জুলাই, ২০২১ ২০:০১

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধে শাটডাউনের মধ্যে সিংগাইরের ধল্লা ইউনিয়নের জাগীর বাজারে দোকান খুলেছিলেন স্বর্ণকার তপন চন্দ্র দাশ। বৃহস্পতিবার বিকেলে সেই বাজারে অভিযান চালান ইউএনও রুনা লায়লা। তপনকে দুই হাজার টাকা জরিমানা করার পর তিনি তা পরিশোধ করেন। সেখানে এক পুলিশ সদস্য তাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ জানিয়েছে, ইউএনওর নির্দেশেই এই মারধর হয়েছে।

মানিকগঞ্জের সিংগাইরে একটি বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলাকালে ব্যবসায়ীকে পিটুনির ঘটনায় পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহারের পর এবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুনা লায়লার ভূমিকা তদন্তে কমিটি করেছে জেলা প্রশাসন।

তদন্তে দায় পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক আব্দুল লতিফ। তিনি বলেন, ‘প্রতিবেদন অনুযায়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এই ঘটনায় এক পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করার পরও মারধরের ‘নির্দেশদাতা’ ইউএনওর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় সমালোচনার মধ্যে রোববার বিকেলে এই সিদ্ধান্ত নিল জেলা প্রশাসন।

তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে জেলার স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ পরিচালক শফিকুল ইসলামকে। তবে কত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে হবে, সেই বিষয়টি নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি।

তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া শফিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছেন জেলা প্রশাসক মদোহয়। তবে কোনো সময় নির্ধারণ করে দেননি। আশা দ্রুত সময়ের মধ্যে জেলা প্রশাসক মহাদয়ের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পারব।’

কবে থেকে কাজ শুরু করবেন-এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আগামীকাল থেকে।’

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ওই মারধরের ঘটনা ঘটে সিংগাইরের ধল্লা ইউনিয়নের জাগীর বাজারে। মারধরের শিকার হন তপন চন্দ্র দাশ। তাকে দুই হাজার টাকা জরিমানাও করেন ইউএনও রুনা লায়লা।

প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন আসে যে, ব্যবসায়ী তপন চন্দ্র দাশ ইউএনওকে ‘আপা’ সম্বোধন করায় তাকে পিটুনি দেয় পুলিশ।

ইউএনও এই সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। একটি জাতীয় গণমাধ্যমে তার প্রতিবাদলিপি ছাপার পর নিজের ফেসবুক পেজে সেই প্রতিবাদলিপি পোস্টও করেছেন। তবে সেই ব্যবসায়ীকে মারধরের বিষয়ে তিনি কোনো ব্যাখ্যা দিচ্ছেন না।

ইউএনও রুনা লায়লা তার প্রতিবাদলিপিতে ‘আপা’ ডাকা প্রসঙ্গ তুললেও ব্যবসায়ীকে পিটুনির নির্দেশের বিষয়ে কিছু বলছেন না

আবার ইউএনওর নানা অভিযানের ছবি উপজেলা পরিষদের ফেসবুক পেজে নিয়মিত পোস্ট করা হলেও বৃহস্পতিবারের একটি ছবিও পোস্ট করা হয়নি।

গণমাধ্যমে এই ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর শুক্রবারই মারধরে জড়িত সন্দেহভাজন পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিংগাইর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম মোল্লা।

ইউএনওর নির্দেশে মারধর: পুলিশ

ইউএনও রুনা লায়লা যদিও এই ভূমিকায় তার দায় অস্বীকার করেছেন, তবে সিংগাইরের ওসি ছাড়াও সার্কেলের এএসপিও নিশ্চিত করেছেন, পুলিশ মারধর করেছে ইউএনওর নির্দেশেই।

ওসি শফিকুল ইসলাম মোল্লা পুলিশ সদর‌্য রফিককে প্রত্যাহারের বিষয়ে বলেন, ‘ঘটনার পরদিন অর্থাৎ শুক্রবার তাকে পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করা হয়েছে। উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে যেহেতু ওই ব্যবসায়ীকে মারধর করেছেন... এই অভিযোগে তাকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়।’

সিংগাইর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার রেজাউল হকও এই ঘটনায় ইউএনওর দায় দেখেছেন। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমি সেখানে ছিলাম না। তবে আমার পুলিশ সদস্য রফিকের কথা রেকর্ড করেছি। সে বলেছে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশেই মেরেছে।’

সার্বজনীন মানবাধিকারের ঘোষণা অনুযায়ী কাউকে নির্যাতনমূলক কোনো সাজা দেয়া যাবে না। বাংলাদেশ এই ঘোষণায় অনুস্বাক্ষর করেছে আর কাউকে আঘাত করা বাংলাদেশেও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

ঘটনা যা ঘটেছে

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধে শাটডাউনের মধ্যে সিংগাইরের ধল্লা ইউনিয়নের জাগীর বাজারে দোকান খুলেছিলেন স্বর্ণকার তপন চন্দ্র দাশ। বৃহস্পতিবার বিকেলে সেই বাজারে অভিযান চালান ইউএনও রুনা লায়লা।

এ সময় তপনকে দুই হাজার টাকা জরিমানা করার পর তা পরিশোধ করেন। এরপর তাকে লাঠি দিয়ে মারধর করা হয়।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলাকালে মারধরের শিকার সিংগাইরের জাগীর বাজারের স্বর্ণকার তপন চন্দ্র দাশ

ইউএনও নিউজবাংলাকে বলেন ‘সরকারের নির্দেশ উপেক্ষা করে লকডাউনের মধ্যে দোকান খোলা রেখে দোকানের শাটার নামিয়ে মালিকসহ ৮-১০ জন লোক বসা ছিল। দোকান খোলা ও লোকসমাগম করার অপরাধে তাকে ২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।’

পিটুনির শিকার ব্যবসায়ী তপন চন্দ্র দাশ বলেন, ‘ক্রেতাদের পূর্বের কিছু মালের অর্ডার থাকায় সেগুলো ডেলিভারি দিতেই দোকান খুলেছিলাম। এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত এসে হাজির হয়। আমি জরিমানার টাকাও পরিশোধ করি। পুলিশ দেখে ভয় পেয়ে ইউএনওকে আপা বলে ক্ষমা চাই। এরপর কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমাকে লাঠি দিয়ে তিন-চারটি বাড়ি মারে এক পুলিশ।’

আপা বলায় মারধরের সংবাদের প্রতিবাদ ইউএনওর

গণমাধ্যমে আসে যে, অভিযান চলাকালে ইউএনওকে ‘আপা’ সম্বোধন করেন স্বর্ণকার তপন। আর এরপর তাকে মারধর করে সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে থাকা এক নিরাপত্তাকর্মী।

ইদানীং দেখা যাচ্ছে, সরকারি চাকুরেদের মধ্যে ‘স্যার’ শব্দ শোনার বাসনা পেয়ে বসেছে। বহু ঘটনা ঘটেছে, যেখানে ‘স্যার’ না বলার কারণে মানুষকে অপমানিত হতে হয়েছে, নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। মানিকগঞ্জের এই ঘটনাটি সামনে আসার পরও ‍তুমুল সমালোচনা তৈরি হয়।

তবে ইউএনও প্রতিবাদলিপিতে বলেছেন, তাকে আপা ডাকা নিয়ে পুলিশ কর্তৃক ব্যবসায়ীকে মারধরের বিষয়টি সঠিক নয়। মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সময় ব্যবসায়ীকে জরিমানা করার পাশাপাশি সরকারি কাজে অসহযোগিতার জন্য তাকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে নিউজবাংলাকে রুনা লায়লা বলেন, ‘আমি তো কাউকে মারতে বলিনি।’

কিন্তু মারল কেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি তখন দূরে। কিন্তু ঘটনা ঘটে গেছে।’

কিন্তু তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা কেন নেননি আর সেই পুলিশের বিরুদ্ধে কেন রিপোর্ট করেননি- এমন প্রশ্নে ইউএনও রুনা লায়লা বলেন, ‘এটা ওই রকমের কোনো ঘটনা না, সে জন্য পুলিশকে কিছু জানানো হয়নি।’

এ বিভাগের আরো খবর