বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পুলিশ প্রত্যাহার, পিটুনির ‘নির্দেশদাতা’ ইউএনওর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেই

  •    
  • ১১ জুলাই, ২০২১ ১৬:০২

গণমাধ্যমে প্রথমে সংবাদ প্রকাশ হয় যে, ইউএনওকে ‘আপা’ সম্বোধন করায় পুলিশ ব্যবসায়ীকে পিটিয়েছে। ইউএনও এই সংবাদের প্রতিবাদ করার পর বিভিন্ন গণমাধ্যম সেটি ছাপিয়েছে। তবে সেই ব্যবসায়ীকে মারধরের বিষয়ে তিনি কোনো ব্যাখ্যা দিচ্ছেন না। সিংগাইর সার্কেলের এএসপি নিশ্চিত করেছেন যে, ইউএনওর নির্দেশেই এই পিটুনি দেয়া হয়েছে।

মানিকগঞ্জের সিংগাইরে শাটডাউনের মধ্যে দোকান খোলা রাখায় এক স্বর্ণকারকে মারধরের ঘটনায় পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

তবে ‘নির্দেশদাতা’ হিসেবে নাম আসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুনা লায়লার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন।

সিংগাইর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম মোল্লা পুলিশ সদস্যকে প্রত্যহারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে এই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা বা অন্য কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না, সে বিষয়ে কিছু বলছেন না।

নিউজবাংলাকে ওসি বলেন, ‘ঘটনার পরদিন অর্থাৎ শুক্রবার তাকে পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করা হয়েছে। উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে যেহেতু ওই ব্যবসায়ীকে মারধর করেছে। এই অভিযোগে তাকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়।’

ওই পুলিশ সদস্যের নাম রফিক বলে প্রকাশ পেয়েছে। তবে তার পুরো নাম জানা যায়নি।

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ওই মারধরের ঘটনা ঘটে সিংগাইরের ধল্লা ইউনিয়নের জাগীর বাজারে। মারধরের শিকার হন তপন চন্দ্র দাশ। তাকে দুই হাজার টাকা জরিমানাও করেন ইউএনও রুনা লায়লা।

প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন আসে যে, ব্যবসায়ী তপন চন্দ্র দাশ ইউএনওকে ‘আপা’ সম্বোধন করায় তাকে পিটুনি দেয় পুলিশ।

ইউএনও এই সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। একটি জাতীয় গণমাধ্যমে তার প্রতিবাদলিপি ছাপার পর নিজের ফেসবুক পেজে সেই প্রতিবাদলিপি পোস্টও করেছেন। তবে সেই ব্যবসায়ীকে মারধরের বিষয়ে তিনি কোনো ব্যাখ্যা দিচ্ছেন না।

আবার ইউএনওর নানা অভিযানের ছবি উপজেলা পরিষদের ফেসবুক পেজে নিয়মিত পোস্ট করা হলেও বৃহস্পতিবারের একটি ছবিও পোস্ট করা হয়নি।

ইউএনও রুনা লায়লা তার প্রতিবাদলিপিতে ‘আপা’ ডাকা প্রসঙ্গ তুললেও ব্যবসায়ীকে পিটুনির নির্দেশের বিষয়ে কিছু বলছেন না

পিটুনি দেয়া পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হলেও নির্দেশদাতা ইউএনওর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেই কেন- এমন প্রশ্নের জবাব জানতে জেলা প্রশাসক আব্দুল লতিফকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি আইনশৃঙ্খলার মিটিংয়ে আছি, পরে কথা বলি।’

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মনিরুজ্জামানকে কল করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।

ঘটনা যা ঘটেছে

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধে শাটডাউনের মধ্যে সিংগাইরের ধল্লা ইউনিয়নের জাগীর বাজারে দোকান খুলেছিলেন স্বর্ণকার তপন চন্দ্র দাশ। বৃহস্পতিবার বিকেলে সেই বাজারে অভিযান চালান ইউএনও রুনা লায়লা।

অভিযানে তপন চন্দ্র দাশকে দুই হাজার টাকা জরিমানা করার পর তা পরিশোধ করেন।

ইউএনও বলেন, ‘সরকারের নির্দেশ উপেক্ষা করে লকডাউনের মধ্যে দোকান খোলা রেখে দোকানের শাটার নামিয়ে মালিকসহ ৮-১০ জন লোক বসা ছিল। দোকান খোলা ও লোকসমাগম করার অপরাধে তাকে ২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।’

ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলাকালে মারধরের শিকার সিংগাইরের জাগীর বাজারের স্বর্ণকার তপন চন্দ্র দাশ

পিটুনির শিকার ব্যবসায়ী তপন চন্দ্র দাশ বলেন, ‘ক্রেতাদের পূর্বের কিছু মালের অর্ডার থাকায় সেগুলো ডেলিভারি দিতেই দোকান খুলেছিলাম। এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত এসে হাজির হয়। আমি জরিমানার টাকাও পরিশোধ করি। পুলিশ দেখে ভয় পেয়ে ইউএনওকে আপা বলে ক্ষমা চাই। এরপর কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমাকে লাঠি দিয়ে তিন-চারটি বাড়ি মারে এক পুলিশ।’

গণমাধ্যমে আসে যে, অভিযান চলাকালে ইউএনওকে ‘আপা’ সম্বোধন করেন স্বর্ণকার তপন। আর এরপর তাকে মারধর করে সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে থাকা এক নিরাপত্তাকর্মী।

ইদানীং দেখা যাচ্ছে, সরকারি চাকুরেদের মধ্যে ‘স্যার’ শব্দ শোনার বাসনা পেয়ে বসেছে। বহু ঘটনা ঘটেছে, যেখানে ‘স্যার’ না বলার কারণে মানুষকে অপমানিত হতে হয়েছে, নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। মানিকগঞ্জের এই ঘটনাটি সামনে আসার পরও ‍তুমুল সমালোচনা তৈরি হয়েছে।

তবে ইউএনও প্রতিবাদলিপিতে বলেছেন, তাকে আপা ডাকা নিয়ে পুলিশ কর্তৃক ব্যবসায়ীকে মারধরের বিষয়টি সঠিক নয়। মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সময় ব্যবসায়ীকে জরিমানা করার পাশাপাশি সরকারি কাজে অসহযোগিতার জন্য তাকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।

মারধর হয়েছে বলছেন ডিসি, ইউএনও নিজে, তবে দায় দিলেন পুলিশকে

সার্বজনীন মানবাধিকারের ঘোষণা অনুযায়ী কাউকে নির্যাতনমূলক কোনো সাজা দেয়া যাবে না। বাংলাদেশ এই ঘোষণায় অনুস্বাক্ষর করেছে আর কাউকে আঘাত করা বাংলাদেশেও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

স্পষ্টত সেদিন সেখানে আইনের লঙ্ঘন হয়েছে এবং এর দায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী ইউএনও রুনা লায়লার।

মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক আব্দুল লতিফ এই ঘটনার জন্য দায়ী করেছেন ‘অতি উৎসাহী’ পুলিশ সদস্যকে। নিউজবাংলাকে তিনি শুক্রবার বলেন, ‘অতি উৎসাহী হয়ে পুলিশের এক কনস্টেবল লাঠি দিয়ে কয়েকটা বাড়ি দেয়। কেউ যদি অতি উৎসাহী হয়ে কাউকে বাড়ি দেয়, সেটা তো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দোষ না। কারণ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তো তাকে মারতে বলে নাই।’

ইউএনও বলেছেন, ‘আমি তো কাউকে মারতে বলিনি।’ কিন্তু মারল কেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি তখন দূরে। কিন্তু ঘটনা ঘটে গেছে।’

কিন্তু তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা কেন নেননি আর সেই পুলিশের বিরুদ্ধে কেন রিপোর্ট করেননি- এমন প্রশ্নে ইউএনও বলেন, ‘এটা ওই রকমের কোনো ঘটনা না, সে জন্য পুলিশকে কিছু জানানো হয়নি।’

তবে পুলিশের ভাষ্যে মিলেছে অন্য তথ্য।

সিংগাইর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার রেজাউল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি সেখানে ছিলাম না। তবে আমার পুলিশ সদস্য রফিকের কথা রেকর্ড করেছি। সে বলেছে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশেই মেরেছে।’

এ বিভাগের আরো খবর