নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের সজিব গ্রুপের কারখানা হাশেম ফুডসের ভবনে বৃহস্পতিবার আগুন লাগার পর থেকেই নিখোঁজ আমেনা। এরপর থেকেই ঘুম নেই তার একমাত্র ছেলে রাফিনের।
পাঁচ বছর বয়সী শিশুটি জানে তার মা এখনও জীবিত, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। কিন্তু তাকে মায়ের কাছে যেতে দেয়া হচ্ছে না।
নারায়ণগঞ্জের সবগুলো হাসপাতালে খোঁজাখুজির পর রোববার দুপুরে আমেনার খোঁজে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আসেন তার বাবা-মা ও বড় বোন। তাদের সঙ্গে আসে রাফিনও। নানা-নানীকে তার বার বার প্রশ্ন মা কোথায়। নানির জবাব, ‘তোমার মা অসুস্থ। হাসপাতালে ভর্তি আছে।’
রাফিন নানাকে বলে, ‘আমি মায়ের কাছে যাব।’
নানা বলে, ‘তোমার মা হাসপাতালের ভেতরে, সেখানে যাওয়া যাবে না।’
সাংবাদিদের দেখে মায়ের ছবি হাতে দৌড়ে আসে রাফিন। বলে, ‘সাংবাদিক ভাইয়া, আমার মায়েরে দেহার ব্যবস্থা কইরা দেন।’
রাফিনের একটাই কথা, ‘আমার মারে দেন। মা ছাড়া আমি রাইতে গুমাতে পারি না। ও সবাদিক ভাই আমারে মায়ের কাছে লইয়া জান। আমার মা চাই।’
এক পর্যায়ে হাসপাতালের মুখে কয়েকটি লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পরে রাফিন।
কানতে কানতে বলে, ‘আমি বুইজা পালাইসি আমার মা নাই। আগুনে মারা গেছে। আমার কী হবে। আমরে কেডা গোসল করাইব, কেডা খাওয়াব।’
আমেনার খোঁজে ঢাকা মেডিক্যালে স্থাপিত সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের বুথে নমুনা দেন তার বড় বোন মমতাজ বেগম।
গত বৃহস্পতিবার রাতে হাশেম ফুডের কারখানাটিতে আগুন লাগার পর শুরুতে তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলেও পরের দিন উদ্ধার করা হয় ৪৯ জনের মরদেহ। মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫২ জনে। বেশির ভাগই পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়ায় ডিএনএ নমুনা পরীক্ষাই এখন তাদের পরিচয় শনাক্তে একমাত্র উপায়।
পুড়ে যাওয়া ৪৮ লাশের মধ্যে এ পর্যন্ত ৪২ জনের বিপরীতে ৬০ জন স্বজনের নমুনা সংগ্রহ করেছে সিআইডি। এর মধ্যে শুক্রবার ও শনিবার ৪০ জন মৃতের বিপরীতে ৫৭ জনের নমুনা নেয় ফরেনসিক বিভাগ।