নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের সজিব গ্রুপের কারখানা হাশেম ফুডসের ভবনে অগ্নিকাণ্ডে নিহত ব্যক্তিদের দেখে চেনার কোনো উপায় নেই। বেশির ভাগই পুড়ে একেবারে কয়লা হয়ে গেছে। ডিএনএ টেস্টের জন্যও টিস্যু নেয়ার উপায় নেই। ফলে তাদের দাঁত ও হাড় থেকে নেয়া হয়েছে নমুনা।
পুড়ে মারা যাওয়া শ্রমিকদের অবস্থা প্রসঙ্গে এসব তথ্য দেন সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার রুমানা আক্তার। তার নেতৃত্বেই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বুথ বসিয়ে নেয়া হচ্ছে নিহত এবং তাদের স্বজনদের ডিএনএ নমুনা।
সাংবাদিকদের রুমানা আক্তার বলেন, ‘আগুনে দগ্ধ লাশগুলো এত বেশি বার্ন ছিল যে আমরা শুধু দাঁত ও হাড়ের নমুনা ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ের জন্য নিতে পেরেছি। টিস্যুর নমুনা নিতে পারলে দ্রুত প্রোফাইলিং করা যেত। কিন্তু টিস্যু পুড়ে যাওয়ায় আমরা নিতে পারিনি। দাঁত ও হাড় থেকে ডিএনএ প্রোফাইলিং করতে ২১ থেকে ৩০ দিন সময় লাগতে পারে।’
রোববার দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত পুড়ে যাওয়া আরও দুটি মরদেহের বিপরীতে তিন স্বজনের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে, যা দিয়ে ডিএনএ প্রোফাইলিং করা হবে। নিহত ও তাদের স্বজনদের ডিএনএ নমুনা ম্যাচিং করে পুড়ে যাওয়া লাশের পরিচয় শনাক্ত করা হবে।
পুড়ে যাওয়া ৪৮ লাশের মধ্যে এ পর্যন্ত ৪২ জনের বিপরীতে ৬০ জন স্বজনের নমুনা সংগ্রহ করেছে সিআইডি। এর মধ্যে শুক্রবার ও শনিবার ৪০ জন মৃতের বিপরীতে ৫৭ জনের নমুনা নেয় ফরেনসিক বিভাগ।
ভোলার চরফ্যাশনের ১১ বছরের হাসনাইন ও ১৮ বছরের নোমান মাতাব্বরের জন্য রোববার নমুনা দিয়ে যান স্বজনেরা। তারা চাকরি করত হাশেম ফুড কারখানার চারতলার সেমাই সেকশনে। অগ্নিকাণ্ডের পর থেকেই নিখোঁজ তারা।
ঢাকা মেডিক্যালে আনা ৪৮টি মরদেহের মধ্যে এখনও ৬ জনের স্বজনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়নি। স্বজনেরা না আসায় নমুনা সংগ্রহ বিলম্ব হচ্ছে।
সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার রুমানা আক্তার বললেন, ‘আমাদের নমুনা সংগ্রহ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। আজকেও সারা দিন নমুনা সংগ্রহের জন্য আমাদের টিম থাকবে।’
গত বৃহস্পতিবার রাতে হাশেম ফুডের কারখানাটিতে আগুন লাগার পর শুরুতে তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলেও পরের দিন উদ্ধার করা হয় ৪৯ জনের মরদেহ। মোট মৃত ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫২ জনে। বেশির ভাগই পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ায় ডিএনএ নমুনা পরীক্ষাই এখন তাদের পরিচয় শনাক্তে একমাত্র উপায়।
এত বেশি মরদেহের জায়গা ধরছে না ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মর্গে। মরদেহগুলোর মধ্যে ১৫টি নিয়ে যাওয়া হয়েছে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে। ৮টি মরদেহ আছে ঢাকা মেডিক্যালের জরুরি বিভাগের মর্গে। ২৫টি আছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মর্গে।
এই অগ্নিকাণ্ডে হতাহত ব্যক্তিদের জন্য শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে আর্থিক সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে আহত প্রত্যেককে ৫০ হাজার করে টাকার চেক হস্তান্তর করা হয়েছে। আর নিহত ব্যক্তিদের পরিচয় শনাক্ত হওয়ার পর প্রত্যেকের পরিবারকে দেয়া হবে ২ লাখ টাকা করে।
এই ঘটনায় সজিব গ্রুপের শীর্ষস্থানীয় আট কর্মকর্তাকে শনিবার গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের নারায়ণগঞ্জ জেলা আদালতে তোলা হলে প্রত্যেককে চার দিনের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।
সজিব গ্রুপের গ্রেপ্তার আট কর্মকর্তা হলেন গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল হাশেম, তার ছেলে গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হাসিব বিন হাশেম, অন্য তিন ছেলে তারেক ইব্রাহিম, তাওসিফ ইব্রাহিম, তানজিব ইব্রাহিম, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শাহান শাহ আজাদ, ডিজিএম মামুনুর রশীদ ও অ্যাডমিন প্রধান মো. সালাউদ্দিন।