নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাশেম ফুডস লিমিটেডের কারখানায় আগুন লাগার পর চারতলার ফ্লোর সুপারভাইজার লোহার গেট তালাবদ্ধ করে দিয়েছিলেন বলে বেঁচে যাওয়া শ্রমিকরা জানিয়েছেন। তারা বলছেন, আগুনে পুড়ে প্রাণ গেছে ওই সুপারভাইজারেরও।
ওই ব্যক্তির নাম মাহবুব বলে জানান শ্রমিকরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কারখানার এক শ্রমিক বলেন, ‘যে তালা মারছে সে-ও মরছে।’
তিনি কে, জানতে চাইলে ওই শ্রমিক বলেন, ‘চারতলার ইনচার্জ মাহবুব ও তার দুই সহযোগীও আগুনে মারা গেছেন। আগুনের সময় তারাও গেটের ভেতরে ছিলেন।’
কারখানার একাধিক শ্রমিকের কাছে মাহবুবের বিষয়ে জানতে চাইলে তারাও এ তথ্য দিয়েছেন।
এই কারখানার চারতলায় চুক্তিতে শিশুসহ অনেকে নিয়োগ পাইয়ে দিয়েছেন সাব-কন্ট্রাক্টর মোতালেব মিয়া।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগুন লাগার খবর পেয়ে চিৎকার করতে করতে ওই ভবনের সামনে গেছি। তখন চারতলার একজন নারীশ্রমিক উপর থেকে জানালা দিয়ে দেখছিল। ওই মেয়েটারে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন রশি দিয়া নিচে নামাইছে।
‘ওর কাছে (নারীশ্রমিক) বৃহস্পতিবার বিকেলে জিজ্ঞাসা করছিলাম ভেতরে কী হইছে। তখন ও বলছে আগুনের খবর শুনে সুপারভাইজার মাহবুব স্যার সবাইরে রুমের এসির সামনে নিয়া দাঁড় করাইতাছিল। তখন নাকি ওই মেয়েটা কৌশলে বের হয়ে গেছে। নিচে আগুনের তাপ দেইখা উপরে ছাদে গেছে। মনে হয়, এর পরই গেট বন্ধ হইছে।’
মোতালেব মিয়ার বাড়ি ভোলার চরফ্যাশনে। তিনি বলেন, ‘গতকাল থেকে ঢাকা মেডিক্যাল ও ইউএস বাংলা হাসপাতালে অনেকবার গেছি। কারণ, চরফ্যাশন এলাকার ১২ জনরে আমি কাজে আনছিলাম। তারা সবাই নিখোঁজ। সেখানে মাহবুব স্যারের খোঁজ করছি কিন্তু তারেও পাই নাই। তার ফোনও বন্ধ।’
মাহবুবের বিষয়ে কারখানার শাখা ব্যবস্থাপক মো. সোহেলের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওনার খোঁজ জানি না।
‘ভবনের কারখানাগুলোতে জালি গেট ছিল। সেখানে আলাদাভাবে কাজের জন্য এই ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আগুনে অন্য ফ্লোরের লোকজন নামতে পারলেও চারতলার লোকজনই আটকা পড়ে। তারা ছয়তলায় যাওয়ার চেষ্টা করছে। আমার ধারণা, ফ্লোরের সুপারভাইজারের নির্দেশ মানতে তারা ভেতরে একত্র হয়েছিল। কিন্তু ধোঁয়া ও আগুনের কারণে বের হতে পারেনি।’
সোহেল জানান, ঘটনার পর থেকে মাহবুবের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
মাহবুবের সন্ধান দিতে পারেনি হাশেম ফুড লিমিটেডের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) রফিকুল ইসলাম রাজুও।
ফায়ার সার্ভিস ঢাকা বিভাগের উপপরিচালক (অপারেশন) দেবাশীষ বর্ধন নিউজবাংলাকে জানান, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর চারতলায় গিয়ে দেখা গেছে, ওই গেটের উপরের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে নিচের দিকে পড়ে ছিল।
দেবাশীষ বলেন, ‘আমরা অসংখ্যবার চারতলার গেটের সামনে গিয়েছি। সেখানে ফ্লোরে প্রবেশের আগেই লোহার তৈরি ঝালি গেট বানানো ছিল। দুইটি অংশ একত্র করে মাঝখানে তালা দেয়া হতো। মরদেহগুলো চারতলার পূর্ব পাশের জানালার কাছাকাছি অবস্থায় পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, গেট বন্ধ থাকায় আটকে পড়া শ্রমিকরা জানালা দিয়ে নিচে নামার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু আগুনের শিখা ও ধোঁয়া অনেক বেশি ছিল।’
জানা গেছে, চারতলার ওই গেট বানানো হয়েছিল যেন শ্রমিকরা অন্য ফ্লোরে না যায়। তবে আগুন লাগার পর গেটটি কেন বন্ধ করা হয়, তা পরিষ্কারভাবে কেউ জানাতে পারেনি।