ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চাঁদার দাবিতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স আটকে রাখার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি হয়েছে।
তদন্ত কমিটিকে পাঁচ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
নিউজবাংলাকে বুধবার পৌনে দুইটায় তদন্ত কমিটি গঠনের তথ্য নিশ্চিত করেন মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ চিত্তরঞ্জন দেবনাথ।
ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক আফতাব উদ্দিনকে এই কমিটির প্রধান করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন গাইনি বিভাগের অধ্যাপক তায়েবা তানজিন মির্জা ও সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ।
চিত্তরঞ্জন দেবনাথ বলেন, ‘অ্যাম্বুলেন্সচালকদের কাছে মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের চাঁদা দাবি করার বিষয়টি মঙ্গলবার জানতে পরেছি। এ জন্য বুধবার বেলা আড়াইটার দিকে কলেজে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তারা আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে। যদি ঘটনা সত্য হয়ে থাকে, তাহলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ময়মনসিংহ অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতির সভাপতি সেলিম মিয়া মঙ্গলবার নিউজবাংলাকে জানান, হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে থেকে মরদেহ নিয়ে যাওয়ার সময় অ্যাম্বুলেন্সচালকদের কাছে চাঁদা দাবি করেন মেডিক্যাল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি অনুপম সাহার অনুসারীরা। চাঁদা না পেয়ে সকালে হাসপাতালের সামনের সব অ্যাম্বুলেন্সের চাবি নিয়ে যান তারা। এতে ভোগান্তিতে পড়েন লাশ নিয়ে বাড়ি ফেরা স্বজনরা।
করোনা ওয়ার্ডে মারা যাওয়া নেত্রকোণায় আব্দুস সাত্তারের স্বজন সবুজ মিয়া বলেন, ‘ছাত্রলীগ নেতারা অ্যাম্বুলেন্সের চাবি নিয়ে যাওয়ার পর থেকে পাঁচ ঘণ্টা বসেছিলাম। পরে অ্যাম্বুলেন্স থেকে মরদেহ নামিয়ে সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া করে রওনা দিই।’
এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ময়মনসিংহ জেলার সাবেক ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজাদ জাহান শাহীন বলেন, ‘এটি অত্যন্ত ঘৃণিত কাজ। ছাত্রলীগকে চাঁদাবাজি করার দায়িত্ব দেয়া হয়নি। এ ঘটনায় জড়িত সবার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া উচিত।’
তবে অভিযোগের বিষয়ে মঙ্গলবার ছাত্রলীগ নেতা অনুপম সাহার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তাকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। এসএমএস পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি।
নিউজবাংলার সঙ্গে বুধবার যোগাযোগ হয় অনুপমের। তিনি বলেন, ‘দুই দিন আগে রাতের বেলায় মেডিক্যালের চার ছাত্রী কলেজের ভেতরে প্রবেশের সময় কয়েকজন অ্যাম্বুলেন্সচালক ও হেলপার বাজে কথা বলে উত্ত্যক্ত করেন।
‘বিষয়টি অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতির কয়েকজনকে জানানো হয়। কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নেননি। উল্টো দাবি করেন, তাদের চালক ও হেলপাররা অশিক্ষিত। তারা উত্ত্যক্ত করতেই পারেন।
‘পরে অ্যাম্বুলেন্সচালকদের বলি আপনারা ক্যাম্পাসের বাইরে অ্যাম্বুলেন্স রাখেন৷ এর পরিপ্রেক্ষিতেই তারা আমাদের ওপর মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ তুলেছেন।’
চাঁদা না দেয়ায় অ্যাম্বুলেন্সের চাবি নিয়েছিলেন কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের কেউ চাবি নেয়নি। তারা কৌশলে আমাদের ওপর মিথ্যা অপবাদ চাপানোর চেষ্টা করছে।’
অ্যাম্বুলেন্স চালক কল্যাণ সমিতির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি তখন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম। তাদের চাঁদা দিলে চাবি কেড়ে নেয়ার ঘটনা হতো না। এমন ঘটনা আর কখনও যেন না হয়, সে জন্য জড়িতদের বিরুদ্ধে কলেজ কর্তৃপক্ষকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। নয়তো সারা দেশের অ্যাম্বুলেন্সচালকদের নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’