মগবাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণের উৎস বেঙ্গল মিটের আউটলেটের পেছনের অংশ বলে শুরুতে অনুমান করছিলেন তদন্তকারীরা। তবে পরবর্তীতে জানা যায়, বেঙ্গল মিটের পেছনের অংশে পাশের রেস্তোরাঁ শর্মা হাউসের কিচেন। বিস্ফোরণের কেন্দ্রস্থল এই কিচেনেই হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
ক্ষতিগ্রস্ত তিনতলা ভবনটির নিচতলায় পাশাপাশি তিনটি দোকান। যার একটি অক্ষত থাকলেও গুড়িয়ে গেছে বাকি দুটি। সামনে থেকে দেখে বিধ্বস্ত শর্মা হাউস ও বেঙ্গল মিটের দোকান দুটি আলাদা করা গেলেও পেছনের অংশটি এতোটাই লণ্ডভণ্ড যে, দোকান দুটি আলাদা করার উপায় নেই।
বিস্ফোরণের তীব্রতায় দুটি দোকনের সব দেয়াল ভেঙে এক হয়ে গেছে।
পেছনের অংশে পাওয়া যায় একটি সেপটিক ট্যাংক। বেআইনিভাবে ওই সেপটিক ট্যাংকের ওপরেই দোকানের কিচেন স্থাপন করা হয়েছে।
ঘটনার পরপর ভবন মালিক কিংবা ওই দুই দোকানের কাউকেই না পাওয়ায় তদন্তকারী একটি সংস্থার কয়েকজন কর্মকর্তা ধারণা করছিলেন শর্মা হাউস ও বেঙ্গল মিট নামের দুটি দোকানই সেপটিক ট্যাংকের উপর নির্মিত।
পরে নিশ্চিত হওয়া গেছে, বেঙ্গল মিট নয় বরং শর্মা হাউস নামের রেস্টুরেন্টটির রান্নাঘর নির্মাণ করা হয়েছিল সেপটিক ট্যাংকের উপরে। বেঙ্গল মিটের পেছনে পুরো অংশ জুড়ে ছিল শর্মা হাউসের রান্নাঘর।
মঙ্গলবার দুপুরে দুটি দোকানের কর্তৃপক্ষ ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটির কাছে দোকানের নকশা, ঘটনার বিবরণ ও জবানবন্দি দিয়েছে।
বেঙ্গল মিটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ এফ এম আসিফ নিউজবাংলাকে জানান, তারা তিন বছর আগে ভবন মালিকের কাছ থেকে দোনটি ভাড়া নিয়েছিলেন। তারও আগে স্থাপন করা হয়েছিল শর্মা হাউসের আউটলেটটি। তিনি বলেন, ‘আমাদের আউটলেটের পেছনের অংশে শর্মা হাউসের কিচেন ছিল। শর্মা হাউসের আদল অনেকটা ইংরেজি এল অক্ষরের মতো।’
তিনি দাবি করেন, বেঙ্গল মিটের আউটলেটের ভেতরে বিস্ফোরণ হবার মতো কোনো উপকরণ ছিল না।
তিনি বলেন, ‘এটা ঠিক যে, আমাদের ক্ষতি অনেক বেশি হয়েছে, তবে এতো বড় ব্লাস্ট হবার মতো কিছু আমাদের শপে ছিল না। আউটলেটের ফ্রিজ, জেনারেটর, এসি সবই আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে কোনোটাই নিজে থেকে বিস্ফোরিত হয়নি, সবই অক্ষত আছে।’
বিস্ফোরণের সময় বেঙ্গল মিটের ওই আউটলেটে ইমরান হোসেন ও মো. রাসেল নামে দুজন কর্মচারী কর্মরত ছিলেন। দুজনই দগ্ধ ও দেয়ালচাপা পড়ে গুরুতর আহত হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের শেখ হাসিনা প্লাস্টিক অ্যান্ড বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন।
ঘটনার পর থেকে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থাপনা করতে গিয়ে ঘটনাস্থলে তদন্তকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি বলে জানান এ এফ এম আসিফ।
এদিকে, একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি শর্মা হাউসের কোনো প্রতিনিধির সঙ্গে। শর্মা হাউসের একটি নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হলেও কেউ সাড়া দেননি।
ভবনটির পেছনের দিকে কোন কোন স্থাপনা ছিল তা জানতে এদিন আবারো নিউজবাংলা ভবন মালিক মশিউর রহমান খোকনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে। প্রতিবেদকের ফোন তুলে একজন নারী নিজেকে মশিউর রহমান খোকনের স্ত্রী বলে পরিচয় দেন। খোকনের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন, ‘খোকন সাহেব মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, তিনি বিশ্রাম নিচ্ছেন।’
ভবনটির সেপটিক ট্যাংক ও বেঙ্গল মিটের পেছনে শর্মা হাউসের রান্নাঘর ছিল কিনা তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আপনাদের সাথে কথা বলার সময় নেই।’
এদিকে, বিস্ফোরণের ঘটনায় মঙ্গলবার সকালে রমনা থানায় অবহেলাজনিত কারণে মৃত্যুর অভিযোগে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে জানান, ‘ভবন নির্মাণ ও পুরো ঘটনায় কিছু অনিয়ম আছে, যে কারণে মামলা হয়েছে। বাকিটা আমরা তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব।’
ভবনের পেছনের দিকের স্থাপনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পেছনের অংশ পুরোই ধ্বংসস্তূপে রূপ নিয়েছে। সেখানে ঠিক কী ছিল, তা তদন্তের পরই জানা যাবে।’
শর্মা হাউসের কোনো কর্মচারীর প্রাণহানি হয়েছে কিনা, জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করেও ওই দোকানের মালিকের সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি। এখনও তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে একটি অসমর্থিত সূত্র থেকে আমরা শুনেছি, সেদিন শর্মা হাউসের ভেতরে থাকা এক শিশু ও নারী ও শর্মা হাউসের এক কর্মী মারা গেছেন। শর্মা হাউসের ওই কর্মীর মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়েছে বলে সরকারি হিসাবে তা উল্লেখ নেই। পুলিশ এ বিষয়ে জানার চেষ্টা করছে।’