ফেসবুক-ইউটিউবে বিড়ালের কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচিত-সমালোচিত ‘পুচি ফ্যামিলি’র তাপসী দাশ এবার ১৫ জন বিড়ালপ্রেমীর নাম উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন। যারা মূলত তার বিরুদ্ধে রাজধানী ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন; তার কর্মকাণ্ডের তীব্র সমালোচনা করেছেন।
প্রাণী-সংক্রান্ত তিনটি ফেসবুক গ্রুপ বা পেজকেও মামলায় আসামি করেছেন তিনি। এ ছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় অনেককে আসামি করা হয়েছে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে গত সোমবার করা মামলায়। মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) তদন্ত করে আগস্ট মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
রাজধানীর মিরপুরের পল্লবীর ডিওএইচএসের বাসিন্দা পার্থপ্রতিম চৌধুরীর স্ত্রী তাপসী দাশ ফেসবুকে ‘পুচি ফ্যামিলি’ পেজ ও ইউটিউবে ‘পুচি ফ্যামিলি অরিজিনাল’ চ্যানেলের কর্ণধার।
তার বিরুদ্ধে বিড়াল আটকে রাখা ও বিড়াল নির্যাতনের অভিযোগ তুলে সম্প্রতি রাজধানীর পল্লবী, গুলশান, উত্তরার পাশাপাশি সাভার থানায় বেশ কয়েকটি লিখিত অভিযোগ জমা দেন কয়েকজন বিড়ালপ্রেমী। একই অভিযোগ এনে তাপসীর বিরুদ্ধে লিগ্যাল নোটিশও পাঠান তারা।
এ ছাড়া তার বিড়াল পালন পদ্ধতি, বিড়াল বিক্রি, অপচিকিৎসাসহ বিড়াল নির্যাতনের নানা অভিযোগ তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা করেন অনেকেই। তাদের মধ্যে যারা ‘বেশি প্রতিবাদী ভূমিকায়’ ছিলেন, তাদের সবাইকে মামলায় আসামি করা হয়েছে।
‘পুচি ফ্যামিলি’র তাপসী দাশ। ফাইল ছবি
আসামির তালিকায় রয়েছেন বেসরকারি সংস্থা অ্যানিমেল শেল্টারের (অ্যানিমেল লাভার্স অফ বাংলাদেশ- এএলবি) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান দ্বীপান্বিতা হৃদি ও কর্মী তাজকিয়া দিলরুবা, বাংলাদেশ ক্যাট ফ্যান্সিয়ার্স সোসাইটির প্রেসিডেন্ট সারা বিনতে জামান ও পল্লবী থানায় বিড়াল আটকে রাখার অভিযোগকারী মনিরা আলম ওরফে মনিরা আক্তার।
এই মনিরা আলম নিউজবাংলাকে বলেছেন, তার বিড়াল মাথিনের ওপর নির্যাতন ও তাপসীর ‘কর্মকাণ্ডে’ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তিনি।
তাপসীর বিরুদ্ধে রাজধানী ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন থানায় যারা অভিযোগ করেছেন কিংবা অনলাইনে তীব্র প্রতিবাদ কিংবা সমালোচনা করেছেন, তাদের আসামি করা হয়েছে মামলায়। এই আসামিরা হলেন হিয়া চৌধুরী, সাবরিনা, গৌতম সাহা, আমিনুল ইসলাম সুজন, রৌতিক ইসলাম লিনজয়, দিলরুবা রহমান, ফারজানা লিও, অলি উনি নাহার আশা, ইশরাত উদ্দিন, তাহসিন ফারিহা ইয়াছিন ও দিলরুবা।
যে তিনটি ফেসবুক গ্রুপ বা পেজকে আসামির তালিকায় রাখা হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে ক্যান্ডি হাউস (ফেসবুক গ্রুপ/পেজ), কুত্তাওয়ালা-KUTTAWALA (Dog lovers of BD), ক্যান্ডি লায়ন ওজি লাভার্স (Candy Lion Ozzy Lovers) ফেসবুক গ্রুপ/পেজ।
পুচি ফ্যামিলির তাপসী দাশের বিরুদ্ধে সম্প্রতি বিড়াল নির্যাতনের পাশাপাশি বিড়ালপ্রেমীদের চরিত্র নিয়ে কুৎসা রটনার লিখিত অভিযোগ করা হয় বিভিন্ন থানায়। অভিযোগকারীরা রাজধানীর মিরপুরের ডিওএইচএসে তাপসী দাশের ভাড়া বাসায় অভিযান চালিয়ে সেখানে থাকা বিড়ালগুলোকে তার কবল থেকে বাঁচানোর অনুরোধও করেছেন।
তাপসীর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ হিসেবে নিউজবাংলাকে তারা বলেছিলেন, পুচি ফ্যামিলির ফেসবুক পেজে ফলোয়ার প্রায় ৯ লাখ। ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইবার আছে ১ লাখ ৪০ হাজার। এসব ফলোয়ারকে ভুল তথ্য দিয়ে বিড়ালের প্রতি নিষ্ঠুরতা শেখাচ্ছেন তাপসী দাশ।
হাম্বার মৃত্যুর জন্য তাপসীকে দায়ী করছেন বিড়ালপ্রেমীরা
তাপসী দাশের মামলার প্রতিক্রিয়ায় তারা বলেছেন, এসব অভিযোগ জানিয়ে মামলার জন্য ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন থানায় লিখিত আবেদন করেও কোনো সাড়া পাননি। এখন উল্টো তাদের বিরুদ্ধে ‘হয়রানিমূলক মামলা’ হলো। এই মামলার উদ্দেশ্য হচ্ছে পোষা প্রাণী নির্যাতনের মতো ঘটনাটিকে আড়াল করে প্রকৃত প্রাণিপ্রেমীদের মধ্যে ভয়ভীতি ও আতঙ্ক সৃষ্টি করা।
আসামিরা বলছেন, পুচি ফ্যামিলির পুচি নামের বিড়ালটিও তাপসী দাশের নয়। পুচি ফ্যামিলির বিরুদ্ধে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে বিড়াল বিক্রির অভিযোগও তুলেছেন তারা। তাদের দাবি, পুচি ফ্যামিলিকে ডিওএইচএস কর্তৃপক্ষ বাসা ছাড়ার নোটিশ দিয়েছে। পুচি ফ্যামিলির ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল বন্ধের জন্য ফেসবুক ও ইউটিউব কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন এসব প্রাণিপ্রেমী।
মামলার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে অন্যতম আসামি বেসরকারি সংস্থা এএলবির চেয়ারম্যান দ্বীপান্বিতা হৃদি মঙ্গলবার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পুচি ফ্যামিলির বিরুদ্ধে যারা প্রথম থেকেই কথা বলেছেন, অনেক মানুষই কথা বলেছেন, কিন্তু যারা বেশি প্রতিবাদ করেছেন, তাদের মধ্য থেকে একটি লিস্ট করেছে। এদের মধ্যে ব্যক্তি ও বিভিন্ন অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার গ্রুপ রয়েছে। ১৮ জনের একটি লিস্ট করে মামলার আসামি করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘তাপসী দাশের বিরুদ্ধে বিড়াল নির্যাতন, অন্যের বিড়াল আটকে রাখা, অপচিকিৎসা, বিক্রি কিংবা আর্থিক মুনাফার বিরুদ্ধে যারা প্রতিবাদ করেছেন বা প্রতিকার চেয়ে পুলিশ, বিভিন্ন সংস্থা ও সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছেন, তাদের সবাইকে তার মামলার আসামি করেছেন।
‘অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার নিয়ে কাজ করতে এসে উল্টো অ্যানিমেল অ্যাবিউজার আমাদের হ্যারাজমেন্টের মামলায় ঢুকিয়ে দিল।’
প্রাণীদের নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান দ্বীপান্বিতা বলেন, ‘সে কেস করার আগেই আমরা ১৩ জুন তার নামে অভিযোগ দিয়েছি। সেটা থানাতেই দিয়েছি, আইসিটি ডিপার্টমেন্টেও দিয়েছি। এরপর তাপসীর কোনো রকম রেসপন্স পাই নাই।
‘পুলিশ যতবার ফোন দিয়েছে, ততবারই তিনি ঢাকার বাইরে, বাসার বাইরে বলে জানিয়েছেন। কখনও বাসায় তালা মারা বলে জানিয়েছেন। তার মানে এখানে কোনো ইনভেস্টিগেশন হয় নাই। কমপ্লেইন বলেন, উকিল নোটিশ বলেন, এসবের কোনোটির ক্ষেত্রেই আমরা কার্যকর কোনো রেসপন্স পাই নাই।’
এএলবির চেয়ারম্যান বলেন, ‘এখন মনে হচ্ছে, তারা আসলে এই টাইমটা নিয়েছে আমাদের বিরুদ্ধে উল্টো কেস করার জন্য। আমাদের হ্যারাস করার জন্যই এই কেস করা হয়েছে। কারণ তিনি তার মামলার এজাহারে যা যা বলেছেন, বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাকে অপদস্থ করার কারণে তাদের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। তাদের মানুষজন গালাগাল করছে, এতে তাদের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে।
‘এখন আমার কথা হচ্ছে, সে বারবার বলছে, সে বিড়াল নিয়ে ব্যবসা করছে না। আমরা তাকে কখনোই গালিগালাজ করি নাই। সে চেয়েছিল আমাদের দমাতে, ভীতি তৈরি করতে। আমরা এখনও আইনিভাবে তার বাসার বিড়ালগুলো উদ্ধার করে ভালো কোনো পরিবেশে ফিরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছি।’
তাপসীর করা মামলার এজাহারের একটি অনুলিপি নিউজবাংলা পেয়েছে।
মনিরা আলম বলছেন, তার বিড়াল মাথিনের ওপর নির্যাতন ও তাপসীর ‘কর্মকাণ্ডে’ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তিনি।
এজাহারে তাপসী দাশ বলেছেন, শখের বশে প্রাণীদের প্রতি মায়া তৈরি হওয়ায় তিনি মানুষকে বিনোদন দিতে বিড়ালের কর্মকাণ্ডের ভিডিও অনলাইনে প্রচার করেন। এতে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয় হন। তার সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে আসামিরা থানায় অভিযোগসহ ডিজিটাল মাধ্যমে নানা কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে আর্থিক ক্ষতি করছেন।
তাপসী বলেছেন, তিনি একজন সহজ, সরল, উচ্চশিক্ষিত, ভদ্র-নম্র ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নারী। পক্ষান্তরে আসামিরা ধূর্ত, তথ্য-সন্ত্রাস, পরধনলোভী ও আইনের প্রতি অশ্রদ্ধাশীল। একজন সুশিক্ষিত ব্যক্তি হিসেবে ‘পুচি ফ্যামিলি’ নামে ফেসবুক পেজ ও ‘পুচি ফ্যামিলি অরিজিনাল’ নামে ইউটিউব চ্যানেলের কর্ণধার তিনি।
ব্যাপক জনপ্রিয়তার কারণে প্রায় সাড়ে ৯ লাখ ফলোয়ার সমৃদ্ধ হয়ে অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলটি পরিচালনা করে আসছেন।
তিনি শখের বশে তার পোষা প্রাণীদের যত্নের জন্য ৬০ হাজার টাকার ভাড়া বাসায় থেকে প্রাণীদের যাবতীয় চিকিৎসা, খাদ্য ও প্রয়োজনীয় সব রকমের সেবাযত্ন দীর্ঘদিন ধরে করে আসছেন। এই কাজে তার স্বামী ও তার বাবা তাকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছেন।
মামলায় তাপসী দাশ আরও বলেছেন, শখ ও প্রাণিকুলের প্রতি মায়ার কারণে পোষা প্রাণীর প্রতি ভালোবাসায় উজ্জীবিত হয়ে তার ব্যক্তিগত আনন্দ ও ভালোলাগা তথা সমমনা লোকদের হাসি, আনন্দ ও বিনোদন, শখ, আহলাদ ইত্যাদি প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে ‘পুচি ফ্যামিলি’ নামে ফেসবুক পেজ ও ‘পুচি ফ্যামিলি অরিজিনাল’ নামে ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিও পোস্ট বা শেয়ার করেন।
মানুষের ভালোবাসা ও তার মানবিক আচরণ বা ব্যবহারের জন্য পেজটি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়। ফলে প্রায় সাড়ে নয় লাখ ফলোয়ার হয়।
মামলায় তাপসী দাবি করেছেন, তিনি তার জীবনযাত্রার ও বার্ষিক খরচের টাকা দিয়ে পোষা প্রাণীদের আদর-যত্ন, চিকিৎসাসেবা ও ভরণপোষণ করেন। তিনি বলেছেন, তার সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে উল্লিখিত আসামিসহ অজ্ঞাতপরিচয় অনেক আসামি ও বিভিন্ন পেজ বা গ্রুপ থেকে বিভিন্নভাবে তার মানহানির চেষ্টা করা হয়েছে।
এমনকি আসামিরা তাপসীর ছবির সঙ্গে মিল করে ফেক নিউজ করিয়েছেন। তাপসীকে নিয়ে বাজে বাজে মন্তব্য করেছেন। যেমন: শাকচুন্নি, ডাইনি, রাক্ষসী। তাপসীর স্বামীকে ব্রহ্মদৈত্য, টাকলু বলেছেন। পোষা প্রাণীদের চিকিৎসকদেরও বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন বলে মামলায় অভিযোগ করেছেন তাপসী দাশ।
মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, আসামিদের এহেন কর্মকাণ্ডে তাপসী ও তার স্বামীর স্বাভাবিক জীবন যাপনে অশান্তি ঘটছে। আসামিরা দীর্ঘদিন ধরে পুচি ফ্যামিলি বয়কটের অপপ্রচার চালানোর পাশাপাশি মানহানিকর স্ট্যাটাস, পিকচার পোস্ট, কমেন্টস ইত্যাদি শেয়ার করছেন, যা সুস্পষ্ট অপরাধ। এসব কর্মকাণ্ডের ফলে তার প্রচুর আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
এ জন্য এজাহারে ২০১৮ সালের ডিজিটাল আইনের ২৩/২৪/২৫/২৬/২৭(১)(খ)(গ)(ঘ)/২৯/৩৭/৩৫ ধারায় আসামিরা অপরাধ করেছেন দাবি করে আদালতের কাছে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারিসহ শাস্তির প্রার্থনা করেন তিনি। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত সিআইডিকে তদন্ত করে আগস্ট মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেছে।
মামলার বিষয়ে বক্তব্য জানতে তাপসী দাশ ও তার স্বামী পার্থপ্রতিম চৌধুরীর মোবাইল ফোনে গত চার দিন ফোন করলেও তারা সাড়া দেননি। তাদের ফোন নম্বর ও হোয়াটসঅ্যাপে এ-সংক্রান্ত প্রশ্নসংবলিত খুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো সাড়া পায়নি নিউজবাংলা।
মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. জাকির হোসাইন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পুচি ফ্যামিলির তাপসী দাশের হাতে নির্যাতনের শিকার বিড়ালগুলো উদ্ধার করার জন্য যারা আইনি পদক্ষেপের অংশ হিসেবে বিভিন্ন থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন, লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন, ফেসবুক-ইউটিউবে যারা তার তীব্র সমালোচনা করেছেন, মামলায় তাদের আসামি হয়েছে। এই মামলার উদ্দেশ্য হচ্ছে পোষা প্রাণী নির্যাতনের মতো ঘটনাটিকে আড়াল করে প্রকৃত প্রাণিপ্রেমীদের মধ্যে ভয়ভীতি ও আতঙ্ক সৃষ্টি করা।’
প্রাণিপ্রেমী ও অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার সংস্থার একাধিক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে জানান, পুচি ফ্যামিলির বিরুদ্ধে বিড়াল নির্যাতনের অভিযোগ করে তার বাসা থেকে নির্যাতনের শিকার বিড়ালগুলোকে উদ্ধার করার জন্য বিভিন্ন থানায় অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি।
পুচি ফ্যামিলির পুচি
অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার সংস্থার এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এরই মধ্যে পুচি ফ্যামিলির তাপসী দাশ গত সোমবার আমাদের ১৫ জনের নাম ও তিনটি গ্রুপের নাম উল্লেখ করে আদালতে মামলা করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যারাই তার বিরুদ্ধে বিড়াল নির্যাতনের অভিযোগ করে লেখালেখি করেছেন, তাদের নামে এই মামলা করেছেন। মামলার তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে সিআইডিকে।’
তবে সিআইডির জনসংযোগ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আজাদ রহমান মঙ্গলবার নিউজবাংলাকে জানান, মামলার নথি এখনও তাদের কাছে পৌঁছায়নি। পৌঁছালেই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রাণিপ্রেমীরা জানান, বিড়াল নির্যাতনের অভিযোগ মিরপুর ডিওএইচএস পরিষদকেও জানানো হয়। সেই বিষয়ে কোনো সুরাহা হয়নি। এখন যার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হলো, উল্টো তিনিই অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করায় আতঙ্কে রয়েছেন বিড়ালপ্রেমীরা।
তাদের জিডির বিষয়ে জানতে চাইলে পল্লবী থানার এসআই শরিফুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওনারা যে ধরনের অভিযোগ করেছেন, সে বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে কিছু করার নেই। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও আদালতের মাধ্যমে প্রতিকার পেতে পারেন তারা।’
মাথিনের লেজ ধরে টানা হচ্ছে। বিষয়টিকে নির্যাতন হিসেবে বলছেন মনিরা আলম
পুচি ফ্যামিলিকে ‘বাসা ছাড়ার নোটিশ’
অ্যানিমেল কেয়ার সোসাইটি অফ বাংলাদেশের পরিচালক ও বাংলাদেশ ক্যাট ফ্যান্সিয়ার্স সোসাইটির (বিসিএফএস) চেয়ারম্যান সারা বিনতে জামানের দাবি, মিরপুর ডিওএইচএসের ভাড়া বাসার মধ্যে নোংরা পরিবেশে বিড়াল পালন, নির্যাতন ও নানা ধরনের সমালোচনা তৈরি হওয়ায় পুচি ফ্যামিলিকে বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
তিনি বলেন, ‘ডিওএইচএস কর্তৃপক্ষ আমাদের জানিয়েছেন, তাকে বাসা ছেড়ে দেয়ার নোটিশ দেয়া হয়েছে।’
প্রাণীদের নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা অ্যানিমেল শেল্টারের কর্মীরা মঙ্গলবার জানিয়েছেন, বাড়ি ছাড়ার নোটিশ পাওয়ার পর থেকেই পুচি ফ্যামিলির তাপসী দাশ ও তার পরিবারের সদস্যরা আবারও আত্মগোপনে চলে গেছেন।
তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে বিড়াল বিক্রির অভিযোগ
একাধিক বিড়ালপ্রেমী নিউজবাংলাকে জানান, পুচি ফ্যামিলি বিড়াল পালনের কোনো সঠিক নিয়মকানুন মানে না। নিষ্ঠুরতার দৃশ্য ধারণ করে ইউটিউবে আপলোড করেন ভিউ ও সাবস্ক্রাইবার বাড়ানোর জন্য। এর ফলে বিভিন্ন বিড়ালপ্রেমী তার মাধ্যমে বিড়াল কিনে থাকেন। পুচি ফ্যামিলির তাপসী দাশ ও পার্থ চৌধুরী এ ক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে বিড়াল বিক্রি করে থাকেন।
বিসিএফএসের চেয়ারম্যান সারা বিনতে জামান নিউজবাংলাকে বলেন, তাপসীর কাছে যেসব বিড়াল রয়েছে, তার সবই অন্যের কাছ থেকে অ্যাডাপশনে নেয়া। মৌখিক চুক্তির ভিত্তিতে অ্যাডাপশনে নিয়ে তিনি বিড়ালগুলোর ওপর নির্যাতন করছেন। বিড়াল পালনে অনিয়ম ও নির্যাতনের দৃশ্য দেখে বিড়ালগুলোর প্রকৃত মালিকরা তাদের বিড়াল ফেরত চেয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করার পর বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকি দিয়েছেন তাপসী দাশ ও তার অনুসারীরা। এ কারণে অনেকেই আতঙ্কে রয়েছেন।
‘পুচি ফ্যামিলির পুচিও তাপসী দাশের নয়’
সারা বিনতে জামান আরও বলেন, তাপসী দাশের কাছে পুচি, হাম্বা ও মাথিন নামে বেশ কিছু বিদেশি বিড়াল রয়েছে, যেগুলোর একটিরও প্রকৃত মালিক নন তিনি। এই বিড়ালগুলো যখন তার কাছে মালিকরা দিয়েছিলেন, তখন শর্ত ছিল তিনি ব্রিডিং মেটিং করাতে পারবেন না, কিন্তু সেই নিয়ম মানেননি। হাম্বাকে তিনি মেরে ফেলেছেন। মাথিনকে এখনও নির্যাতন করে থাকেন। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলার প্রক্রিয়া চলছে।
জান্নাতি নামে এক নারীর দাবি, পুচি ফ্যামিলির কাছে থাকা ফিউনা বিড়ালের মালিক তিনি। তাপসীর কাছে ফিউনাকে অ্যাডাপশনে দেন প্রেগন্যান্ট অবস্থায়।
জান্নাতি বলছেন, পরবর্তীতে তাপসীর বাসায় ফিউনার একটি বাচ্চা হয়। যেটি পুচি নামে পরিচিত। কাজেই এই পুচির মালিক তিনি। তবে তাপসী পুচিকে নিজের বাচ্চা বলে দাবি করে আসছেন।
মাথিনকে নির্যাতন ও তাপসীর হুমকিতে অসুস্থ মনিরা
নিজের বিড়াল উদ্ধার করার জন্য পল্লবী থানায় লিখিত অভিযোগ করেছিলেন রাজধানীর শাহজাহানপুরে গৃহিণী মনিরা আলম। মনিরার সেই বিড়ালের নাম মাথিন। দেশি প্রজাতির সেই বিড়াল এখনও উদ্ধার হয়নি।
অভিযোগ উঠেছে, তাপসী দাশ মাথিনের মালিক মনিরা আলমকে নিয়ে ফেসবুকে-ইউটিউবে বাজে বাজে মন্তব্য করেছেন। লাইভে এসে তাকে নিয়ে গালিগালাজও করেছেন।
মনিরা আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখানেই শেষ নয়, জিডির পর তাপসীর লোকজন আমার স্বামীকে হুমকি দিয়েছেন। এসব ঘটনায় আমরা পারিবারিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি। এসব ঘটনার প্রতিকার চেয়ে বাধ্য হয়ে শাহজাহানপুর থানায় আরেকটি সাধারণ ডায়েরি করেছি।’
তিনি বলেন, ‘তাপসীর সঙ্গে আমার ফেসবুকে পরিচয়। আমি অসুস্থ হয়ে পড়লে তার কাছে আমার মাথিনকে দত্তক দিই। পরে যখন দেখলাম সে বিড়ালকে নির্যাতন করে ভিডিও বানাচ্ছে, তখনই তার কাছে আমার বিড়াল চাইলে গালিগালাজ শুরু করেন। এমন ভাষায় গালমন্দ করেছেন, যেগুলো শুনে আমার স্বামী ছেলেসহ আমরা রীতিমতো হতভম্ব হয়ে গেছি। এরপর থেকেই আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি।’
মনিরা আরও বলেন, ‘মাথিনকে মৌখিক শর্তে তাপসীর কাছে রাখতে দিয়েছিলাম। নির্যাতন করার পর মাথিনকে যখন ফেরত চাইলাম, তখন তাপসীসহ তার ফ্যান ফলোয়াররাও আমাকে ফেসবুকে নোংরা গালিগালাজ করেন। তিনি লাইভে এসে আমাকে যে গালি দেন, তার ভিডিও আছে আমার কাছে। মাথিনকে দেয়ার আগে থেকে তার সঙ্গে কথাবার্তার প্রমাণও আছে আমার কাছে।
‘এসব ঘটনায় আমাদের আমেরিকাপ্রবাসী ছেলে আপসেড হয়ে পড়েছে। সন্দেহ হচ্ছে, আমাদের সঙ্গে শত্রুতা করে মাথিনের ওপর নির্যাতন আরও বাড়িয়েছে পুচি ফ্যামিলি।’
ফেসবুক পেজ, ইউটিউব চ্যানেল বন্ধের আবেদন
বিড়াল নির্যাতনের (অ্যানিমেল অ্যাবিউজ) অভিযোগ এনে পুচি ফ্যামিলির ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল বন্ধের জন্য ফেসবুক ও ইউটিউব কর্তৃপক্ষের কাছে ভার্চুয়াল পিটিশন করেছে বেসরকারি সংস্থা এএলবি। এই আবেদনের পক্ষে সমর্থন আদায়ে ফেসবুক-ইউটিউবে কাজ করছেন প্রাণিপ্রেমীরা।