বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মগবাজারের মতো দুর্ঘটনা আরও ঘটতে পারে

  •    
  • ২৯ জুন, ২০২১ ১৯:৪১

তিতাসের গ্যাসের পাইপলাইনে ছিদ্র, ত্রুটিপূর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার বা সেপটিক ট্যাংকের গ্যাস-মগবাজারের বিস্ফোরণের উৎস যেটাই হোক না কেন, আশঙ্কা করা হচ্ছে, এরকম দুর্ঘটনা আরও ঘটতে পারে। বিভিন্ন সেবা সংস্থা এসব ঘটনায় দায়ভার চাপায় অপর সংস্থার ওপর।  

মগবাজারে বিস্ফোরণের ঘটনা আবারও সামনে এনেছে জমে থাকা গ্যাস কিংবা মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার কিংবা গ্যাসের পাইপলাইনের ঝুঁকির বিষয়টি। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা জেগেছে নগরবাসীর মনে।

মগবাজার অয়্যারলেস এলাকার আড়ংয়ের শোরুম ও রাশমনো হাসপাতালের উল্টো দিকের মূল সড়ক লাগোয়া ভবনে রোববার সন্ধ্যার বিস্ফোরণের উৎস এখনও জানা যায়নি। এ নিয়ে ফায়ার সার্ভিস আর পুলিশের আলাদা তদন্ত কমিটি কাজ করছে। বিস্ফোরক পরিদপ্তরের একটি দলও অনুসন্ধান করছে।

মগবাজারের ঘটনা মনে করিয়ে দিচ্ছে ২০২০ সালের ৪ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জের পশ্চিম তল্লা এলাকায় একটি মসজিদে বিস্ফোরণ এবং ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি পুরান ঢাকার লাগবাগ এলাকায় চুড়িহাট্টায় বিস্ফোরণের ঘটনা। নারায়ণগঞ্জে মসজিদের ঘটনা তিতাস গ্যাসের পাইপলাইনের ছিদ্রের কারণে ঘটেছিল বলে তদন্তে জানা যায়। এ ঘটনায় ৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

চুড়িহাট্টার ঘটনায় ৭১ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এটির কারণ এখনও উদঘাটন না হলেও প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়েছিল, একটি গলিতে যানজটে আটকে থাকা পিকআপে গ্যাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরণে পার্শ্ববর্তী ভবনে জমা করে রাখা অতিদাহ্য পদার্থে আগুন লেগে যায়।

এছাড়া দেশজুড়ে রান্নার চুলায় ব্যবহৃত গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনা প্রায়ই ঘটে।

কেন বারবার ঘটছে এমন দুর্ঘটনা?

রাজধানীতে গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান তিতাসের মেয়াদ উত্তীর্ণ পাইপলাইনে বিস্ফোরণের ঝুঁকি দেখছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। তারা বলছে, পুরোনো পাইপলাইনগুলোয় লিকেজ হয়ে অনেক সময় ভূগর্ভে পকেটে গ্যাস জমে যায়। গ্যাসের চাপে বড় ধরনের বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। এছাড়া স্যুয়ারেজের জমে থাকা গ্যাস থেকেও হতে পারে এমন বিস্ফোরণ।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের উপপরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) দেবাশীষ বর্ধন বলেন, ‘স্যুয়ারেজে জমে থাকা গ্যাস অতি দাহ্য। মগবাজারের দুর্ঘটনার কেন্দ্রে ছিল ফাস্ট ফুডের দোকান শর্মা হাউসের রান্নাঘর। অনেক সিলিন্ডার দেখা গেছে। এ ছাড়া দাহ্য বস্তু ছিল। ঘটনাস্থলে মিথেন গ্যাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।’

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘মঙ্গলবার সেখানে হাইড্রোকার্বনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এখানে কয়েক ধরনের গ্যাস মিলিত হয়েছে। এই সম্মিলিত গ্যাসের বিস্ফোরণ হয়ে থাকতে পারে। কেউ হয়তো স্পার্ক বা আগুন জালিয়েছিল, তখন বিস্ফোরণ ঘটে থাকতে পারে।’

কিছুদিন আগে রাজধানীর আদাবরেও জমে থাকা গ্যাস রাস্তা ফেটে বেরিয়ে পড়েছিল।

দেবাশীষ বর্ধন জানান, এমন পকেটে আটকে পড়া গ্যাসের উৎস খুঁজে বের করার চেষ্টাটা তারাও করছেন।

তিনি বলেন, ‘ওই এলাকায় স্যুয়ারেজের লাইন মেরামত চলছে। স্যুয়ারেজের কোনো লাইন থেকে ঘটল কি না সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়া তারা কোনো গ্যাস মজুদ করেছিল কি না, সেটা অনুসন্ধান করা হচ্ছে।’

দাহ্য গ্যাস কীভাবে জমতে পারে, এমন প্রশ্নের উত্তরে দেবাশীষ বর্ধন বলেন, ‘আগেকার দিনে আমাদের গ্রামে পানির অভাব দূর করার জন্য কুয়া ছিল। এই ধরনের পরিত্যক্ত কুয়ায় বিষাক্ত গ্যাস জমে। শহরে আন্ডারগ্রাউন্ড রিজার্ভার যখন বানানো হয়, এই রিজার্ভারের ঢাকনা অনেকদিন ধরে বন্ধ থাকার কারণে মনোক্সাইড জাতীয় গ্যাস জমে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘সুয়ারেজে জমা হওয়া মিথেন জাতীয় গ্যাসের গন্ধ সাধারণত ঝাঁজালো, পঁচা ও কেরোসিনের মতো। এক কথায় দুর্গন্ধ হবে।’

কিন্তু আশঙ্কার কথা হচ্ছে, এমন গ্যাসের অস্তিত্ব আগাম টের পাওয়া কঠিন। এই জমে থাকা গ্যাসের অস্তিত্ব বুঝতে এক ধরনের সেফটি কিট তৈরি করার কথা জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

দেবাশীষ বর্ধন বলেন, ‘গ্যাসের গন্ধ থেকেই বুঝতে হবে এখানে গ্যাস জমে আছে। এ জন্য আমরা একটা সেফটি কিট তৈরি করব বলে পরিকল্পনা করছি।’

জমে থাকা এই গ্যাস নিঃসরণের উপায় জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘দুই দিকে ছিদ্র করে ফ্যান চালিয়ে এই গ্যাস বের করা যায়। তবে গ্যাস বের হওয়ার রাস্তা থাকতে হবে। তাহলে বাতাসে মিশে যাবে।’

বাসাবাড়িতে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ঘরের ভেতরে গ্যাস জমে থাকলে দরজা-জানালা খুলে রাখতে হবে। কিছুক্ষণ সময় নিতে তারপর অন্যান্য কাজ করতে হবে।’

মগবাজারে কীভাবে বিস্ফোরণ ঘটে থাকতে পারে জানতে চাইলে দেবাশীষ বর্ধন বলেন, ‘যদি আন্ডারগ্রাউন্ডে কোনো পাইপ লিকেজ হয়, তবে কোনো না কোনো সংস্থাকে দায় নিতে হবে। ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ড দিয়ে বিভিন্ন সংস্থার পাইপ যায়। স্যুয়ারেজেও গ্যাসের অস্তিত্ব আছে। সেখান থেকেও অনেক সময় বিস্ফোরণ ঘটে।’

তিতাস গ্যাসের জরুরি গ্যাস নিয়ন্ত্রণ শাখার (দক্ষিণ) ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী শবিউল আওয়াল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের এখানে একটা ইমার্জেন্সি বিভাগ আছে। কোনো জায়গায় গ্যাসের লাইন লিকেজ হলে বা আগুন লাগলে সঙ্গে সঙ্গে আমরা লোক অ্যাসাইন করি।’

তিতাসের পাইপলাইনের দুর্বলতা স্বীকার করলেও ওই কর্মকর্তা দায় চাপান নাগরিক সেবা প্রদানকারী ওয়াসা, বিদ্যুৎ ও সিটি করপোরেশনকে।

তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনা তো দুর্ঘটনাই। এটা তো আর ইচ্ছা করে ঘটে না। আপনি খোঁজ নিয়ে দেখেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে আমাদের তিতাস থেকে যে লাইন এসেছে, সেখানে কয়টা দুর্ঘটনা ঘটেছে? কোনো দুর্ঘটনা ঘটে নাই। কারণ ওই লাইনগুলোতে কোনো জুলুম হচ্ছে না।’

ঢাকা শহরে এমন ঘটনা ঘটার ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘একবার ধরেন ভেকু দিয়ে মাটি কাটতেছে ওয়াসা, একবার লাইন কাটতেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। সিটি করপোরেশন ড্রেন বানাচ্ছে। বিভিন্ন জুলুম হচ্ছে আমাদের পাইপের ওপরে। তারা তাদের কাজ করার সময় আমাদের পাইপগুলোর যত্ন নিচ্ছে না। ইচ্ছা মতো কাটতেছে। এই জুলুমের কারণে পাইপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দুর্ঘটনা ঘটছে।’

এ বিষয়ে জানতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসকে কয়েকবার ফোন ও এসএমএস করা হলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি। পরে মেয়রের একান্ত সচিব (উপসচিব) মারুফুর রশিদ খানকে ফোন করলে, সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। সেই নম্বরেও কয়েকবার ফোন করা হলে সাড়া পাওয়া যায়নি।

এ বিভাগের আরো খবর