ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক করোনা আক্রান্ত হয়ে রোগী দেখার ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পার হলেও ওই চিকিৎসক কিংবা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন।
হাসপাতালের বিষয়ে সোমবার রাত আটটা পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা না নেয়ার বিষয়ে জেলা প্রশাসক হায়াত উদ দৌলা খান জানান, চিকিৎসক ও হাসপাতালের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সিভিল সার্জনকে বলা হয়েছে।
আর সিভিল সার্জন মোহাম্মদ একরামুল্লাহ বলছেন, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে আমরা চিঠি পাঠিয়েছি। অন্য কাজে ব্যস্ত থাকায় হাসপাতালে গিয়ে বন্ধ করা সম্ভব হয়নি।’
তবে হাসপাতালটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু কাউসার বলেন, হাসপাতাল বন্ধ রাখার বিষয়ে কোনো চিঠি পাননি তারা।
পৌর এলাকার দি হলি ল্যাব ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালে রোববার রোগী দেখছিলেন করোনা আক্রান্ত চিকিৎসক শ্যামল রঞ্জন দেবনাথ। এদিন ৩০ জনের বেশি রোগী তিনি দেখেন। বিকেলে চিকিৎসকের করোনা আক্রান্তের খবর ছড়িয়ে পড়লে রোগী দেখা বন্ধ করে দেন চিকিৎসক শ্যামল রঞ্জন দেবনাথ।
শ্যামল রঞ্জন দেবনাথ হবিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্ট। পাশাপাশি তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার কুমারশীল মোড়ের হলি ল্যাব হাসপাতালেও বসেন।
গত ১৪ জুন শ্যামলের স্ত্রীর করোনা শনাক্ত হয়। এরপর শ্যামল দুবার করোনা অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তার ফল নেগেটিভ আসে। তবে নমুনা ঢাকায় পাঠালে গত শনিবার আসা রিপোর্টে তিনি করোনা পজিটিভ হন।
এ বিষয়ে ডা. শ্যামল বলেন, ‘রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার সময় আমার পজিটিভ হওয়ার বিষয়টি জেনেছি। আমি তো রোগীদের আগেই সময় দিয়ে রেখেছিলাম। তবে পজিটিভ হওয়ার চেম্বার বন্ধ করে দিয়েছি।’
খেলাঘর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নিহার রঞ্জন সরকার এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেন, একটি জঘন্যতম কাজ করেছেন চিকিৎসক শ্যামল রঞ্জন দেবনাথ। শ্যামল রঞ্জন দেবনাথ যে করোনায় আক্রান্ত ছিলেন, সেটি যদি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জেনে থাকে, তাহলে সেটি তদন্তের ভিত্তিতে বের করে হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিল করা হোক।
তিনি আরও বলেন, প্রশাসনের উচিত যত রোগীকে তিনি চিকিৎসা দিয়েছেন, সবার ঠিকানা বের করে তাদের প্রাতিষ্ঠানিক অথবা হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো। সেই সঙ্গে হাসপাতালের সব স্টাফ ও চিকিৎসকের করোনা শনাক্তের পরীক্ষা কারানো জরুরি।
হাসপাতালটি জরুরি ভিত্তিতে লকডাউন করে দেয়ার কথা জানিয়ে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহ্বায়ক আব্দুন নুর বলেন, ‘গতকালই হাসপাতালে কার্যক্রম বন্ধ রেখে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার ছিল। কিন্তু প্রশাসন এখনও কেন কোনো নজরদারি করেছে না, তা আমার বোধগম্য নয়।’