বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

তালাক পেলেন সেই চেয়ারম্যান, চার বিয়ে করার চ্যালেঞ্জ

  •    
  • ২৭ জুন, ২০২১ ১৬:৪৪

‘অনুভূতি অনেক ভালো। আবার বিয়ে করব। আপনার কাছে কোনো সুন্দরী মাইয়া থাকলে নিয়ে আইসেন। একটা না, এক সাথে চাইরডা বিয়ে করমু। যদি না পারি তহন কইয়েন।’

সালিস করতে এসে অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোরীকে বিয়ে করার ঘটনা ফাঁস হওয়ার পরপর তালাকনামা পেলেন পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কনকদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহীন হাওলাদার।

আর তিনি চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন আবার বিয়ে করবেন। এবার আর একজনকে নয়, চারজনকে বিয়ে করবেন।

সেই কিশোরীর প্রেম ছিল স্থানীয় একটি মসজিদের ইমামের সঙ্গে। তারা দুজন পালিয়ে যাওয়ার পর তাদের নিয়ে সালিসে বসেছিলেন গত ২১ জুন দ্বিতীয়বারের মতো ভোটে জেতা আওয়ামী লীগ নেতা।

ঘটনা এটি হলেও চেয়ারম্যানের দাবি, তার প্রেম ছিল সেই কিশোরীর সঙ্গে। তার ভোটের ব্যস্ততার সুযোগে ইমাম সেই মেয়েটির সঙ্গে বাড়ান ঘনিষ্ঠতা। আর এই সুযোগে পালিয়ে যান। সালিসে তিনি সব খুলে বলার পর মেয়েটির বাবা বিয়ে দেন তার সঙ্গে।

মেয়েটির বিয়ের বয়স হয়নি। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে সনদও দেয়া হয় বিয়ে পড়ানোর আগে।

নিউজবাংলা ২৬ জুন ঘটনাটি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে। আর সেই রাতেই তালাকনামায় সই করেন দুজন।

শাহীন হাওলাদার আগে থেকেই বিবাহিত। তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক। ছেলের বিয়ে দিয়েছেন। আর যাকে দ্বিতীয়বার বিয়ে করেছেন, সেই মেয়ে ও তার নিজের মেয়ে সমবয়সী।

এই বিয়ের আগে প্রথম স্ত্রীর অনুমতিও নেননি চেয়ারম্যান শাহীন। আর রাগে তিনি পটুয়াখালীতে বাবার বাড়ি চলে গেছেন।

তালাকনামা কীভাবে

কিশোরীটি পালিয়ে বিয়ে করেছিলেন স্থানীয় মসজিদের ইমামকে। আর তার কাছে ফিরে যেতে শাহীন হাওলাদারকে তালাক দিয়েছেন।

এরপর চেয়ারম্যান শাহীন মেয়েটিকে তার বাবা-মায়ের হাতে তুলে দেন বলে নিশ্চিত করেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত একাধিক ব্যক্তি, এমনকি সেই কিশোরী নিজেও।

তালাক দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কাজি আবু সাদেক হোসেনও। তিনি জানান, চেয়ারম্যানের সঙ্গে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েটির বিষয়ের তথ্য গণমাধ্যমে এলে স্থানীয় প্রশাসন ও চেয়ারম্যানের পরিবারের পক্ষ থেকেও চাপ আসে। আর চেয়ারম্যান তখন মেয়েটির সঙ্গে কথা বলেন। শনিবার রাত ৯টার দিকে মেয়েটি ও চেয়ারম্যান শাহীন তালাকনামায় সই করেন।

এরপর মেয়েটিকে নিয়ে যান তার পরিবারের লোকজন।

কাজি বলেন, শুক্রবার বাদ জুমা চেয়ারম্যান শাহীন হাওলাদারের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পর থেকেই মেয়েটি উদাসীন ছিল। সে বারবার তার প্রথম স্বামীর কাছে যেতে চেয়েছিল।

‘মেয়েটি এমনও বলে, আমাকে রমজানের কাছে পাঠিয়ে দেন। না হলে আমি আত্মহত্যা করব’- বলেন তালাকনামায় সই নেয়া কাজি সাদেক হোসেন।

মেয়েটি যা বলল

চেয়ারম্যানকে তালাক দিয়ে এসে সেই কিশোরী মোবাইল ফোনে নিউজবাংলাকে জানায়, সে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় তার নানাবাড়ির সামনে চুনাইরপুর বায়তুল মামুন জামে মসজিদে ইমামতি করতেন রমজান আলী। তার কাছে কোরআন শরিফ পড়ত সে। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক হয়। তিন বছর ধরে চলে এই প্রেম।

ওই মসজিদেই রমজানের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তবে বয়স কম হওয়ায় কাবিন হয়নি।

পরে বিষয়টি জানাজানি হলে কয়েক মাস যোগাযোগ বন্ধ ছিল। তবে গত ১৮ মে তার বাবা-মা তার দাদির ফুফাতো বোনের ছেলের কাছে বিয়ে দেন তাকে।

বিয়ের পর নুরাইনপুর বন্দরে বসে তাদের মাত্র এক ঘণ্টার জন্য দেখা হয়েছিল। গত শুক্রবার তাকে স্বামীর বাড়ি তুলে দেয়ার কথা ছিল।

মেয়েটি এর ফাঁকে রমজানের সঙ্গে যোগাযোগ করে। আর গত ২৪ জুন তারা ঘর ছাড়ে।আরও পড়ুন: ভোটে জিতে চেয়ারম্যানের বাল্যবিবাহ, ইমাম প্রেমিকের বিষপান

বাইকে করে দুজন চলে যায় কনকদিয়া ইউনিয়নের কুম্বখারী রমজানের মামা শাহ আলমের বাড়িতে।

পরে মেয়েটির বাবা বিষয়টি চেয়ারম্যান শাহীন হাওলাদারকে জানান। গত শুক্রবার তিনি সালিস ডাকেন। বলেন, এর একটি ফয়সালা করে দেবেন।

মেয়েটি জানায়, তারা শাহীন হাওলাদারের বাড়ি গেলে চেয়ারম্যান তাকে অন্য একটি কক্ষে ডেকে নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেন।

চেয়ারম্যান তাকে বলেন, ‘ওই ছেলের তো (রমজানের) টাকাপয়সা নাই। তুমি তার ঘরে গিয়ে সুখী হতে পারবা না। বরং আমাকে বিয়ে করলে সুখী হবা।’

মেয়েটি তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। সে মনে করেছিল ‘বুড়ো দাদু’ (চেয়ারম্যান) তার সঙ্গে দুষ্টুমি করছেন। পরে তিনি কক্ষ থেকে বের হয়ে বলেন, রমজানকে বিয়ে করতে হলে তো আগের স্বামীকে তালাক দিতে হবে। এরপর কাজি ডেকে এনে তালাক দেয়া হয়।

এরপর চেয়ারম্যান শাহীন হাওলাদার তাকে প্রতারণা করে বিয়ে করেন বলে মেয়েটি অভিযোগ করেছে।

মেয়েটির বাবা যা বলছেন

বয়সে প্রায় চার গুণ একজনের সঙ্গে মেয়েকে বিয়ে দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়েটির বাবা বলেন, বিয়ের সময় রমজানের সঙ্গে সম্পর্ক গোপন রেখেছিল তার মেয়ে। বিয়ের পরে বিষয়টি জানতে পারেন স্বামী। এ নিয়ে তাদের পরিবারের সঙ্গে মনোমালিন্য চলছিল।

রমজানের কাছে মেয়েটি

চেয়ারম্যানকে তালাক দিয়ে মেয়েটি রাতেই রমজানের মামাতো ভাই ইমরান হোসেন পলাশের বাড়িতে যায়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইমামের ভাই শাকিল।

তিনি জানান, চেয়ারম্যান বারবার তাদের হুমকি দিচ্ছেন।

একই কথা বলে মেয়েটিও। সে বলে, ‘চেয়ারম্যানের লোকরা মোগো হাত-পা ভাইঙা দিবে কইতাছে। কইতাছে এইহান দিয়া কোনোহানে যাইতে পারবি না।’

‘তালাক হইছে, খুশি হইছেন?’

চেয়ারম্যান শাহীন হাওলাদারের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘হয়, তালাক হইছে। খুশি হইছেন আপনারা?’

মেয়েটিকে অশালীন গালি দিয়ে তিনি বলেন, ‘তার আগের স্বামী (গালি দিয়ে অন্য শব্দ) রয়েছে।’

বয়স লুকিয়ে বিয়ের দায় মেয়েটির ওপরে দেন শাহীন হাওলাদার। বলেন, ‘জন্মতারিখ ভুল করলে হেডা ওই (গালি দিয়ে) করছে আমি তো করি নাই। আমার কাছে যে জন্মসনদ আছে তাতে বয়স ১৮ হয়েছে। ভুল করলে ওইডায় করছে আমি তো করি নাই। আপনারা আমারডা মোডা দেখছেন হেইজন্য যা ইচ্ছা তাই লিখে যাচ্ছেন, কলিজায় জোর থাকলে ওর বিরুদ্ধে ল্যাহেন। ওর বয়স কম হওয়া সত্ত্বেও ও আগে এতগুলো বিয়ে করল ক্যামনে? হেইয়া ল্যাহেন।’

টানা কয়েক মিনিট এভাবে বলে চেয়ারম্যান জানতে চান ‘আর কিছু জানতে চান?’

তালাক পাওয়ার পর এখন কেমন লাগছে- এমন প্রশ্নে ক্ষিপ্ত হয়ে আবার বললেন, ‘অনুভূতি অনেক ভালো। আবার বিয়ে করব। আপনার কাছে কোনো সুন্দরী মাইয়া থাকলে নিয়ে আইসেন। একটা না, এক সাথে চাইরডা বিয়ে করমু। যদি না পারি তহন কইয়েন।‘

এই বলেই ফোন কেটে দিলেন চেয়ারম্যান।

তথ্যে গরমিল

শুক্রবার বিয়ের কাবিননামায় কনের বয়স উল্লেখ করা হয় ১১ এপ্রিল ২০০৩ সাল। অর্থাৎ ১৮ বছর ২ মাস ১৫ দিন।

মেয়েটি কনকদিয়া বালিকা বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। সেই প্রতিষ্ঠানে জন্মসনদে বয়স উল্লেখ করা হয়েছে ১১ এপ্রিল ২০০৭ সাল। সে অনুযায়ী তার বয়স ১৪ বছর ২ মাস ১৫ দিন।

এ বিভাগের আরো খবর