আট দিন নিখোঁজ হয়ে তুমুল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসা ধর্মীয় বক্তা আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনানের বন্ধু সিয়াম ইবনে শরীফকে চাকরিচ্যুত করা হয়নি বলে জানিয়েছে তার নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান।
সিয়ামকে চাকরি থেকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে তুমুল সমালোচনা তৈরি হলে নতুন ব্যাখ্যা দেয় মোবাইল ফোন বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান অপো।
এখন তারা বলছে, সিয়ামকে হোম অফিস করতে বলা হয়েছে। অফিসে আসতে নিষেধ করা হয়েছে তার নিরাপত্তার কথা ভেবে।
সিয়াম রংপুর মুন্সিপাড়ায় অফিসের কো-অর্ডিনেটর (এইচআর) পদে চাকরি করতেন। রোববার তাকে সেই পদ থেকে অব্যাহতির কথা জানানো হয় বলে তিনি গণমাধ্যমকে জানান।
ত্ব-হা আত্মগোপনে যাওয়ায় সিয়ামের চাকরি কেন যাবে- এই নিয়ে প্রশ্নের মুখে সোমবারই বক্তব্য পাল্টে যায় তাকে অব্যাহতির কথা জানানো অপো কর্মকর্তার।
- আরও পড়ুন: ত্ব-হার কাছে এখনই যাবেন না সাবিকুন্নাহার
সিয়ামকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়ার বিষয়টি জানিয়েছিলেন অপোর রংপুর আঞ্চলিক প্রধান সাইফুল ইসলাম। তিনি গণমাধ্যমের কাছেও একই বক্তব্য দেন।
বক্তব্য পাল্টালেন অপো কর্মকর্তা
তবে পরদিন তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘না, ওর চাকরি যায়নি। এটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি, এখানে জয়েন করাও যেমন সহজ না, তেমনি চাকরি থেকে বাদ দেয়াও সহজ না। বাদ দিলে তো তার একটা টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন আছে।
‘কারও যদি কোনো পারসোনাল ইস্যুতে প্রাতিষ্ঠানিক কোনো সমস্যা ইনস্ট্যান্ট দেখা দেয়, সেই ক্ষেত্রে তার সেইফটি এবং আমাদের সেইফটির জন্য আমরা তাকে আপাতত বলতে পারি, আপাতত তুমি হোম অফিস করো বা আপাতত কন্টিনিউ করার দরকার নাই, প্রবলেম সলভ করো, তারপর গিয়ে অফিসে যোগাযোগ করো।’
সিয়াম শরীফ কাজ করতেন মোবাইল ফোন বিপণনকারী কোম্পানি অপোতে
কিন্তু সিয়াম জানিয়েছেন, তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। আপনিও আগের দিন তাই বলেছেন- এমন প্রশ্নে সাইফুল বলেন, ‘এটা আমার রিজিওনাল অফিস, আমার হেডকোয়ার্টার আছে। আমি বলেছি, তুমি আপাতত কন্টিনিউ করো না, তুমি সেইফ জোনে থাকো, আমরা আমি হাই অথরিটির সঙ্গে কথা বলে তারপর তোমাকে জানাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন ‘তাকে (সিয়াম) চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে মানে তাকে অফিশিয়ালি ডাকা হবে, জানানো হবে। তাই না? এটা তো একটা প্রসিডিউর আছে।’
‘সব সিয়ামের নিরাপত্তার জন্য’
নিজের আগের দিনের কথা আবার স্মরণ করালে সাইফুল বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় নিউজ হয়েছে, আমার খুব খারাপ লাগছে।… চাকরি নাই, এটা টোটালি একটা ফালতু কথা। তার সেইফটির জন্য আপাতত তাকে বারণ করা হয়েছে।
‘একটা মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে তার যাতে কোনো অসুবিধা না হয় সে কারণে হোম অফিস করতে বলা হয়েছে।’
‘সে যদি দোষী না হয়, তাহলে তাকে কেন টার্মিনেট করা হবে, তার চাকরি কেন যাবে?’- পাল্টা প্রশ্নও করেন সাইফুল।’
দাবি, এসএমএস নিয়ে ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছে
তাহলে সিয়ামকে কেন হোম অফিস করতে বলা আর অফিসের বিভিন্ন গ্রুপ থেকে কেন বাদ দেয়া হয়েছে- এমন প্রশ্নে অপো কর্মকর্তা সরাসরি জবাব দেননি। বলেন, ‘সে আমাদের এখানে তিন মাস চাকরি করছে। সে খুবই ভালো ছেলে । আমি তাকে রিকোয়েস্ট করেছি। আমি তার রিক্রুটিং বস..। সে খুবই বিশ্বস্ত। বিষয়টি তার পারসোনাল ইস্যু। এটা সলভ করতে বলা হয়েছে। এতে আমার তার, কোম্পানির ইমেজের জন্য বেটার।’
কিন্তু আপনার এসএমএসও তো ছিল চাকরি থেকে বাদ দেয়ার- এমন মন্তব্যের পর সাইফুল বলেন, “কিছু সাংবাদিক এসে আমাকে বলছেন, ওই ঘটনার সঙ্গে সে জড়িত। তার বাসায় ত্ব-হা ছিল। ‘তখন আমি বলি, হাউ ইট পসিবল?’ তখন অনেক মিডিয়ার লোকজন আসা শুরু করল। তখন আমি বলি, আমার সঙ্গে আপাতত কন্টিনিউ করার দরকার নেই। মেসেজের এটাই অর্থ ছিল।
“বলেছি, ভাই তুমি আগে নিজে সেইফে থাকো। দ্যাট নট মিনস দ্যাট। তাকে বলা হয়নি ইউ আর ফায়ার্ড। তার মানে তার চাকরি থেকে টার্মিনেট করা হয়নি। তার পরিবারের সেইফটির জন্য তাকে বাসায় থাকতে বলা হয়েছে। অফিস থেকে বলা হচ্ছে তুমি বাসায় চলে যাও।”
ইসলামি বক্তা ত্ব-হা উধাও হয়ে ১৮ জুন পর্যন্ত সিয়ামদের বাসায় ছিলেন বলে তথ্য মিলেছে
বিষয়টি নিয়ে সিয়াম ভুল বুঝেছেন দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমার হায়ার অথরিটি বলছে যে, এটা তো তার পারসোনাল ইস্যু। যদি সে অপরাধী প্রমাণিত হয় তাহলে তাকে আমরা সাসপেন্ড করব। আর যদি প্রমাণিত না হয় তাহলে সে কন্টিনিউ করবে। হয়তো মিস আন্ডারস্টান্ডিং হয়েছে। কমিউনিকেশনে ভুল হচ্ছে। হয়তো কোথাও ভুল হচ্ছে।’
গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর এখন দায় দিচ্ছেন অপো কর্মকর্তা। বলেন, ‘সাংবাদিকরা আমার ওপর দোষ চাপাচ্ছে, আমাকে অপরাধী বানাচ্ছে। তার (সিয়াম) একটা ১০ মাসের বাচ্চা রয়েছে, বাড়িতে তার মা ছাড়া কেউ নেই। এই আসা-যাওয়ার ভেতরে যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তার দায়ভার কে নেবে বলেন...।’
সিয়াম তাহলে কবে থেকে অফিস করতে পারবেন?- সাইফুল বলেন, ‘যেহেতু তার একটা পারসোনাল প্রবলেম হয়েছে, সেটি সলভ হয়ে গেলে অফিস কন্টিনিউ করতে পারবে। আমি সেটা বলেছি।’
সিয়াম জানতেন না কিছুই
গত ১০ জুন ঢাকা আসার পথে তিন সঙ্গীসহ উধাও হয়ে যাওয়া ত্ব-হা সাত দিন ছিলেন সিয়ামের গাইবান্ধার বাড়িতে। তবে সিয়াম সেটি জানতেন না।
গত শুক্রবার ত্ব-হা ফিরে আসার পর সিয়ামের মা গণমাধ্যমকে জানান, তিনি সাত দিন তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছিলেন।
গাইবান্ধায় সিয়ামদের এই বাসাতেই তিন সঙ্গীসহ সাত দিন অবস্থান করেছেন ত্ব-হা
ত্ব-হা ও সিয়াম ছোটবেলার বন্ধু। সিয়ামরা সে সময় রংপুরেই থাকতেন। আর কয়েক বছর আগে তারা গাইবান্ধায় ফিরে যান।
সেই বাসায় ত্ব-হার যাতায়াত ছিল। সিয়ামের উপস্থিতিতেও যেতেন, অনুপস্থিতিতেও যেতেন।
চাকরিচ্যুতি নিয়ে সিয়াম যা বলেছিলেন
সিয়াম রোববার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কিছু সাংবাদিক আমার অফিসে গিয়ে আমার খোঁজ করছিলেন এবং ত্ব-হার নিখোঁজের বিষয়ে আমার সম্পৃক্ততা আছে বলে দাবি করেন। এ কারণে আমার অফিস আমাকে অব্যাহতি দিয়েছে।’
তবে এখনও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কোনো অব্যাহতিপত্র দেয়া হয়নি বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘কোনো অফিশিয়াল কাগজপত্র দেয়া হয়নি। কিন্তু মেসেজ দিয়েছে, ‘স্যরি ভাই, উই ক্যান নট কন্টিনিউ উইথ ইউ, বিকজ অফ কোম্পানি ইমেজ’। অফিসের সব গ্রুপ থেকেও আমাকে রিমুভ করা হয়েছে।”
এই সিদ্ধান্তের পেছনে কী যুক্তি থাকতে পারে, সেই প্রশ্ন সেদিনই তিনি তোলেন। বলেন, ‘আমি তো কোনো অপরাধ করিনি। আমার চাকরি যাবে কেন, তাও বুঝতেছি না।’
তবে সিয়াম আজ আর ফোন ধরেননি।