সিলেটের গোয়াইনঘাটে দুই সন্তানসহ স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার হিফজুর রহমানকে পাঁচদিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।
আহত অবস্থায় চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর হিফজুরকে রোববার তোলা হয় গোয়াইনঘাট আমলি আদালতে। তাকে সাতদিনের রিমান্ডে চেয়ে পুলিশ আবেদন করলে বিচারক অঞ্জন কান্তি দাস তাকে পাঁচদিনের জন্য রিমান্ডে পাঠান।
গোয়ানঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আহাদ বিষয়টি নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ধারণা হিফজুরই তার স্ত্রী সন্তানদের হত্যা করেছেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে আনা হয়েছে।’
গোয়াইনঘাটের ফতেহপুর ইউনিয়নের বিন্নাকান্দি দক্ষিণ পাড়া গ্রামে নিজ ঘর থেকে বুধবার (১৬ জুন) সকালে উদ্ধার করা হয় হিফজুরের স্ত্রী আলিমা বেগম, তার দুই সন্তান মিজান ও তানিশার মরদেহ। সেখানে আহত অবস্থায় হিফুজরকে পাওয়া যায়, নেয়া হয় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।তার আচরণ প্রথম থেকেই সন্দেহজনক বলে জানিয়েছিলেন পুলিশের কর্মকর্তারা।
নিহতদের ময়নাতদন্তের পর জানা যায়, হিফজুরের স্ত্রী আলিমা ছিলেন পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। ফলে পুলিশের মতে, তিনজন নয়, সেদিন খুন করা হয়েছে আদতে চারজনকে।জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে শনিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এসপি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন এই তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘নিহত আলিমা বেগম পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন বলে আমরা ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি। ঘাতকের বটির কোপে তার গর্ভে থাকা পাঁচ মাসের সন্তানও মারা গেছে। সে হিসেবে এ ঘটনায় চারজন মারা গেছেন। আমরা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর ভ্রূণহত্যার অভিযোগও আনব।’মরদেহ উদ্ধারের পর পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করেছিল, সম্পত্তিসংক্রান্ত বিরোধ থেকে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে। তবে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত এবং বিভিন্নজনকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে পুলিশের সন্দেহের তির আহত হিফজুরের দিকেই। ওসমানী মেডিক্যাল থেকে রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ছাড়পত্র দেয়া হয় হিফজুরকে। এর আগে শনিবার তাকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।
হত্যাকাণ্ডটি মঙ্গলবার রাতের কোনো এক সময়ে ঘটে। ওই রাতে হিফজুর-আলিমা দম্পতির পাঁচ বছর বয়সী ছেলে আফসান মামার বাড়িতে থাকায় বেঁচে যায়। আলিমার বাবা বৃহস্পতিবার সকারে গোয়াইনঘাট থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করেন।পুলিশ জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও হিফজুরের মোবাইল ফোনের কল লিস্টের সূত্র ধরে ওই দিন এ বাড়িতে কোনো বহিরাগত লোক প্রবেশের আলামত পাওয়া যায়নি। স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া এবং স্ত্রী ও দুই সন্তানের অসুস্থতা নিয়ে টানাপোড়েনের জেরেই হিফজুর এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।দিনমজুর হিফুজর তার মামার বাড়িতে মায়ের সূত্রে পাওয়া জমিতে ঘর বানিয়ে থাকেন।
স্থানীয় লোকজন জানান, বুধবার সকালে অনেক বেলা পর্যন্ত ঘুম থেকে উঠছিলেন না হিফজুরের পরিবারের সদস্যরা। সন্দেহ হওয়ায় তারা ওই ঘরের সামনে গেলে ভেতর থেকে কান্নার শব্দ পায়। দরজার সিটিকিনি খোলা পেয়ে ভেতরে গেয়ে দেখে খাটের ওপর তিনজনের গলাকাটা মরদেহ। হিফজুর রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিলেন মেঝেতে।
পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, বাইরে থেকে কেউ হত্যার জন্য এলে সঙ্গে করে অস্ত্র নিয়ে আসত। তাদের ঘরের বঁটি দিয়েই খুন করত না। বিরোধের কারণে খুনের ঘটনা ঘটলে প্রথমেই হিফুজরকে হত্যা করা হতো কিংবা স্ত্রী-সন্তানদের প্রথমে হামলা করলেও হিফুজর তা প্রতিরোধের চেষ্টা করতেন। এতে স্বভাবতই তিনি সবচেয়ে বেশি আঘাতপ্রাপ্ত হতেন।
অথচ হিফজুরের শরীরের আঘাত একেবারেই সামান্য। হিফজুরের শরীরের কিছু জায়গার চামড়া ছিলে গেছে কেবল।
সাধারণত ঘুমানোর আগে সবাই হাত-পা ধুয়ে ঘুমাতে যান। হিফজুরের স্ত্রী-সন্তানদের মরদেহের হাত-পা পরিষ্কার ছিল। অথচ তার পায়ে বালু ও কাদা লাগানো ছিল। এতে বোঝা যায় তিনি রাতে ঘুমাননি।
এসব কারণে পুলিশ ধারণা করে স্ত্রী-সন্তানদের হত্যা করে ঘটনা অন্য খাতে প্রবাহিত করতে নিজেই নিজের হাত-পা কাটেন হিফজুর।