বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কদমতলীতে ৩ খুন: নেপথ্যে স্ত্রীর বোনের সঙ্গে প্রেম?

  •    
  • ১৯ জুন, ২০২১ ২২:৩৪

পুলিশ বলছে, মেহজাবিন তার বাবা, মা ও ছোট বোনকে হত্যার পর শনিবার সকালে নিজেই পুলিশের কাছে ফোন করেন। মেহজাবিনের ঘুমের ওষুধ মেশানো পানীয় খেয়ে তার দাদি, স্বামী ও সন্তানও অচেতন হয়ে পড়েন। অসুস্থ অবস্থায় তাদের ভর্তি করা হয়েছে হাসপাতালে।

রাজধানীর কদমতলীতে স্বামী, স্ত্রী ও মেয়ের হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধারের পর গ্রেপ্তার মেহজাবিন মুন হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ বলছে, মেহজাবিন তার বাবা, মা ও ছোট বোনকে হত্যার পর শনিবার সকালে নিজেই পুলিশের কাছে ফোন করেন। মেহজাবিনের ঘুমের ওষুধ মেশানো পানীয় খেয়ে তার দাদি, স্বামী ও সন্তানও অচেতন হয়ে পড়েন। অসুস্থ অবস্থায় তাদের ভর্তি করা হয়েছে হাসপাতালে।

কদমতলীর মুরাদপুর হাজী লাল মিয়া সরকার রোড এলাকা থেকে শনিবার সকালে মাসুদ রানা, তার স্ত্রী মৌসুমি ইসলাম এবং তাদের ছোট মেয়ে ২১ বছরের জান্নাতুল মহিনীর মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

এর মধ্যে ৫০ বছর বয়সী মাসুদ রানা সৌদি প্রবাসী ছিলেন, ছুটিতে দেশে আসেন কয়েক মাস আগে।

ঘটনাস্থল থেকে মেহজাবিন মুনকে গ্রেপ্তার এবং তার দাদি, স্বামী শফিকুল ইসলাম ও পাঁচ বছর বয়সী সন্তান তৃপ্তিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ।

পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার শাহ ইফতেখার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তিন জনকে হত্যা করার পর মেহজাবিন নিজেই ৯৯৯ এ কল করেন। এরপর পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তিনি আত্মসমর্পণ করে হত্যার দায় স্বীকার করেছে। মেহজাবিন হত্যার কিছু কারণ বলেছেন, আমরা সেগুলো যাচাই বাছাই করছি।’

পুলিশের কয়েক জন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাকে জানান, জটিল পারিবারিক জটিলতার জের ধরে বাবা, মা ও বোনকে হত্যা করেন মেহজাবিন। এজন্য শুক্রবার রাত ১০টার দিকে চা পান করিয়ে বাড়ির সদস্যদের অচেতন করা হয়। পরে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয় তিন জনকে।

পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবে বাবা-মা, বোন, দাদি, স্বামী ও মেয়েকে চায়ের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাওয়ান পরিবারের বড় মেয়ে মেহজাবিন। অচেতন হওয়ার পর বাবা মাসুদ রানা, মা মৌসুমি ও ছোটবোন জান্নাতুলকে রশি, ওড়না দিয়ে হাত পা বেঁধে ফেলেন তিনি। পরে ওড়না দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। তবে বাসার সবাইকে অচেতন করলেও স্বামী-সন্তান ও দাদিকে হত্যা করেননি মেহজাবিন।’

মাসুদ রানার স্ত্রী মৌসুমি ইসলাম

পরদিন সকাল ১০টার দিকে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ এ কল করেন মেহজাবিন। এরপর পুলিশ গিয়ে তিনজনকে মৃত অবস্থায় পায় এবং তিন জনকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে। একইসঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয় মেহজাবিনকে।

হাসপাতালে ভর্তি তিন জনের মধ্যে মেহজাবিনের স্বামী শফিকুল ইসলাম পুলিশ পাহারায় চিকিৎসাধীন আছেন। তার পাঁচ বছরের মেয়ে ও দাদি আশঙ্কামুক্ত বলেও জানিয়েছে পুলিশ।

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, কদমতলীর মুরাদপুর হাজী লাল মিয়া সরদার রোডের একটি বাড়ির দ্বিতীয় তলায় ভাড়া থাকতেন মাসুদ রানা ও তার পরিবারের সদস্যরা। বড় মেয়ে মেহজাবিন তার স্বামী ও সন্তান নিয়ে অন্যত্র থাকেন। স্বজনেরা জানান, শুক্রবারই তারা মাসুদ রানার বাড়িতে আসেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বাড়ির দ্বিতীয় তলায় ২০১ নম্বর ফ্ল্যাটে থাকতেন মাসুদ ও তার পরিবার। দুই কক্ষের ফ্ল্যাটটির দরজা খুলতেই প্রথম কক্ষ, সোজা সামনে গেলেই আরেকটি কক্ষ। ভেতরের কক্ষের মেঝেতে পড়েছিল মাসুদ রানা, তার স্ত্রী ও ছোট মেয়ে জান্নাতুলের হাত-পা বাঁধা মরদেহ। শ্বাসরোধ করে হত্যা করায় প্রত্যেকের নাক ও মুখে রক্তের দাগ দেখা গেছে।

রাজধানীর কদমতলীর মুরাদপুর এলাকা থেকে স্বামী, স্ত্রী ও মেয়ের হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ছবি: নিউজবাংলা

কেন এই হত্যা?

কদমতলী থানার কর্মকর্তারা জানান, মেহজাবিনের বাবা মাসুদ রানা সৌদি আরবে থাকেন। কয়েক মাস আগে তিনি দেশে ফেরেন। সৌদি আরবে মাসুদ রানার আরও এক স্ত্রী রয়েছে। তিনি দেশে থাকা পরিবারের সদস্যদের খোঁজখবর খুব একটা নিতেন না।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে মেহজাবিন জানিয়েছেন, মাসুদের স্ত্রী মৌসুমী নিজের মেয়েদের দিয়ে দেহ ব্যবসা করাতেন। বড় মেয়ের বিয়ে হওয়ার পর ছোট মেয়েকে এই কাজে নামান তিনি। ছোট বোন জান্নাতুলের সঙ্গে মেহজাবিনের স্বামীরও সম্পর্ক ছিল। এসব নিয়ে পরিবারের সদস্যদের প্রতি ক্ষুব্ধ ছিলেন মেহজাবিন।

নিহত মৌসুমি ইসলামের বোন ইয়াসমিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মেহজাবিনের স্বামী শফিকুলের সঙ্গে ছোট বোন জান্নাতুলের সম্পর্ক ছিল। এটি পরিবারের সবাই জানত। এ নিয়ে অশান্তি চলছিল।’

মেহজাবিনের স্বামী শফিকুল ইসলাম

এছাড়া শফিকুল টাকা দেয়ার জন্য মেহজাবিনের মাধ্যমে তার বাবা-মাকে চাপ দিচ্ছিল বলেও অভিযোগ করেন ইয়াসমিন।

নিহত মৌসুমির আরেক বোন সোনিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মেহজাবিনের ছোট বোনের সঙ্গে শফিকুলের সম্পর্ক নিয়ে পারিবারিক ঝামেলা ছিল। শফিকুল তার একটি মামলা শেষ করার জন্য মোটা অঙ্কের টাকা এনে দিতে মেহজাবিনকে চাপ দিচ্ছিল। এ নিয়ে আমার বোন (মৌসুমি) কান্নাকাটি করেছে আমাদের সামনে।’

মৌসুমীর দুই বোনের দাবি, তাদের বোনজামাই শফিকুলই সবাইকে সবাইকে হত্যা করেছে। এরপর নিজের মেয়েকে জিম্মি করে মেহজাবিনকে দিয়ে ৯৯৯ এ কল করিয়েছে।

পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার শাহ ইফতেখার শনিবার সন্ধ্যায় নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নিহতদের লাশ ঢাকা মেডিক্যালের মর্গের পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় এখনও কোনো মামলা হয়নি।’

এ বিভাগের আরো খবর