বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

যে বাড়িতে ছিলেন ত্ব-হারা, যা জানালেন গৃহকর্ত্রী

  •    
  • ১৯ জুন, ২০২১ ২০:০৬

সিয়াম ও ত্ব-হা একেবারে শৈশব থেকে বন্ধু। কিন্ডারগার্টেন থেকে এইচএসসি পর্যন্ত একসঙ্গে পড়েছেন রংপুরে। তখন সিয়ামরা রংপুরে ভাড়া থাকতেন। ত্ব-হার মা আজেদা বেগম ও সিয়ামের মা নিশাত নাহার রংপুরে একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুল দিয়েছিলেন। সেখানে শিক্ষকতা করেছেন নিশাত। তবে সেটি বন্ধ হয়ে গেছে। বছর পাঁচেক আগে তারা গাইবন্ধায় ফিরে আসেন। তারা গাইবান্ধায় চলে আসার পর ত্ব-হা একাধিকবার এসেছেন বাড়িটিতে; কখনও সিয়ামের সঙ্গে, কখনও এসেছেন একাই।

ক্রিকেটার থেকে ইসলামি বক্তা বনে যাওয়া আবু ত্ব-হা মোহাম্মদ আদনান গাইবান্ধার যে বাড়িতে তিনজন সঙ্গীকে নিয়ে সাত দিন অবস্থান করেছেন, সেটি খুঁজে পেয়েছে নিউজবাংলা। এটি তার ছোটবেলার বন্ধু সিয়াম ইবনে শরীফের বাবার বাড়ি।

বাড়িটি গাইবান্ধা সদর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নের পশ্চিম পিয়ারাপুর গ্রামে। জেলা শহর থেকে সাত কিলোমিটার দূরের এই বাড়িটি আকারে বিশাল। সেখানে কক্ষ আছে সাতটি, প্রতিটিই পরিপাটি করে সাজানো।

এই বাড়িতে মানুষের আনাগোনা কম, গাছগাছালি, ঝোপঝাড়ে ভরপুর বাড়ির চারপাশ। অনেকটাই নির্জন।

ছায়াঘেরা বাড়িটিতে অন্ধকার নামে একটু আগেভাগেই। আশপাশে বাড়িঘর থাকলেও এই বাড়িটি অনেক বড়, আর সেখানে প্রতিবেশীদের যাতায়াতও কম।

গত ১০ জুন ত্ব-হা ঢাকায় আসছিলেন বলে জানিয়েছেন তার দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিকুন্নাহার। তবে রাত ২টা ৩৮ মিনিটের পর তার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর তিনি থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে যান। তবে পুলিশ এই ডায়েরি নেয়নি।

তবে তার মা আজেদা বেগমের ডায়েরি নিয়েছে রংপুর পুলিশ। আর এই তরুণের অন্তর্ধান নিয়ে তুমুল আলোচনার মধ্যে শুক্রবার তিনি রংপুর আবহাওয়া অফিসের পাশে তার প্রথম স্ত্রীর বাড়িতে ফিরে আসেন। সেখান থেকে পুলিশ তাকে নিয়ে যায়। আর রাতে রংপুর আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে মায়ের জিম্মায় বাড়ি ফিরে যান।

পুলিশ প্রথমে জানায়, ত্ব-হা ও তার সঙ্গীরা এই কয়দিন ছিলেন গাইবান্ধায় বন্ধুর বাড়িতে। পরে আদালতে দেয়া জবানবন্দিতেও বিষয়টি উল্লেখ করেন তিনি। ব্যক্তিগত কারণে এই আত্মগোপন বলেও জানান তিনি। তবে আদালত থেকে বের হয়ে একটি কথাও বলেননি।

পরদিন সকাল থেকেই নিউজবাংলা চেষ্টা করেছে সেই সাত দিনের কাহিনি জানতে। পরে গাইবান্ধার সেই বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, তিনি সেখানে ওঠেন ১১ জুন। এরপর বাড়ি ফেরার আগ পর্যন্ত ত্ব-হা বা তার তিন সঙ্গীর কেউ বাড়ি থেকে এক দিনের জন্যও বের হননি। তাই তাদের বিষয়ে জানতেন না প্রতিবেশীরাও।

সিয়ামের মা নিশাত নাহার, তিনিই ত্ব-হা ও তার তিন সঙ্গীকে আশ্রয় দিয়েছেন সাত দিন

বাড়িটিতে একাই থাকেন সিয়ামের মা নিশাত নাহার। গৃহকর্তা শরীফ খান বছর দুয়েক আগে মারা গেছেন। তিনি ছিলেন ব্যাংকার।

সিয়াম রংপুর শহরে একটি প্রতিষ্ঠানে এইচআর বিভাগে চাকরি করেন। তার বোনের বিয়ে হয়েছে ঢাকায়।

ত্ব-হা তার তিন সঙ্গীকে নিয়ে বাড়িতে যাওয়া, আট দিন অবস্থান আর ফিরে আসার পুরো কাহিনি নিশাতের কাছ থেকে জেনেছে নিউজবাংলা।

তিনি জানান, বিষয়টি ছেলে সিয়ামকেও জানাননি নিশাত। কারণ, ত্ব-হা এসেই জানিয়েছিলেন তিনি বিপাকে আছেন। তাকে ফলো করছেন দুজন। বিষয়টি নিয়ে জানাজানি হলে তার বিপদ হতে পারে।

এই সাতটি দিন ঘরে বই পড়েই সময় কাটাতেন ত্ব-হা ও তার তিন সঙ্গী। আর গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে ত্ব-হা ও তার তিন সঙ্গী বাড়ি ফেরার কথা বলে চলে যান।

সিয়াম-ত্ব-হার বন্ধুত্ব

বাড়ির সামনে ও পেছনে দুটি লোহার গেট আছে।

শনিবার বেলা ২টার দিকে গেটে নক করলে দরজা খুলে দেন নিশাত নিজেই। বসতে দেন ড্রয়িংরুমে। এরপর ঘণ্টাখানেক সময় দেন।

নিশাত জানান, সিয়াম ও ত্ব-হা একেবারে শৈশব থেকে বন্ধু। কিন্ডারগার্টেন থেকে এইচএসসি পর্যন্ত একসঙ্গে পড়েছেন রংপুরে। তখন সিয়ামরা রংপুরে ভাড়া থাকতেন।

এই কক্ষটিতে ত্ব-হা তার এক সঙ্গীকে নিয়ে থেকেছেন

ত্ব-হার মা আজেদা বেগম ও সিয়ামের মা নিশাত নাহার রংপুরে একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুল দিয়েছিলেন। সেখানে শিক্ষকতা করেছেন নিশাত। তবে সেটি বন্ধ হয়ে গেছে। আর বছর পাঁচেক আগে তারা গাইবন্ধায় ফিরে আসেন।

তারা গাইবান্ধায় চলে আসার পর ত্ব-হা একাধিকবার এসেছেন বাড়িটিতে; কখনও সিয়ামের সঙ্গে, কখনও এসেছেন একাই।

এক ফাঁকে নিশাত জানিয়ে রাখেন, ত্ব-হাকে ছোটবেলা থেকেই তিনি আদর করতেন। ছেলের মতোই দেখতেন। আর তার কাছে আবদারও করতেন ত্ব-হা।

সিয়ামের মায়ের সঙ্গে কথোপকথন

-ত্ব-হা কখন আসলেন এবং এসে কী বলেছেন?

সিয়ামের মা বললেন, ‘শুক্রবার ও (ত্ব-হা) হুট করেই আসছে। আগে কিছুই জানায়নি। সঙ্গে ছিল আরও তিনজন। সবার চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ ছিল। পরে বলে যে, কে জানি ওদের ফলো করতেছে। এটা বলার পর কয়েক দিন এখানে থাকতে চায়! আমি আর না করতে পারিনি।’

এক প্রশ্নে নিশাত জানিয়ে দেন, তাদের অন্তর্ধান নিয়ে দেশজুড়ে যে তোলপাড়, সেটি বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত জানতে পারেননি। সেই রাতে তার মেয়ে ফোন করে ত্ব-হার বিষয়টি জানিয়েছেন।

তবে তারা যে এই বাড়িতে অবস্থান করছিলেন, সেটি জানতেন না সিয়ামের বোন। আর মেয়ের কাছ থেকে জানতে পেরে নিশাত ত্ব-হাকে বাড়ি ফিরে যেতে বলেন।

এই কক্ষটিতে থেকেছেন ত্ব-হার আর ‍দুজন সঙ্গী

নিশাত জানান, তিনি ত্ব-হাকে বৃহস্পতিবার রাতে বলেন, ‘তোমার তো বিপদ কেটে গেছে। তোমার সঙ্গে মিডিয়া আছে। তুমি তাহলে কাল সকালে বাড়িতে যাও। তোমার আর কোনো সমস্যা নাই।’

তখন তারা শুক্রবার সকালে ফিরে যান।

-ওরা চলে যাওয়ার সময় কী বলেছে?

‘ওরা শুধু বলেছে, আমরা বাড়িতে গেলাম।’

-এত তোলপাড় হওয়া ঘটনাটি নিয়ে মেয়ে ফোন করার আগ পর্যন্ত জানতেন না কিছুই?

‘না, আমি এটা জানি না। ঘরে টেলিভিশন নষ্ট।’

বাড়িতে পত্রিকাও রাখা হয় না আর স্মার্টফোনও চালান না নিশাত।

-কিন্তু তারা আট দিন থাকল, কেউ জানল না, এমনকি আপনার ছেলেও জানে না। এটা কেমন কথা?

‘ওরা (ত্ব-হা) বলতে নিষেধ করেছিল। তাই কাউকে বলিনি।’

-এই আট দিনে তারা কি বাড়ির বাইরে যাননি কেউ? ওদের জন্য তো বাজার-সদাইও করতে হয়েছে, সেটা কে করে দিয়েছে?

‘বাজারঘাট করাই ছিল ফ্রিজে। যা যা ছিল তাই খাওয়াইছি। নিজে যা খাই, তাই খাওয়াইছি।’

এই ডাইনিং টেবিলে বসেই খাওয়াদাওয়া করেছেন ত্ব-হা ও তার তিন সঙ্গী

-ওনারা এখানে থাকা অবস্থায় কোনো মিটিং হয়েছে কি না, তারা ফোনে কাউকে জানিয়েছেন কি না বা বাইরে থেকে কেউ এসেছেন কি না।

‘তারা এখানে আসার পর থেকে সবাই ফোন বন্ধ করে রাখছে। বাড়ি থেকে বের হয় নাই। বাইর থেকে কেই আসেও নাই এখানে।’

-ত্ব-হা এবারই কি প্রথম এসেছেন?

‘না, এর আগেও ও (ত্ব-হা) অনেকবার আসছিল। এসে এসে থাকত।’

-ত্ব-হাকে রাখলেন ঠিক আছে, কিন্তু অপরিচিত লোকদের কেন রাখলেন?

-সে বলেছে তার বন্ধু হয়। তাই। তা ছাড়া সে তো এর আগেও বহুবার এখানে থাকছে।

-ত্ব-হা এর আগে সিয়ামের সঙ্গে এসেছিল নাকি তাকে ছাড়া?

‘তার (সিয়াম) উপস্থিতিতেও আসছিল, অনুপস্থিতিতেও আসছিল।

-আগে যে আসত, কয়দিন ধরে থাকত, কী করত?

‘সর্বোচ্চ থাকছিল ছয় দিন। তখন মসজিদে মসজিদে খুতবা দিত।’

১০ জুন নিখোঁজ হওয়ার আট দিন পর ১৮ জুন তিনি তার প্রথম স্ত্রীর বাসায় ফেরেন

-এলাকাবাসী এবার জানল না, কিন্তু এর আগে যে এসেছে, তখন তো চলাফেরা করেছে। এলাকাবাসী কীভাবে তাকে দেখে?

‘তারা তো তাকে হুজুর হিসেবে চেনে। সবাই তাকে ভালো লোক হিসেবেই দেখে।’

-যদি এরা কোনো অপকর্ম করত, দায়ভার আপনার ওপর তো পড়তে পারত, এমনকি আপনার ছেলের ওপরেও।

‘ওই যে বলেছে, দুজন লোক তাদের ফলো করছে, এ কারণে আমি সরল বিশ্বাসে তাদের থাকতে দিছি। আমি ত্ব-হার মায়ের মতো। ছোটবেলা থেকে আদরযত্ন করে তাকেও তো বড় করছি। যদি আমার ছেলে ২/৪/৫টা বন্ধু নিয়ে এসে বলত, তারা বিপদে পড়েছে, আমি কি তাদের বাড়ি থেকে বের করে দিতাম?’

এ বিভাগের আরো খবর