বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গোয়াইনঘাটে তিন খুনে মামলা, আসামি অজ্ঞাতপরিচয়

  •    
  • ১৭ জুন, ২০২১ ১২:৫৫

স্ত্রী-সন্তানদের হিফজুরই হত্যা করেছে বলে পুলিশ সন্দেহ করলেও নিহত নারীর বাবার করা মামলায় তাকে আসামি করা হয়নি। আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে।

সিলেটের গোয়াইনঘাটে দুই সন্তানসহ মাকে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। হত্যায় ওই নারীর স্বামী জড়িত বলে পুলিশ ধারণা করলেও মামলায় আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে।

নিহত আলিমা বেগমের বাবা আইয়ুব আলী বৃহস্পতিবার সকালে গোয়াইনঘাট থানায় এই মামলা করেছেন।

তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন ওই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আহাদ।

তিনি আরও বলেন, প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আলিমা ও তার স্বামী হিফজুর রহমানের মধ্যে দাম্পত্য কলহ ছিল। ঘটনার তিন দিন আগে আলিমার বোনের বিয়েতে যাওয়া নিয়ে দুজনের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডাও হয়েছিল।

ওসি জানান, এসব কারণে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যা করে থাকতে পারেন হিফজুর। সন্দেহ এড়াতে পরে নিজেকে নিজে জখম করেন। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে।

গোয়াইনঘাটের ফতেহপুর ইউনিয়নের বিন্নাকান্দি দক্ষিণপাড়া গ্রামের বাড়িতে বুধবার সকালে পাওয়া যায় আলিমা বেগম, ছেলে ১০ বছরের মিজান ও মেয়ে ৩ বছরের তানিশার রক্তাক্ত মরদেহ।

সেখান থেকে আহতাবস্থায় উদ্ধার করা হয় হিফজুর রহমানকে। তাকে ভর্তি করা হয় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।

আহত হিফজুর রহমান

পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার রাতের কোনো একসময় তাদের হত্যা করা হয়। ওই রাতে মামার বাসায় থাকায় বেঁচে যায় ওই দম্পতির পাঁচ বছরের ছেলে আফসান।

আফসানের নানা আইয়ুব আলী নিউজবাংলাকে ব‌লেন, আফসান তাদের বা‌ড়ি‌তে আছে। তাকে এ ঘটনা জানানো হয়নি।

তিনি বলেন, মঙ্গলবার মামার বাড়িতে বেড়াতে আসে আফসান। রাতে সেখানেই সে থেকে যায়। আর ওই রাতেই হত্যা করা হয় তার মা ও ভাইবোনকে। সে ওই বাড়িতে থাকলে তাকেও হত্যা করা হতো।

হত্যাকারী হিসেবে হিফজুরকে পুলিশ এখন সন্দেহ করছে। কর্মকর্তারা বলছেন, হিফজুরের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক।

ঘটনার পর পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করেছিল, সম্পত্তিসংক্রান্ত বিরোধ থেকে এই হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে। তবে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ও অনেককে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে এখন পুলিশের সন্দেহের তির আহত হিফজুরের দিকেই।

এ ঘটনার তদন্তের সঙ্গে সম্পৃক্ত পুলিশের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘হিফজুর রহমান প্রথম থেকেই সন্দেহজনক আচরণ করছেন। প্রথমে আমরা তা বুঝতে পারিনি।

‘তিনি ঘরের ভেতরে অজ্ঞানের ভান করে পড়ে ছিলেন। তবে হাসপাতালে নেয়ার পর বোঝা যায় তার আঘাত গুরুতর নয়।’

হিফজুরকে সন্দেহের কয়েকটি কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাইরে থেকে কেউ হত্যার জন্য এলে সঙ্গে করে অস্ত্র নিয়ে আসত। তাদের ঘরের বঁটি দিয়েই খুন করত না। বিরোধের কারণে খুনের ঘটনা ঘটলে প্রথমেই হিফুজরকে হত্যা করা হতো কিংবা স্ত্রী-সন্তানদের প্রথমে হামলা করলেও হিফুজর তা প্রতিরোধের চেষ্টা করতেন। এতে স্বভাবতই তিনি সবচেয়ে বেশি আঘাতপ্রাপ্ত হতেন।

‘অথচ হিফজুরের শরীরের আঘাত একেবারেই সামান্য। হিফজুরের শরীরের কিছু জায়গার চামড়া ছিলে গেছে কেবল। এতে আমাদের ধারণা, স্ত্রী-সন্তানদের হত্যা করে ঘটনা অন্য খাতে প্রবাহিত করতে নিজেই নিজের হাত-পা ছিলেছেন তিনি।’

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘সাধারণত ঘুমানোর আগে সবাই হাত-পা ধুয়ে ঘুমাতে যান। হিফজুরের স্ত্রী-সন্তানদের মরদেহের হাত, পাও পরিষ্কার ছিল। অথচ তার পায়ে বালু ও কাদা লাগানো ছিল। এতে বোঝা যাচ্ছে তিনি রাতে ঘুমাননি।’

এ ছাড়া হিফজুর অজ্ঞান হওয়ার ভান করেছিলেন জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এখন হাসপাতালে জিজ্ঞাসাবাদেও তিনি উল্টাপাল্টা কথা বলছেন। পাগলের মতো আচরণ করছেন। তার কথাবার্তাও সন্দেহজনক।’তবে কী কারণে হিফজুর তার স্ত্রী-সন্তানদের খুন করতে পারেন, এ বিষয়ে কিছু জানাতে পারেননি ওই কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, ‘যেহেতু হিফজুর এখনও হাসপাতালে আছেন, তাই তাকে বেশি জিজ্ঞাসাবাদ করা যাচ্ছে না। তবে সুস্থ হলে তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে।’

গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আহাদ বলেন, ‘কিছু ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা হিফজুরকে সন্দেহ করছি। তিনি হাসপাতালে পুলিশের নজরদারিতে আছেন। তবে এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা যাবে না।’দিনমজুর হিফজুর তার মায়ের নামে পাওয়া জমিতে ঘর বানিয়ে থাকেন।স্থানীয় লোকজন জানান, বুধবার সকালে অনেক বেলা পর্যন্ত ঘুম থেকে উঠছিলেন না হিফজুরের পরিবারের সদস্যরা। দেরি দেখে প্রতিবেশীরা হিফজুরের ঘরের সামনে যান। এ সময় ভেতর থেকে কান্নার শব্দ শুনে দরজায় ধাক্কা দেন তারা।

একাধিক প্রতিবেশী জানান, দরজার ছিটকানি খোলাই ছিল। ভেতরে প্রবেশ করে খাটের মধ্যে তিনজনের গলাকাটা মরদেহ ও হিফজুরকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পান তারা। পরে খবর দিলে গোয়াইনঘাট থানার পুলিশ গিয়ে লাশ তিনটি উদ্ধার করে হিফজুরকে হাসপাতালে পাঠায়।

এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মামলা হয়নি। কাউকে আটক করা হয়নি বলেও জানান ওসি।

এ বিভাগের আরো খবর