রংপুরের মিঠাপুকুরের জায়গীরহাটে সোনালী ব্যাংক শাখার পাশে যে মাদ্রাসার কক্ষে সুড়ঙ্গ খোঁড়া হয়েছিল সেই প্রতিষ্ঠানে কর্তৃপক্ষের তেমন নজরদারি ছিল না।
ফখরুল উলুম আলিয়া মাদ্রাসা নামের প্রতিষ্ঠানটির ফটক বন্ধ থাকলেও পশ্চিম দিকের ভবনে দুটি কক্ষের জানালা ও দরজা ভাঙা। ওই অংশ দিয়ে স্থানীয়দের অবাধ যাতায়াত রয়েছে মাদ্রাসায়।
মাদ্রাসায় বৈদ্যুতের সংযোগ না থাকায় রাতে নেই আলোর কোনো ব্যবস্থা। হামিদুজ্জামান নামে একজনকে নৈশপ্রহরী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হলেও এমপিও না হওয়ায় তাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হয়নি।
সব মিলিয়ে সন্ধ্যার পর মাদ্রাসা ক্যাম্পাসে কর্তৃপক্ষের নজরদারি নেই বললেই চলে।
বুধবার মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ, কর্মকর্তা-কর্মচারী, এলাকাবাসী ও ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
এর আগে সোমবার সুড়ঙ্গটি দেখতে পায় স্থানীয় এক কিশোর। পরে বিষয়টি জানাজানি হয়।
ওই সময় মিঠাপুকুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জাকির হোসেন জানান, করোনার কারণে বন্ধ থাকা মাদ্রাসাটির মাঠে স্থানীয় ছেলেরা ফুটবল খেলছিল। একপর্যায়ে ফুটবলটি ব্যাংক থেকে ১০ গজ দূরে থাকা মাদ্রাসার একটি কক্ষে ঢুকে পড়ে।
ফুটবলটি আনতে গিয়ে এক কিশোর সুড়ঙ্গটি দেখতে পায়। সে তার বাবাকে জানালে তিনি বাজারে গিয়ে বিষয়টি সবার নজরে আনেন।
মাদ্রাসার দপ্তরি দিলশাদ মিয়া জানান, যে কক্ষটিতে সুড়ঙ্গ করা হয়েছে, সেটি এক সময় ছাত্রীদের কমনরুম ছিল। মাদ্রাসার শেষ সীমানায় ওই কক্ষটি। মাদ্রাসা বন্ধ তাই এখন সেই রুমে তারা কেউ যান না।
তারা সকালে অফিস খোলেন। কাজ থাকলে করেন, না থাকলে করেন না। দুপুরের পর অফিস বন্ধ করে বাড়ি চলে যান।
তিনি বলেন, ‘সুড়ঙ্গটি কক্ষের দেয়াল পার হয়ে গেছে। বাকি ছিল সীমানা দেয়াল। ওটা ভেদ করতে পারলে হয়তো কিছু একটা হতো। তার আগেই ছেলেরা দেখেছে।
মাদ্রাসার অফিস সহায়ক মহসিন আলী বলেন, ‘মাদ্রাসা বন্ধ থাকায় ফটকে তালা লাগানো। কিন্তু পশ্চিমের বিল্ডিংয়ের দুটি কক্ষের জানালা ও দরজা ভাঙা। ওই দিক দিয়ে এলাকার ছেলেরা এসে মাঠে খেলাধুলা করে।
‘যারা কাজটি করেছে তারাও হয়তো ওই জানালা দিয়ে এসেছে। আমাদের মাদ্রাসায় বিদ্যুতের লাইন নাই। ওই ঘটনার পর লাইন লাগানো হয়েছে।’
মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাদেক আলী নিউজবাংলাকে জানান, কীভাবে এই ঘটনা ঘটল তা জানতে তারা আলাদা তদন্ত কমিটি করবেন। এজন্য বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় জরুরি সভা ডেকেছেন।
ব্যাংকের ম্যানেজার সামিউল হাসান বলেন, ‘আমরা এ ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি। এ ছাড়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ বরাবর একটি চিঠি দিয়েছি। তাতে মাদ্রাসার নিরাপত্তা বাড়ানোর অনুরোধ করা হয়েছে। একই ভাবে পুলিশকেও চিঠি দিয়েছি, পাহারা ও নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য।’
ব্যাংকের ভেতরেও নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
রংপুর জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ কামরুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বলার মতো এখনও কোনো অগ্রগতি হয়নি। আমরা তদন্ত করছি।’