জিও পলিটিক্স (ভূ-রাজনীতি) নিয়ে বক্তব্য দেয়াতেই ধর্মীয় বক্তা আবু ত্বহা মুহাম্মদ আদনানের কাল হলো কি না এমন শঙ্কা প্রকাশ করেছেন নিখোঁজ ত্বহার স্ত্রী সাবিকুন্নাহার।
ত্বহা মুহাম্মদ আদনানের সন্ধান চেয়ে সংবাদ সম্মেলনে এমন শঙ্কার কথা তুলে ধরেন তার স্ত্রী সাবিকুন্নাহার। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটের সাগর-রুনি মিলনায়তনে বুধবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে স্বামীকে ফিরিয়ে দেয়ার আবেদনও জানান তিনি।
৮ জুলাই থেকে ত্বহাসহ চারজন নিখোঁজ রয়েছেন। কোথা থেকে কীভাবে নিখোঁজ হয়েছেন এমন তথ্য দিতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও।
সংবাদ সম্মেলনে সাবিকুন্নাহার প্রধানমন্ত্রীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আকুতি জানান ত্বহাকে খুঁজে বের করতে।
তিনি বলেন, ‘সে নিরীহ মানুষ, ভুল-বোঝাবুঝি হতে পারে। তাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিন, নয়ত আমাকে তার কাছে নিয়ে যান।’
ত্বহার স্ত্রী সাবিকুন্নাহার বলেন, ‘যদি সত্যিকার অর্থে তিনি কোনো অপরাধে যুক্ত থাকেন, তাহলে রাষ্ট্রীয় আইনে তার বিচার হোক। আমি কিছু বলব না।’
ত্বহা কোনো দল বা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নন বলে দাবি করেন সাবিকুন্নাহার।
তিনি বলেন, ‘সে কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত নন। আমি আর কিছু যুবক ছাড়া তার পাশে কেউ নেই।’
৮ জুলাই রাতে রংপুর থেকে ফেরার পথে গাবতলী এলাকা থেকে ত্বহা, তার দুই সফরসঙ্গী ও গাড়ির চালক গাড়িসহ নিখোঁজ হন।
নিখোঁজ ব্যক্তিরা হলেন, আফসানুল আদনান ওরফে আবু ত্বহা আদনান, আমির উদ্দিন, ফিরোজ আলম ও আব্দুল মুহিত আনছারী।
চারজন মানুষকে গাড়িসহ নিয়ে যাওয়া কোনো প্রাইভেট কাজ নয় বলে জানান ত্বহার স্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘রংপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হওয়ার পথে বিকেল ৪টার দিকে ফোনে কথা হয়। দুটি মোটরসাইকেল তাদের অনুসরণ করছিল। তিনি (ত্বহা) বলছিলেন, দোয়া করো যেন কিছু না হয়। এর ২০-২৪ মিনিট পর ফোন করে জানান বাইকগুলো চলে গেছে।’
জিও পলিটিক্স (ভূ-রাজনীতি) নিয়ে কথা বলাই কাল হলো কি না সন্দেহ ত্বহার স্ত্রীর
খুতবা ও বক্তব্যে জিও পলিটিক্স নিয়ে কথা বলতেন আবু ত্বহা মুহাম্মদ আদনান। ফিলিস্তিন-ইসরায়েল ইস্যুতে কথা বলতেন ত্বহা।
সাবিকুন্নাহার বলেন, কারো প্রতি কোনো ধরনের আমাদের অভিযোগ নেই। অনেক সময় তার প্রতি বিরুপ মন্তব্য করতেন, অনেক রকমের কথা বলতেন। এ জন্য কোনো প্রেসার এলো কিনা তা বলতে পারছি না। আবার কখনও মনে হয় তিনি জিও পলিটিক্স, পলিটিক্যাল সায়েন্স নিয়ে আলোচনা করতেন। আন্তর্জাতিক কোনো গোয়েন্দা সংস্থার কাজ কিনা তা বুঝতে পারছি না।
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের বিষয় নিয়ে ত্বহার আলোচনার বিষয় সম্পর্কে তার স্ত্রী বলেন, আমরা সবাই মুসলিম। আর মুসলিম বলতেই সবাই আল আকসাকে ভালোবাসি। আল আকসার ব্যাপারে যাদেরই রক্তচক্ষু থাকবে তাদের প্রতি আমাদের দিল থেকে একটা ঘৃণা থাকবেই।
ত্বহাদের গাড়ি অনুসরণ করছিল দুটি মোটরসাইকেল
রংপুর থেকে ঢাকা আসার পথে দুইটি মোটরসাইকেল ত্বহাদের বহনকারী গাড়ি অনুসরণ করছিল। একারণে তিনি শঙ্কিত ছিলেন। ত্বহার স্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বিকেল তিনটার দিকে বগুড়ার একটি প্রোগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হন ত্বহা তার দুই সহযোগি ও প্রাইভেটকার চালক আমির। উদ্দেশ্য ছিল প্রোগ্রাম শেষে তিনি ঢাকায় আমার কাছে আসবেন। কিন্তু বিকেল চারটার দিকে আমি তাকে ফোন করে তাকে বলি- রাতে বাসায় ফিরে কি খাবা? কি রান্না করবো? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি রেগে যায় আমার উপরে। রেগে গিয়ে ত্ব-হা বলেন- আমাদের প্রাইভেটকারের পেছনে দুটি বাইক আমাদেরকে ফলো করছে। আমার জন্য দোয়া করো, আমি যেন ঠিকভাবে বাসায় পৌঁছাতে পারি।
এরকিছুক্ষণ পরে তিনি নিজেই আমাকে ফোন করে বলেন, বাইক দুটি আর দেখা যাচ্ছে না। তুমি রান্না করো, আমরা চারজন বাসায় এসে ভাত খাবো।
সবশেষ লোকেশন ছিল গাবতলী
ত্বহার স্ত্রী বলেন, তার সঙ্গে যখনই কথা হয় তখনই তিনি লোকেশনসহ আমাকে হোয়াটসঅ্যাপে স্ক্রিনশট পাঠান। ওইদিনও একাধিকবার আমাকে লোকেশন পাঠিয়েছেন। রাত দুইটার দিকে সর্বশেষ আমি তাকে ফোন করি। কিন্তু সে ঘুমানোর কারণে আমার ফোন রিসিভ করতে পারেনি। ঘুম ভাঙার পরে রাত ২টা ৩৭ মিনিটে একটা ম্যাপ শেয়ার করেন। তখন আমি ঘুমাচ্ছিলাম। এরপর তার ম্যাসেজ দেখে ঘুম থেকে উঠে তার খাবারের ব্যবস্থা করতে যাই। তার ম্যাপে দেখাচ্ছিল বাসায় পৌঁছাতে ১৮ মিনিট সময় লাগবে।
অপেক্ষা আর শেষ হয় না
গুগল ম্যাপ অনুযায়ী ১৮ মিনিটের মধ্যে বাসায় পৌঁছার কথা ত্বহার। কিন্ত ত্বহাকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছিল না। তার সঙ্গীদেরও ফোন বন্ধ।
ত্বহার স্ত্রী বলেন, এরপর অপেক্ষা করতে করতে রাত ৩ টার দিকে তার নম্বরে ফোন করি। কিন্তু তখন থেকেই তার মোবাইল বন্ধ পাই। এরপর প্রাইভেটকার চালক আমিরের নম্বরে ফোন করি। তার মোবাইলও বন্ধ পাই। তখন আমার কাছে সন্দেহ হয়। এভাবে অপেক্ষা করতে করতে ভোর ৫টা বেজে যায়।
এক প্রশ্নের জবাবে ত্ব-হার স্ত্রী বলেন, বগুড়ায় যে প্রোগ্রাম হওয়ার কথা ছিল সেটি হয়নি। তিনি রাস্তায় থাকার কারণে বিস্তারিত কথা বলার সুযোগ ছিল না। ভেবেছিলাম বাসায় আসার পর তাকে বিস্তারিত জিজ্ঞেস করবো। আমার উপর রেগে যাওয়ার কারণে জিজ্ঞেস করিনি। শুধু এতটুকুই জানি বগুড়ায় তার প্রোগ্রামটি হয়নি।
এর আগে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেছিল কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, না, এর আগে কখনো এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি কিংবা কখনো বলেওনি। তবে তিনি মসজিদে খুতবা বা বয়ান দিতেন তখন মাঝে মাঝে কিছু ঝামেলার সম্মুখীন হতেন বলে আমাকে বলতেন। এ বিষয়গুলো তিনি তার লেকচারেও তুলে ধরেছেন।
বগুড়ার প্রোগ্রাম বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে আয়োজকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আয়োজকদের কোনো নাম্বার আমার কাছে নেই। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। আজকের এ সংবাদ সম্মেলনেও আমি অভ্যস্ত নই, এর আগে কখনও এ ধরনের সংবাদ সম্মেলনে আসিনি।
পড়াশোনার বিষয়ে ত্ব-হার স্ত্রী বলেন, তিনি ফিলোসফিতে (দর্শন) মাস্টার্স করেছেন এবং সালাফি মাদরাসা থেকে আরবিতে অনেক শিক্ষকের কাছে থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেন। কিন্তু সানাফি, হাম্বলি, কওমি, দেহবন্দি কিংবা আহালে হাদিসের সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। তিনি সংকীর্ণ মনের ছিলেন না। হকটা (সত্য) সব জায়গা থেকে গ্রহণ করতেন এবং প্রচুর পড়াশোনা করতেন। বিশেষ করে ত্বকী উস্মানীর বইগুলো বেশি পড়তেন। এছাড়াও বিদেশি লেখকদের বইও তিনি পড়তেন। তার লেখাপড়ার ব্যাকগ্রাউন্ড ছিল জেনারেল (স্কুল-কলেজ)।’