সিলেটের গোয়াইনঘাটে ঘরে ঢুকে তিনজনকে কুপিয়ে হত্যার কোনো কারণ এখনও উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ।
খুব শিগগিরই ক্লু পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
ঘটনাটি ঘটেছে গোয়াইনঘাটের দিনমজুর হিফজুর রহমানের বসতঘরে। মায়ের পারিবারিক সূত্রে পাওয়া জমিতে ঘর তুলে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে তার বসবাস। সে ঘরেই মঙ্গলবার রাতে দুর্বৃত্তের হামলায় তিনি হারান স্ত্রী-সন্তানদের। নিজেও আহত হয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের বিন্নাকান্দি দক্ষিণপাড়া গ্রামের ওই বাড়িতে বুধবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায় উৎসুক জনতার ভিড়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘিরে রেখেছেন, ঘুরে দেখছেন বাড়ি। খুঁজছেন হত্যাকাণ্ডের আলামত। ঘরে মাটির মেঝেজুড়ে রক্ত।
ঘর বলতে খুপড়ির মতো একটা থাকার জায়গা। বাঁশের নড়বড়ে খুঁটির ওপর টিনের চালা। ঘরে আসবাব বলতেও তেমন কিছু নেই। দুটি বিছানা আর তার ওপর পুরোনো, ধুলো জমা তোশক-চাদর। বাসনপত্র রাখার জন্য উনুনের পাশে প্লাস্টিকের র্যাক আছে একটি। আছে দুটি ট্যাংক ও একটি আলনা। দেখে বোঝাই যায়, পরিবারটি ছিল হতদরিদ্র।
হিফজুরদের প্রতিবেশী, স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হিফুজর তার মামার বাড়িতে ঘর বানিয়ে থাকেন। তার বাড়ি পাশের গ্রামে। তার কোনো শত্রু আছে বলে আমার জানা নেই। কারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তা বুঝতে পারছি না। আমি এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।’
তার ও আশপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মামার বাড়িতে এই জমিটুকু পেয়েছেন হাফিজুর। সেখানে কোনোরকমে মাটির ঘরটি তুলেছেন।
গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আহাদ বলেন, দুর্বৃত্তরা হিফজুরদের ঘরে ঢুকে তাদের বটি দিয়েই সবাইকে কুপিয়েছে। ঘর থেকেই রক্তমাখা সেই বটি জব্দ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা অনেকগুলো মোটিভ নিয়ে কাজ করছি। তবে এটি ডাকাতির কোনো ঘটনা নয়। হিফজুররা একেবারেই দরিদ্র। তা ছাড়া ঘরের কোনো জিনিসপত্র খোয়াও যায়নি।’
ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) ফরিদ উদ্দিন আহমদ।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, কী কারণে হত্যা করা হয়েছে তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে জমিসংক্রান্ত কোনো বিরোধ রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘হিফজুর কিছুটা সুস্থ হলে তার সঙ্গে কথা বলা হবে। পুলিশ আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা ক্লু পাব।’
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পুলিশের সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মফিজ উদ্দিন আহম্মদও।
ওই ঘরে মঙ্গলবার রাতের কোনো এক সময় দুর্বৃত্তের হামলায় নিহত হন হিফজুরের স্ত্রী আলিমা বেগম, তাদের ছেলে ১০ বছরের মিজান ও মেয়ে তিন বছরের তানিশা।
স্থানীয় লোকজন জানান, বুধবার সকালে অনেক বেলা পর্যন্ত ঘুম থেকে উঠছিলেন না হিফজুরের পরিবারের সদস্যরা। তাতে সন্দেহ হওয়ায় প্রতিবেশীরা হিফজুরের ঘরের সামনে যান। এ সময় ভেতর থেকে কান্নার শব্দ শুনে দরজায় ধাক্কা দেন তারা।
প্রতিবেশীরা জানান, দরজার সিটকিনি খোলাই ছিল। ভেতরে গিয়েই খাটের ওপর আলিমা ও তার দুই সন্তানের রক্তাক্ত মরদেহ দেখেন তারা। হিফজুর আহত অবস্থায় গোঙাচ্ছিলেন।
প্রতিবেশীরাই পুলিশে খবর দেন। গোয়াইনঘাট থানার এসআই মো. মহসিনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে।
আহত অবস্থায় হিফজুরকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।