রংপুরের মিঠাপুকুরে সোনালী ব্যাংকের পাশে খোঁড়া সুড়ঙ্গ পাওয়ার ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
জায়গীরগাট এলাকায় ব্যাংকের ওই শাখা মঙ্গলবার সকালে পরিদর্শন করেন জিএম রশিদুল ইসলাম ও ডিজিএম আব্দুল বারেক চৌধুরী এবং পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
কীভাবে এত বড় ঘটনা ঘটল, কারা ঘটাল, তা উদঘাটনে কাজ চলছে বলে জানিয়েছে জেলা পুলিশ।
পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় সোমবার রাত দেড়টার দিকে মিঠাপুকুর থানায় একটি জিডি করেন ব্যাংকের এই শাখার ম্যানেজার সামিউল হাসান।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঘটনাটি ব্যাংকের পাশের একটি মাদ্রাসায়। আমাদের সীমানা পর্যন্ত ওই সুড়ঙ্গ আসেনি। যেহেতু ব্যাংক ছাড়া এখানে বড় কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান নেই, তাই আমরা একটা জিডি করেছি।
‘আমরা ব্যক্তিগতভাবে নিরাপত্তা বাড়িয়েছি। ব্যাংকের চারপাশে বিদ্যুতের লাইট দেয়া হয়েছে।’
শামিউল হাসান আরও বলেন, ‘এটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। আমরা পুলিশকে জানিয়েছি, তারা নিরাপত্তার বিষয়টি দেখবে। পুলিশি টহল বাড়ানো হবে বলে জানানো হয়েছে।’
মিঠাপুকুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) জাকির হোসেন বলেন, ‘ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছে এসেছে। তারা জিডি করেছে। আমরা বলেছি, ব্যাংকটির চারপাশে লাইন ও তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা জোরদার করতে। আর আমরা আমাদের পক্ষ থেকে যে নিরাপত্তা দেয়ার কথা বা পুলিশি টহল বাড়ানো প্রয়োজন সেটি করা হবে।’
রংপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সকালে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছি। তিন-চার ফুট সুড়ঙ্গ যেভাবে খোঁড়া হয়েছে তাতে আমরা ধারণা করতে পারি, চক্রটি ব্যাংক পর্যন্ত হয়তো যেত। কিন্তু তার আগেই ব্যাপারটি প্রকাশ পেয়েছে। কারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, কেন করেছে, তা খুঁজে বের করতে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ শুরু করেছি।’
ব্যাংকটি ডিজিএম আব্দুল বারেক চৌধুরী বলেন, ‘প্রশাসন এসেছে আমরাও গিয়েছি। আমরা এ বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন করেছি।’
- আরও পড়ুন: সুড়ঙ্গ খুঁড়ে ব্যাংক ডাকাতির চেষ্টা!
ওসি জাকির হোসেন জানান, ওই ব্যাংকের অদূরে ফখরুল উলুম সিনিয়র মাদ্রাসা। সেই মাদ্রাসার একটি কক্ষে কে বাবা কারা একটি বড় গর্ত খুঁড়ে, যা কিনা সুড়ঙ্গ আকৃতির।
ওসি বলেন, যেখানে সুড়ঙ্গটি খোঁড়া হয়েছে তার পাশে বড় পাকা রাস্তা আছে। সেই রাস্তার পরই একটি সেপটিক ট্যাংক, তারপরে ব্যাংকটি। করোনার কারণে মাদ্রাসাটি বন্ধ রয়েছে। স্থানীয় ছেলেরা ওই মাদ্রাসার মাঠে ফুটবল খেলছিল। একপর্যায়ে ফুটবলটি সেখানে যায়। ওই ফুটবল আনতে যায় এক কিশোর। সে সুড়ঙ্গটি দেখতে পায়। পরে সে তার বাবাকে বিষয়টি জানায়।
ওসি বলেন, ‘ওই কিশোরের বাবা সন্ধ্যায় বাজারে এসে ঘটনাটি বলেন। এরপর স্থানীয় লোকজন সেটি দেখতে যান। আমরা খবর পেয়ে সেখানে যাই এবং ব্যাংকের ম্যানেজার সামিউল ইসলামও ঘটনাস্থলে আসেন। আমরা সুড়ঙ্গটি দেখি। এটা খুঁড়ে ব্যাংক পর্যন্ত যেতে পারলে হয়তো একটা বড় ধরনের ডাকাতির ঘটনা ঘটত।’
ব্যাংকটির ম্যানেজার সামিউল ইসলামের বরাত দিয়ে ওসি জাকির বলেন, সুড়ঙ্গ আবিষ্কারের পর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সেখানে নিরাপত্তা জোরদার করেছে।
মাদ্রাসাটির সভাপতি এনামুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের মাদ্রাসা দেড় বছর ধরে বন্ধ। মূল গেটও বন্ধ থাকে। কিন্তু মাদ্রাসার পূর্ব পাশে একটি রুম আছে সেখানে কাঠসহ কিছু জিনিস আছে। ওই রুমেই এই সুড়ঙ্গ খোঁড়া হয়েছে। আমরা ধারণা করছি, যারা এটি করেছে তারা হয়তো ব্যাংক ডাকাতির উদ্দেশ্যে করেছে।’
প্রায় দশ বছর আগে নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জে সোনালী ব্যাংক শাখায় ডাকাতি করার জন্য সুরঙ্গ খোঁড়া হয়েছিল। কিন্তু সে ডকাতি সফল হয়নি বলে জানান ব্যাংকটির ডিজিএম।