কুষ্টিয়ায় প্রকাশ্য রাস্তায় স্ত্রী ও আগের ঘরের শিশুসন্তানসহ তিনজনকে গুলি করে হত্যায় অভিযুক্ত পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সৌমেন রায় ছুটি বা অনুমতি না নিয়েই গিয়েছিলেন কুষ্টিয়াতে।
সৌমেনের গুলিতে নিহত হন তার দ্বিতীয় স্ত্রী আসমা আক্তার, আগের ঘরের সন্তান রবিন ও স্থানীয় বিকাশকর্মী শাকিল।
সৌমেন এর কুষ্টিয়া যাওয়ার বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কর্মস্থলের কেউ জানত না জানিয়েছেন খুলনার পুলিশ সুপার মাহাবুব হাসান। তিনি বলেন, তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
তার বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলা করেছেন নিহত শাকিলের বাবা মেজবার রহমান।
মাহাবুব হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সৌমেন এখানের রেগুলার দায়িত্বে ছিল। এখানেই বাসা নিয়ে থাকত। তিনি বিনা অনুমতিতে ও কাউকে না জানিয়েই কুষ্টিয়াতে গিয়েছে। কোনো ছুটি বা অনুমতি নেয়নি। এটার জন্য সৌমেন দায়বদ্ধ।’
মাহাবুব বলেন, ‘বাকি যে পুরো ব্যাপার আছে এটি ব্যক্তিগত বলা যায়। আমরা তদন্ত করছি। আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। যথাযথ বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তাকে সাস্পেন্ড করা করা হয়েছে। আমরা একটা কমিটিও গঠন করেছি। আমাদের বিধি মোতাবেক যে ব্যবস্থা নেয়ার সেটি আমরা নিচ্ছি।’
কুষ্টিয়া শহরের কাস্টমস মোড়ে রোববার ১১টার দিকে তিন খুনের ঘটনা ঘটে। গুলি চালানো সৌমেনকে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এএসআই সৌমেন খুলনার ফুলতলা থানায় কর্মরত।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আসমা তার শিশুসন্তানকে নিয়ে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের কাস্টম মোড়ে তিনতলা একটি ভবনের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। তার সঙ্গে ছিলেন বিকাশকর্মী শাকিলও। হঠাৎ সেখানে পৌঁছে সৌমেন পিস্তল বের করে আসমার মাথায় গুলি করেন। পাশে থাকা শাকিলের মাথায়ও গুলি করেন তিনি। আসমার ছেলে রবিন পালাতে গেলে তাকে ধরে মাথায় গুলি করা হয়।
পুলিশ জানায়, এএসআই সৌমেনের সঙ্গে কয়েক বছর আগে আসমার পরিচয় ও প্রেমের সম্পর্ক হয়। এরপর তারা বিয়ে করেন। তবে ধর্মীয় কারণে এই সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছিল। সম্প্রতি সৌমেন পরিবারের ইচ্ছায় আরেকটি বিয়ে করেন। এর আগে কুষ্টিয়া থেকে বদলি হয়ে তিনি খুলনার ফুলবাড়িয়ায় চলে যান।
ব্যক্তিগত বিষয় খতিয়ে দেখার বিষয়ে পুলিশ সুপার জানান, আসলে এটা এখনি বলাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। তবে এতটুকু বলা যেতে পারে যেটি আপনারাও বিভিন্ন মাধ্যমে জেনেছেন বিয়ে বর্হিভূত ব্যপারও আছে। আবার দুইটা পরিবারের বিষয়ও আছে। আসলে আমাদের সামাজিক একটা বড় ধরনের অবক্ষয় হয়েছে। ওই জায়গা থেকেই তিনি মানসিকভাবে ট্রমাটাইজড হয়ে গিয়েছিল।
তিনি বলেন, ‘তার সঙ্গে যারা ডিউটি করে এমন অনেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করছি। তবে আমরা অধিকতর তদন্তে এই বিষয়গুলো আস্তে আস্তে জানাতে পারব। এখন এটা প্রোপার সময় নয়।’
তবে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) খায়রুল আলম সাংবাদিকদের জানান, শাকিলের সঙ্গে আসমার বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্কের জেরে এই হত্যা ঘটেছে। হত্যায় ব্যবহৃত পিস্তলটি জব্দ করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুষ্টিয়া জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার একজন কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এএসআই সৌমেন গুলি চালানোর কথা স্বীকার করেছেন। তবে এর কারণ সম্পর্কে পরিষ্কার তথ্য এখনও দেননি।