কার্টুনিস্ট আহমেদ কবীর কিশোরকে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে নির্যাতনের কোনো চিহ্ন পায়নি তার শারীরিক পরীক্ষার জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড। আদালতে বোর্ডের প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে।
বিষয়টি রোববার নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল। তিনি বলেন, ‘মেডিক্যাল রিপোর্ট জমা হওয়ার কথা শুনেছি। তবে সেই রিপোর্টে কী আছে আমি তা দেখিনি, তাই বলতেও পারছি না।’
তবে প্রতিবেদনটি নিউজবাংলাকে পড়ে শুনিয়েছে আদালতের একটি সূত্র। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, তার (কিশোর) শরীরে নির্যাতনের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে এ বিষয়ে অধিক নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরও ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যেতে পারে।
গত ১০ মার্চ নির্যাতনের অভিযোগে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন আহমেদ কবির কিশোর। মামলাটিতে ২০১৩ সালের নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনে অভিযোগ আনা হয়।
ওই দিনই আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল জানিয়েছিলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন মামলায় অভিযোগ করেছেন কিশোর। তবে মামলার আবেদনে আসামি হিসেবে কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি।
আদালতের নির্দেশে গত ১৬ মার্চ কিশোরের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তিন সদস্যের একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।
বোর্ডের সদস্যরা হলেন ঢাকা মেডিক্যালের নাক, কান ও গলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক শেখ নুরুল ফাত্তাহ রুমি (প্রধান), মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক হাফিজ সরদার এবং অর্থোপেডিক ও টমাটলোজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফখরুল আমিন খান।
এই মেডিক্যাল বোর্ড কিশোরের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে গত ২০ মার্চ আদালতের সংশ্লিষ্ট শাখায় প্রতিবেদনটি জমা দেয়। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় তা উপস্থাপন করা হয়নি।
আইনজীবী তাপস কুমার পাল নিউজবাংলাকে জানান, আদালতের নিয়মিত কার্যক্রম শুরু হলে প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হবে। এরপর আদালত এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশ দেবে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, মেডিক্যাল রিপোর্ট দেয়া হলেও পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদন এখনো আদালতে জমা দেয় হয়নি।
কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, লেখক মুশতাক আহমেদসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে গত বছরের মে মাসে রমনা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে র্যাব। এ মামলায় ২০২০ সালের ৬ মে দুজনকেই গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে কারাবন্দি অবস্থায় গত ২৫ ফেব্রুয়ারি লেখক মুশতাকের মৃত্যু হয়।
এই মামলার অন্য ৯ আসামি হলেন রাজনৈতিক সংগঠন রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য দিদারুল ইসলাম ভূঁইয়া, নেত্র নিউজের এডিটর-ইন-চিফ তাসনিম খলিল, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নান, যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী সাংবাদিক শাহেদ আলম, জার্মানিপ্রবাসী ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন, হাঙ্গেরিপ্রবাসী জুলকারনাইন সায়ের খান (সামি), আশিক ইমরান, স্বপন ওয়াহিদ ও ফিলিপ শুমাখার। অজ্ঞাত আসামি আরও পাঁচ-ছয়জন।
এই মামলায় গত ১৩ জানুয়ারি কার্টুনিস্ট কিশোর, রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য দিদারুল ভূঁইয়া ও লেখক মুশতাক আহমেদকে অভিযুক্ত করে এই মামলায় অভিযোগপত্র দেয় রমনা থানার পুলিশ।
যেখানে জুলকারনাইন খান ওরফে সামিসহ অন্য আটজনকে অব্যাহতির আবেদন করা হয়। অব্যাহতির সুপারিশপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক মিনহাজ মান্নান, জার্মানপ্রবাসী ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন, নেত্র নিউজের সম্পাদক ও সুইডেনপ্রবাসী তাসনিম খলিল, হাঙ্গেরিপ্রবাসী জুলকারনাইন শায়ের খান ওরফে সামি, আশিক ইমরান, স্বপন ওয়াহিদ, যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী সাংবাদিক সাহেদ আলম ও ফিলিপ শুমাখার।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা ‘আই এম বাংলাদেশি’ নামে ফেসবুক পেজে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি বা সুনাম ক্ষুণ্ণ করতে বা বিভ্রান্তি ছড়ানোর উদ্দেশ্যে অপপ্রচার বা গুজবসহ বিভিন্ন ধরনের পোস্ট দিয়েছেন। যা জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটায়।
জুলকারনাইন, আমি কিশোর, আশিক ইমরান, ফিলিপ সমাচার, স্বপন ওয়াহিদ, মোস্তাক আহম্মেদ নামীয় ফেসবুক আইডিসহ পাঁচজন এডিটর পরস্পর যোগসাজশে ফেসবুক পেজটি দীর্ঘদিন ধরে পরিচালনা করছেন।
আহমেদ কবীর কিশোর, তাসনিম খলিল, জুলকারনাইন, শাহেদ আলম ও আসিফ মহিউদ্দিনের মধ্যে ‘রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক চ্যাটিং’-এর প্রমাণ পাওয়া গেছে উল্লেখ করে এজাহারে বলা হয়েছে, ‘তাদের ব্যবহৃত স্যামসাং মোবাইল ফোনে ‘আমি কিশোর’ ফেসবুক অ্যাকাউন্ট লগইন অবস্থায় পাওয়া যায়। আলামত পর্যালোচনা করে রাষ্ট্রবিরোধী পোস্ট, করোনাভাইরাস মহামারি, সরকারদলীয় বিভিন্ন নেতার কার্টুন দিয়ে গুজব ছড়িয়ে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টির প্রমাণ পাওয়া যায়।
এ ছাড়া হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুক মেসেঞ্জারে তাসনিম খলিল, শায়ের জুলকারনাইন, শাহেদ আলম, আসিফ মহিউদ্দিনের সঙ্গে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক চ্যাটিংয়ের প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে মামলার এজাহারে বলা হয়।
কিশোরকে ২০২০ সালের ২ মে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা। ৫ মে এই মামলা হয় এবং সেদিনই তাকে র্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সেই থেকে ১০ মাস কারাভোগের পর হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়ে চলতি বছর ৪ মার্চ কিশোর মুক্তি পান।