বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘অন্ধকার জগতে’ নামাতেই সেই তরুণীর ওপর নির্যাতন

  •    
  • ২৮ মে, ২০২১ ১৩:০৮

হাতিরঝিল থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে জানান, কয়েক মাস ধরে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় মেয়েটিকে শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতন করা হয়। যৌনপল্লিতে দৈহিক ব্যবসায় বাধ্য করতেই তার ওপর নৃশংস যৌন নির্যাতন চালানো হয়। শুধু তাই নয়, নির্যাতনের ঘটনাটির ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে মেয়েটিকে স্থায়ীভাবে অন্ধকার জগতে বন্দি করার মতলব ছিল অপরাধীদের।

ভারতের কেরালায় নৃশংস যৌন নির্যাতনের শিকার বাংলাদেশি সেই তরুণীকে আন্তর্জাতিক পাচারকারীদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছিলেন মগবাজারের রিফাদুল হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয়। পরবর্তীতে যৌনপল্লিতে দেহ বিক্রিতে বাধ্য করতে মেয়েটির ওপর চালানো হয় পৈশাচিক নির্যাতন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা, মেয়েটির স্বজন ও বেঙ্গালুরু সিটি পুলিশ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

তারা জানান, ঢাকার মগবাজার থেকে প্রায় ১৫ মাস আগে ২২ বছর বয়সী ওই তরুণী নিখোঁজ হন। তার পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজি করে কোনো সন্ধান পাননি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সম্প্রতি এক তরুণীর ওপর নৃশংস নির্যাতনের ভাইরাল হওয়া ভিডিওর সূত্র ধরে তেজগাঁও বিভাগের পুলিশ তরুণীকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। উদঘাটন করা হয় নির্যাতনকারী বাংলাদেশি যুবকের পরিচয়।

খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার ভারতের বেঙ্গালুরু সিটি পুলিশ বেঙ্গালুরুর বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে বাংলাদেশি নাগরিক টিকটক হৃদয়সহ আরও চার জনকে গ্রেপ্তার করে। ভারতীয় পুলিশের বরাতে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেন তেজগাঁও বিভাগের উপ পুলিশ কমিশনার মো. শহিদুল্লাহ।

তিনি জানান, মেয়েটিকে দুবাইয়ে চাকরি দেয়ার কথা বলে ভারতে পাচার করা হয়। এই পাচারে বাংলাদেশ ও ভারতের সংঘবদ্ধ চক্র রয়েছে, যাদের অধিকাংশই ভারতীয় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে। এখন হাতিরঝিল থানায় মেয়েটির বাবার করা মামলার তদন্তের স্বার্থে গ্রেপ্তার হওয়া সবাইকে দেশে ফিরিয়ে আনা চেষ্টা চলছে।

মেয়েটির স্বজনরা জানান, প্রায় চার বছর ধরে ভিকটিম তরুণীর বাবা মগবাজার ফুটপাথে জুসের ব্যবসা করেন। তার দুই মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে ভিকটিম মেয়েটি সবার বড়।

প্রায় ছয় বছর আগে চাঁদপুরের এক ছেলের সঙ্গে মেয়েটির বিয়ে হয়। পরবর্তীতে তাদের ঘরে এক মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়। বছর তিনেক আগে মেয়েটির স্বামী কুয়েত চলে যান। এরপরই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শ্বশুড়বাড়ির লোকজনের সঙ্গে মেয়েটির কলহ শুরু হয়। কথায় কথায় নির্যাতনের শিকার হন। বছর দেড়েক আগে শ্বশুড়বাড়ির নির্যাতন সইতে না পেরে বাবার কাছে চলে যান।

এসময় মগবাজারের রিফাদুল হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয় বাবুর নজরে পড়েন। তারই প্ররোচনা ও প্রলোভনের ফাঁদে পড়ে দুবাই যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন। স্বামী ও শ্বশুড়বাড়ির নিগ্রহের কারণে স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ খুঁজতে থাকেন।

মেয়েটির বাবা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মেয়ে আমাকে বলেছিল, হৃদয়ের দুবাই পাঠানোর লাইন আছে। তার মাধ্যমে সে চাকরির জন্য যেতে চায়। আমি নিষেধ করেছিলাম। এর কয়েকদিন পর মেয়েটি নিখোঁজ হয়ে যায়।’

তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাফিজ আল ফারুক জানান, ভারতের কেরালায় বাংলাদেশি তরুণীর ওপর নৃশংস যৌন সহিংসতার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর বাংলাদেশ ও ভারতের পুলিশ ঘটনার তদন্তে তৎপর হয়। অল্প সময়ের মধ্যেই ভিকটিম ও নির্যাতনকারীদের শনাক্ত এবং গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। এখন অধিকতর তদন্তে প্রকৃত বিষয় উদঘাটন করা হবে। কারা, কী উদ্দেশ্যে পাচার করছিল, কেন নির্যাতন করেছিল সবই জানার চেষ্টা চলছে।

হাতিরঝিল থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে জানান, কয়েক মাস ধরে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় মেয়েটিকে শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতন করা হয়। যৌনপল্লিতে দৈহিক ব্যবসায় বাধ্য করতেই তার ওপর নৃশংস যৌন নির্যাতন চালানো হয়। শুধু তাই নয়, নির্যাতনের ঘটনাটির ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে মেয়েটিকে স্থায়ীভাবে অন্ধকার জগতে বন্দি করার মতলব ছিল অপরাধীদের।

বৃহস্পতিবার রাতে হাতিরঝিল থানায় মেয়েটির বাবার করা নারী নির্যাতন ও পর্নগ্রাফি আইনের মামলার এজাহারে উল্লেখ করে বলেন, ‘মগবাজারের রিফাদুল ইসলাম হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয় বাবু আমার মেয়েকে ফুসলিয়ে দুবাই নিয়ে যাওয়ার কথা বলে আন্তর্জাতিক পাচারকারীদের কাছে বিক্রির চেষ্টা করে।’

এজাহারে মেয়েটির বাবা আরও বলেন, ‘ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে আমার মেয়েকে চিনতে পেরেছি। সেখানে দেখা গেছে, হৃদয়সহ অজ্ঞাতনামা এক মহিলা ও তিন পুরুষ মিলে আমার মেয়েকে বিবস্ত্র করে শারিরীক আঘাত ও যৌন নীপিড়ন করে। এসময় আমার মেয়ে চিৎকার করছে আর আসামিরা উচ্চ স্বরে গান বাজিয়ে আনন্দ করছে।’

এ বিভাগের আরো খবর