খুলনা পিটিআই কোয়ারেন্টিন সেন্টারে ‘ধর্ষণের শিকার’ সেই নারী মঙ্গলবার রাতে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক হেলাল হোসেন।
তিনি জানান, ওই নারীকে দেখভালের জন্য নারী পুলিশ সদস্য নিয়োজিত করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ডাক্তারি পরীক্ষার পর ওই নারীকে মঙ্গলবার বিকেলে কোয়ারেন্টিন সেন্টারে পাঠানো হয়। তখন তিনি তাকে ছেড়ে দেয়ার দাবি জানান। তবে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন শেষ না হওয়ায় কেউ তাতে রাজি হননি।
এরপর রাত সাড়ে ৮টার দিকে তিনি ঘরের দরজা বন্ধ করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। এ সময় ওই সেন্টারে থাকা অন্য নারী ও নারী পুলিশ সদস্যরা তাকে রক্ষা করেন।
এ ঘটনার পর জেলা প্রশাসন, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর এবং পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেন্টারে যান।
খুলনার জেলা প্রশাসক হেলাল হোসেন বলেন, ‘মঙ্গলবার ওই নারীর কোয়ারিন্টিনের ১৪তম দিন চলে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ১৪তম দিনে তার কোভিড পরীক্ষা করা হয়েছে। ১৫তম দিনে ফলাফল নেগেটিভ আসলে তাকে ছাড়পত্র দেয়া হবে।’
ভারতে করোনার নতুন ধরন ছড়িয়ে পড়ার পর গত ২৬ এপ্রিল থেকে সীমান্ত বন্ধ রয়েছে। তবে ভারতে গিয়ে আটকে পড়া বাংলাদেশিরা বিশেষ অনুমতি নিয়ে ফিরতে পারছেন। এ ক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে দেশে করতে হবে করোনা পরীক্ষা। নেগেটিভ হলেও সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৪ দিন থাকতে হবে কোয়ারেন্টিনে।
খুলনা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেল থেকে পাঠানো এক বার্তায় সোমবার জানানো হয়, ভারত থেকে এসে খুলনায় কোয়ারেন্টিনে থাকা ওই তরুণীকে এএসআই মোকলেছুর রহমান ধর্ষণ করেছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণ মিলেছে। এর পরপরই মোকলেছুরকে বরখাস্ত করা হয়। গ্রেপ্তারের পর আদালতের মাধ্যমে তাকে পাঠানো হয় কারাগারে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মোকলেছুর রহমান। ছবি: নিউজবাংলা
মোকলেছুর খুলনা মহানগর পুলিশের (কেএমপি) সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) হিসেবে কর্মরত। তিনি খুলনার পিটিআই কোয়ারেন্টিন সেন্টারে গত ১ মে থেকে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তার বাড়ি যশোর সদরের দৌলদিহি এলাকায়।
খুলনা মেডিক্যালে থাকার সময় ওই তরুণী নিউজবাংলাকে ফোনে বলেন, ‘আমার দুটি সন্তান রয়েছে। এ ঘটনায় আমি সামাজিকভাবে হেয় হয়েছি। আমার সঙ্গে যা হয়েছে তা যেন অন্য কোনো নারীর সঙ্গে না হয়। আমি আসামির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’
খুলনা সদর থানায় সোমবার এএসআই মোকলেছুরের নামে মামলা করেন ওই তরুণী।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) আবু সাইদ বলেন, ‘এএসআই মোকলেছুরকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তরুণীর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। আমরা ছেলে-মেয়ে উভয়ের ডিএনএ টেস্ট করাব। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।’
কেএমপি থেকে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘প্রাইমারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের (পিটিআই) মহিলা হোস্টেলে ভারতফেরত বাংলাদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিলেন মোকলেছুর। ডিউটিতে থাকাকালে তিনি নিচতলা থেকে দ্বিতীয় তলায় কোয়ারেন্টিনে থাকা তরুণীর কক্ষে বিনা অনুমতিতে ঢুকে তাকে ধর্ষণ করেন।
‘শনিবার রাতে আবার কক্ষে ঢুকে ধর্ষণচেষ্টার সময় তরুণী চিৎকার করলে আসামি দ্রুত চলে যান। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আসলে সত্যতা যাচাইয়ের জন্য প্রাথমিক অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধানে সত্যতা মিললে মোকলেছুরকে বরখাস্ত করা হয়।’
খুলনার অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) সোনালী সেন নিউজবাংলাকে জানান, মোকলেছুরকে বরখাস্ত করে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।