সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আকতার চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন, নাকি তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে- সেই প্রশ্নের উত্তর পেতে আদালতে গেছে চট্টগ্রাম কারা কর্তৃপক্ষ। এতে ঝুলে গেছে মিতু হত্যা মামলায় তার ডিভিশন পাওয়ার বিষয়টি। কারাগারে সাধারণ বন্দিদের সঙ্গে থাকছেন মিতুর স্বামী বাবুল।
সাবেক এসপির সরকারি চাকরির সবশেষ অবস্থা জানতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চেয়ে মঙ্গলবার আদালতে আবেদন করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. শফিকুল ইসলাম খান নিউজবাংলাকে এই তথ্য জানিয়েছেন।
নিউজবাংলাকে মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে তিনি বলেন, ‘জেল কোড অনুযায়ী বাবুল আকতারকে ডিভিশন দিতে আদালতের নির্দেশনা পেয়েছি। তবে আমরা জানি, সরকার বাবুলকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। যদি অব্যাহতি দেয়া হয় তাহলে তিনি ডিভিশন সুবিধা পাবেন না।
‘আর যদি তিনি স্বেচ্ছায় চাকরি থেকে ইস্তফা দেন এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে চাকরি থেকে অব্যাহতি পান হন, তাহলে ডিভিশন সুবিধা পাবেন। তার চাকরির বিষয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে।‘
বাবুল আকতারের আইনজীবী আরিফুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মঙ্গলবার বিকেল চারটার দিকে কারা কর্তৃপক্ষ আদালতে একটি আবেদনপত্র জমা দিয়েছে। সেখানে বাবুল আকতার চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন, নাকি তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে সেই বিষয়ে কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে। তার চাকরি থেকে ইস্তফা এবং অব্যাহতির কাগজপত্র নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। আমরা সেটি নিয়ে কাজ করছি।’
চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ে ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে গুলি ও ছুরিকাঘাতে নিহত হন তৎকালীন পুলিশ সুপার বাবুল আকতারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। সে সময় ঢাকায় ছিলেন বাবুল আকতার।
হত্যার পর চট্টগ্রামে ফিরে পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে তিনি মামলা করেন। মামলায় অভিযোগ করেন, তার জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমের জন্য স্ত্রীকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে।
এ মামলায় সে বছরের ২৬ জুন মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম ও মো. আনোয়ার নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এরপর এই হত্যায় বাবুলের সম্পৃক্ততা নিয়ে গণমাধ্যমে নানা তথ্য উঠে আসে। তবে তদন্ত আর আগায়নি। একপর্যায়ে বাবুল পুলিশের চাকরি থেকে অব্যাহতি নেন। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই অব্যাহতি নিতে তাকে বাধ্য করা হয়।
বাবুল দোষী হলে তাকে গ্রেপ্তার না করে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়ার বিষয়টি নিয়ে সে সময়ই প্রশ্ন উঠে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা আর দেয়া হয়নি।
তবে পাঁচ বছর পর এবার ঈদের আগে চমক দেখায় পুলিশের তদন্ত সংস্থা পিবিআই। হঠাৎ বাবুলকে ঢাকা থেকে ডেকে নেয়া হয় চট্টগ্রাম। মিতুর বাবাকেও নেয়া হয়।
পিবিআই বাবুলের করা মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। এর পরেই বাবুলকে আসামি করে মামলা করেন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন।
১২ মে পাঁচলাইশ থানায় করা মামলায় বলা হয়, বিয়েবহির্ভূত সম্পর্কের জেরে মিতুকে হত্যা করা হয়েছে।
সেদিনই বাবুলকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে তোলা হলে বিচারক তাকে রিমান্ডে পাঠান।
পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে সোমবার দুপুরে আড়াইটার দিকে মহানগর হাকিম সরোয়ার জাহানের আদালতে বাবুলকে তোলা হয়। তাকে ম্যাজিস্ট্রেটের খাস কামরায় নেয়া হয় ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণে। তবে তিনি জবানবন্দি দেবেন না বলে জানান।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার (প্রসিকিউশন) কাজী শাহাব উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, জবানবন্দি দেয়ার জন্য বাবুল আকতারকে সরাসরি বিচারকের খাস কামরায় নেয়া হয়েছিল। সেখানে তিনি চার ঘণ্টা অবস্থান করেছেন। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি জবানবন্দি দিতে রাজি হননি। এরপর আমরা কোনো রিমান্ডের আবেদন করিনি। পরবর্তীতে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে তাকে ডিভিশন দেয়ার নির্দেশ দেন বিচারক।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার (প্রসিকিউশন) কাজী শাহাব উদ্দিন বলেন, ডিভিশন-১ পাওয়ার জন্য বাবুল আকতারের আইনজীবীরা কোর্টে প্রেয়ার (আবেদন) করেছিল। পরে আদালত কারাবিধি অনুযায়ী ডিভিশন দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।