মিতু হত্যায় সরাসরি অংশ নেয়া কামরুল ইসলাম মুসাকে নিজের সোর্স হিসেবে স্বীকার করেছেন সাবেক এসপি বাবুল আকতার। স্ত্রীকে হত্যার মামলায় গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে তিনি এই স্বীকারোক্তি দেন বলে জানিয়েছে তদন্তকারি সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগশেন (পিবিআই)।
তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা সোমবার নিউজবাংলাকে একথা জানিয়েছেন।
বাবুল আকতারকে গ্রেপ্তারে পর গত ১২ মে সকালে সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার অভিযোগ করেছিলেন, জিজ্ঞাসাবাদে সোর্স মুসাকে চেনেন না বলে জানিয়েছিলেন বাবুল।
বনজ বলেন, ‘মিতু হত্যার পর উদ্ধার হওয়া ভিডিও ফুটেজে আমরা একজনকে দেখেছিলাম। তার নাম কামরুল ইসলাম মুসা। মুসা এখনও নিখোঁজ। আমরা জেনেছি মুসা নিয়মিত বাবুল আকতারের বাসায় যাতায়াত করতেন। বাবুলের বাসায় মুসা বাজারও করে দিতেন। মুসাকে শুধু বাবুল আকতারই চিনতেন।
‘ভিডিও ফুটেজে স্পষ্ট এই মুসাকে চেনা গেছে, কিন্তু তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদে বাবুল আকতার মুসাকে চেনেন না বলে জানিয়েছিলেন। সেখান থেকে সন্দেহ হলে বিশদ তদন্ত শুরু করে পিবিআই। পরে আমরা তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে নিশ্চিত হই, বাবুল ইচ্ছাকৃতভাবে তার ব্যক্তিগত সোর্স মুসাকে সন্দেহ করেনি বা সন্দেহজনক বলে পুলিশকে জানাননি।’
এর পাশাপাশি বাবুলের দুই বন্ধু মিতু হত্যায় বাবুলের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা হলেন গাজী আল মামুন ও সাইফুল হক।
ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ে ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে গুলি ও ছুরিকাঘাতে নিহত হন তৎকালীন পুলিশ সুপার বাবুল আকতারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। সে সময় ঢাকায় ছিলেন বাবুল আকতার।
হত্যাকাণ্ডের পর চট্টগ্রামে ফিরে পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে তিনি মামলা করেন। মামলায় অভিযোগ করেন, তার জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমের জন্য স্ত্রীকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে।
এ মামলায় সে বছরের ২৬ জুন মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম ও মো. আনোয়ার নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ঘটনার পাঁচ বছর পর বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্কের জেরে মিতুকে হত্যার অভিযোগ তুলে তার বাবুল আকতারের বিরুদ্ধে গত ১২ মে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন। সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে সেদিনই বাবুলকে আদালতে তোলা হলে বিচারক তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠান।
ডিবি পরিচয়ে মুসাকে তুলে নেয়ার অভিযোগ
মিতু হত্যার পাঁচ বছরেও মামলার অন্যতম আসামি কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুসার কোনো সন্ধান জানাতে পারেনি পুলিশ।
মুসার স্ত্রীর অভিযোগ, মিতু হত্যার পর সে বছরের ২২ জুন মুসাকে ডিবি পরিচয়ে তুলে নেয়া হয়।
মিতু হত্যায় হওয়া নতুন মামলার দুই নম্বর আসামি এই মুসা।
বাবুল আকতার চট্টগ্রামে দায়িত্বে থাকা অবস্থায় মুসা তার সোর্স হিসেবে কাজ করতেন বলে জানিয়েছেন মুসার স্ত্রী পান্না আক্তার।
তিনি বলেন, ‘মিতু খুন হওয়ার পর আমরা আত্মগোপনে চলে যাই। মুসার একজন পরিচিত ড্রাইভার ছিল নুরুন্নবী নামে। নুরুন্নবীর এক আত্মীয়ের বাসা ছিল চট্টগ্রামের বন্দর কাঠঘর তিন রাস্তার মাথার কাছে। মুসা সারেন্ডার করতে চাইছিল ২১ তারিখ । ২২ তারিখ কোর্টে যাইবে। আমাদের বলছিল নুরুন্নবীর আত্মীয়ের বাসায় যাইতে। উনি সকালে আসবে বলছিল।
‘মুসা বাসায় আসার আগে ডিবির লোক আমাকে ও নুরুন্নবীকে একটা সাদা গাড়িতে করে নিয়ে যায়। আমাদের নিয়ে গাড়িটা দাঁড়ায় তিন রাস্তার মোড়ে। কিছুক্ষণ পর ওইখানে আসে মুসা। ও নুরুন্নবীর বাসা চিনতেছিল, এই কারণে রাস্তার পাশে দাঁড়াইয়া ছিল। এদিকে মুসা আসার পর নুরুন্নবীর কাছ থেকে ডিবি পুলিশ কনফার্ম হয় যে এটাই মুসা। এরপর মুসাকে ধরে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে একটি পিকআপে উঠিয়ে নিয়ে যায়। এরপর আর দেখা পাইনি মুসার।’
মুসার স্ত্রী পান্না আরও বলেন, ‘যারা মুসাকে তুলে নিছিল, তাদের আমি চিনতে পারছি। তাদের নামও আমি সংবাদ সম্মেলনে বলছিলাম। মাস খানেক আগে পিবিআইকেও বলছি। কিন্তু তারা বলছে, নেয়নি। আমার চোখের সামনে ওরা নিয়ে গিয়ে অস্বীকার করছে।’
পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার নিউজবাংলাকে বলেন, মুসা পলাতক। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
আট আসামির তিনজন পলাতক
গত ১২ মে মিতুর বাবার করা মামলায় বাবুল আকতরসহ আটজনকে আসামি করা হয়। তাদের মধ্যে মুসাসহ পলাতক রয়েছেন তিনজন। অন্য দুজন হলেন তিন নম্বর আসামি এহতেশামুল হক ওরফে হানিফুল হক ওরফে ভোলাইয়্যা এবং ছয় নম্বর আসামি খায়রুল ইসলাম ওরফে কালু ওরফে কসাই কালু।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমাও বলেন, মিতু হত্যার প্রথম মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তিনজন। তারা হলেন মোতালেব মিয়া অরফে ওয়াসিম, আনোয়ার হোসেন ও শাহজাহান মিয়া। আর নতুন মামলা হওয়ার পর বাবুল আকতার ও সাইদুল ইসলাম সিকদার গ্রেপ্তার হয়েছেন।
মুসাসহ পলাতক তিন আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানান সন্তোষ কুমার।