চট্টগ্রামে মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার আসামি সাইদুল ইসলাম সিকদার ওরফে সাকুকে রাঙ্গুনিয়া থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
রাঙ্গুনিয়ার রানীরহাট বাজার এলাকা থেকে বুধবার রাত ৮টার দিকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছেন র্যাব-৭-এর সহকারী পুলিশ সুপার (মিডিয়া) নুরুল আফসার।
এর আগে ২০১৬ সালের জুলাইয়ে সাইদুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এরপর তিনি জামিনে মুক্তি পান। তার বিরুদ্ধে মিতুকে হত্যার সময় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল সরবরাহের অভিযোগ রয়েছে।
চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় বুধবার দুপুরে বাবুল আকতারসহ আটজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন। এই মামলার ৭ নম্বর আসামি সাইদুল ইসলাম। মামলার ২ নম্বর আসামি কামরুল ইসলাম সিকদার ওরফে মুছার বড় ভাই তিনি।
মিতু হত্যার পর থেকেই নিখোঁজ বাবুল আকতারের সোর্স ও মামলার অন্যতম আসামি মুছা।
২০১৬ সালের ৪ জুলাই মুছার স্ত্রী পান্না আক্তার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেন, ‘২২ জুন নগরীর বন্দর থানা এলাকায় এক আত্মীয়ের বাসা থেকে পুলিশ মুছাকে ধরে নিয়ে যায়। তবে তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি অস্বীকার করে আসছে পুলিশ।’
বুধবার রাত সাড়ে ১১টার পান্না আক্তার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মুছাকে পুলিশ আমার সামনে থেকে গ্রেপ্তার করেছিল। এরপর থেকে তার খোঁজ মেলেনি। আজ রাতে গ্রামের বাড়ি রাঙ্গুনিয়া থেকে আমার ভাশুর সাকুকে র্যাব ধরে নিয়ে গেছে।’
পাঁচলাইশ থানায় মামলার পর মিতুর বাবা দাবি করেন, বাবুল আকতারের বিয়েবহির্ভূত সম্পর্কের জেরে মিতুকে হত্যা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বাবুল আকতার কক্সবাজার থাকার সময় ২০১৩ সাল থেকে পরকীয়ায় জড়িয়ে যায়। আমরা ওই নারীর নামও জানতে পেরেছি। এ নিয়ে পারিবারিক কলহ হয়। কলহের জেরে বাকি আসামিদের নিয়ে পরিকল্পিতভাবে সে তার স্ত্রীকে খুন করে।’
‘মিতু আমাদের পরকীয়ার কথা জানিয়েছিল। আমরা বাবুলের অবিভাবকদের জানিয়েছি। কিন্তু তারা কোনো অ্যাকশন নেয়নি।’
এতদিন পর কেন মামলা করা হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একই ঘটনায় দুইটা মামলা হয় না। যেহেতু এই মামলা শেষ হয়ে গেছে তাই আমি নতুন করে মামলা করছি। নয়তো পুলিশকে একটা মামলা করতে হতো। তারা করে নাই, আমি করছি।’
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাশেম ভূঁইয়া জানান, আলোচিত মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় তার স্বামী সাবেক এসপি বাবুল আকতারসহ আটজনকে আসামি করে মামলা হয়েছে।
মামলার তদন্ত সংস্থা পিবিআই জানায়, মিতু হত্যায় বাবুলের সম্পৃক্ততার বিষয়ে এরই মধ্যে তার দুই বন্ধু গাজী আল মামুন ও সাইফুল ইসলাম ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
আসামি সাইদুল ইসলাম সিকদারবাবুল আকতারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সোমবার ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে ডেকে নেয় পিবিআই। বাবুলের শ্বশুর মোশাররফ হোসেনকেও ডেকে নেয়া হয়েছে বন্দরনগরীতে।
২০১৬ সালের ৫ জুন ভোরে ছেলেকে স্কুলে পৌঁছে দিতে বের হওয়ার পর চট্টগ্রাম শহরের জিইসি মোড়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয় মিতুকে।
ঘটনার পর তৎকালীন এসপি বাবুল আকতার পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, তার জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমের জন্য স্ত্রীকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে।
তবে বাবুলের শ্বশুর সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন ও শাশুড়ি সাহেদা মোশাররফ এই হত্যার জন্য বাবুল আকতারকে দায়ী করে আসছিলেন।
শুরু থেকে চট্টগ্রামের ডিবি মামলাটির তদন্ত করে। পরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে আদালত মামলাটির তদন্তের ভার পিবিআইকে দেয়।