নারায়ণগঞ্জে রিসোর্টকাণ্ডের পর স্থানীয় আওয়ামী লীগ কার্যালয়, সরকার সমর্থকদের বাড়িঘর ও মহাসড়কে তাণ্ডবের ঘটনায় নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন হেফাজত নেতা মামুনুল হক। যা যা হয়েছে, তার সব ষড়যন্ত্র অভিযোগ করে তিনি এও বলেছেন, তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগগুলো সত্য নয়।
বুধবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আহমেদ হুমায়ুন কবীরের আদালতে পাঁচ মামলায় রিমান্ড আবেদনের শুনানি হয়। এই শুনানিতে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন মামুনুল হকও।
তিনি বলেন, ‘আমার নামে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সত্য নয়। সব ষড়যন্ত্র, আমি নির্দোষ।’
আদালতে তার পক্ষে শুনানি করা আইনজীবী ওমর ফারুক মিয়া জানান, মামুনুল হক আদালতে বলেছেন, যেদিন তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তার দুইদিন আগে তার সঙ্গে ঝর্ণার দেখা করেছেন। তখনও তিনি ঝর্ণাকে বলেছেন তারা স্বামী স্ত্রী। তারা তাদের মান অভিমান নিয়ে কথা বলেছেন।
এই আইনজীবী আদালতে বলেন, ‘মামুনুল হকের বিরুদ্ধে জান্নাত আরা ঝর্ণা ধষর্ণ মামলা করেছেন। মামলায় বলা হয়েছে তাকে দীর্ঘদিন ধরে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে। তাহলে তিনি ঘটনার আগে কেন থানায় জিডি করেননি?’
সোনারগাঁ যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নুর গাড়িটিও ভেঙে দেয়সোনারগাঁয়ে ভাঙচুরের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ভাঙচুর, হামলা ও সহিংসতা হয়েছে। তবে তা করেছে বাইরের লোকজন। মামুনুল হক তো করে নাই। বলা হয়েছে, মামুনুল হক উসকানি দিয়েছেন। তবে তখন তিনি (মামুনুল) সেখানে ছিলেন না। তাহলে কীভাবে উসকানি দিয়েছেন?’
মানুনুলের রিসোর্ট সঙ্গীনি জান্নাত আরা ঝর্ণার করা ধর্ষণের মামলা ছাড়াও আরও চারটি মামলায় শুনানি হয় এদিন। এসব মামলায় মোট ৩৮ দিনের রিমান্ড করে পুলিশ।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন নারায়ণগঞ্জ আদালত পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান। পরে পাঁচ মামলায় তিন দিন করে মোট ১৫ দিনের রিমান্ড আদেন দেন বিচারক।
পুলিশ পরিদর্শক আসাদুজ্জামান জানান, ধর্ষণ মামলায় ১০ দিন আর ৩ এপ্রিল সোনারগাঁয়ের রয়্যাল রিসোর্টে হামলা ও ভাঙচুর ও সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগ অফিসে ভাঙচুর যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাতে হামলা ঘটনায় করা দুই মামলায় সাত দিন করে রিমান্ডের আবেদন জানিয়েছিলেন তারা।
এছাড়া গত ২৮ এপ্রিল হেফাজতে ইসলামের ডাকা হরতালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাড়সড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের সহিসংতার ও গাড়ির পোড়ানোর দুটি মামলায় মামুনুল হককে গ্রেপ্তার দেখিয়ে দেখিয়ে সাত দিন করে মোট ১৪ দিনের রিমান্ড আবেদন করে সিআইডি।
গত ৩ এপ্রিল সোনারগাঁয়ে রয়েল রিসোর্টের একটি কক্ষে এক নারীসহ স্থানীয়দের হাতে অবরুদ্ধ হন মামুনুল হক। সে সময় তিনি বিব্রতকর অবস্থায় পড়লে হেফাজতের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা তাকে উদ্ধার করতে এগিয়ে যায়।
রিসোর্টে হামলা করে মামুনুলকে ছিনিয়ে নেয়ার পর হেফাজত কর্মীরা সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সোহাগ রনির বাসভবনে হামলা করেন এই দশা করেতারা রিসোর্টের পাশাপাশি সোনারগাঁ আওয়ামী লীগের কার্যালয়, স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বেপরোয়া ভাঙচুর চালায়। হামলা হয় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দুই শতাধিক যানবাহনেও।
সেদিন রিসোর্ট সঙ্গীনিকে মামুনুল দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করলেও তার দাবির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। আর ১৮ এপ্রিল গ্রেপ্তারের পর ৩০ এপ্রিল সোনারগাঁ থানায় মামুনুলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করেন ঝর্ণা। এতে তিনি অভিযোগ করেন, মামুনুল বিয়ে করার প্রলোভন দেখিয়ে গত দুই বছর ধরে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়েছেন। কিন্তু বিয়ে করবেন বলে আর করেননি।
মামুনুলের বিরুদ্ধে আরও এক নারীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের খবর এসেছে গণমাধ্যমে। সংবাদ প্রকাশের পর তিনি সেই নারীকেও গোপনে বিয়ে করার দাবি করেছেন তবে এই দাবির সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন আছে।
আর গ্রেপ্তারের পর হেফাজত নেতা পুলিশকে জানিয়েছেন, তিনি দুই জনকে চুক্তিভিত্তিক বিয়ে করেছেন তিন শর্তে। শর্তগুলো হলো: সেই দুই নারী স্ত্রীর পরিচয় পাবেন না, তারা সন্তান ধারণ করতে পারবেন না এবং সম্পত্তির উত্তরাধিকার হবেন না।