বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

এক আসামিকে গ্রেপ্তারের ভিডিও করছিলেন আরেক আসামি

  •    
  • ১০ মে, ২০২১ ২০:৫৪

ভিডিওতে ইউসুফ শরীফ তার ছেলে আজীমের হাতে কিছু টাকা দিচ্ছেন এমন দৃশ্যও দেখা যায়। আসিফের করা ভিডিওতে আজীমকেও একটি মুঠোফোন হাতে ভিডিও করতে দেখা যায়।

কুপিয়ে জখম করা মামলার এক আসামিকে গ্রেপ্তারের সময় আরেক আসামি উপস্থিত থাকলেও তাকে গ্রেপ্তার না করার অভিযোগ উঠেছে বরগুনার বেতাগী থানা পুলিশের বিরুদ্ধে। তবে পুলিশ বলছে ওই আসামিকে শনাক্ত করতে না পারায় গ্রেপ্তার করা হয়নি।

উপজেলার সরিষামুড়ি ইউনিয়নে রফিক বিশ্বাস নামের এক যুবককে কুপিয়ে জখমের মামলায় রোববার ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান চেয়ারম্যান প্রার্থী ইউসুফ শরীফকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

স্থানীয়রা বলছেন, ইউসুফকে গ্রেপ্তারের সময় তার ছেলে ও মামলার দুই নম্বর আসামি আজীম শরীফ সেখানে উপস্থিত থেকে বাবাকে গ্রেপ্তারের ভিডিও করছিলেন।

মামলার বাদির অভিযোগ, পুলিশ ইচ্ছা করেই আজীমকে গ্রেপ্তার করেনি।

ইউসুফ শরীফ প্রতিদ্বন্দি ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী ইমাম হোসেন শিপন জোমাদ্দারের সমর্থক রফিক বিশ্বাসকে কুপিয়ে জখমের মামলার এক নম্বর আসামি। মামলার দুই ও তিন নম্বর আসামি তার দুই ছেলে আজীম ও জাফর শরীফ।

রোববার বিকেলে পটুয়াখালীর সুবিদখালী উপজেলার ভয়াং এলাকা থেকে ইউসুফ শরীফ, ছেলে জাফর শরীফসহ মামলার অপর তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

ঘটনার ভিডিও ফেসবুকে লাইভ করেন ইউসুফের আরেক ছেলে তাম্মাম ইসলাম আসিফ শরীফ। ভিডিওর বর্ণনায় আসিফকে বলতে শোনা যায়, ‘সরিষামুড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ইউসুফ আলী শরীফ কোর্টে হাজিরার বন্ধ থাকার কারণে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করছেন। এই মুহূর্তে তাকে পুলিশ হেফাজতে বেতাগীতে নেয়া হচ্ছে, সবাই তার জন্য দোয়া করবেন।’

ভিডিওতে ইউসুফ শরীফ তার ছেলে আজীমের হাতে কিছু টাকা দিচ্ছেন এমন দৃশ্যও দেখা যায়। আসিফের করা ভিডিওতে আজীমকে একটি মুঠোফোন হাতে ভিডিও করতে দেখা যায়।

এ বিষয়ে বেতাগী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী শাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমরা তথ্য পাই যে মামলার চার আসামি পটুয়াখালীর সুবিদখালী উপজেলার ভয়াং এলাকায় অবস্থান করছে। পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে। ওই সময় সেখানে দুই নম্বর আসামি আজীম শরীফ উপস্থিত ছিল কিনা আমরা শনাক্ত করতে পারিনি। এটা একটা মিসটেক হয়েছে, যারা অভিযানে গিয়েছিল তারা আসামিকে চিনতে পারেনি।’

অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া বেতাগী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) আবদুস সালামের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বেতাগী থানার উপপরিদর্শক শফিকুল ইসলাম জানান, সোমবার আসামিদের বরগুনা মুখ্য হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। এদের মধ্যে ইউসুফ শরীফ, জাফর শরীফ ও শাহীনের সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত ওই তিন জনের তিন দিন করে রিমান্ড দেন। তবে গ্রেপ্তার আরেক আসামি ফারুকের রিমান্ড আবেদন করা হয়নি। তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।’

মামলার বাদি আজীম বিশ্বাস বলেন, ‘এ বছরের ২৩ মার্চ আমার ভাইকে কুপিয়ে জখম করার পর ২৫ মার্চ থানায় মামলা করতে যাই এবং লিখিত অভিযোগ দিয়ে আসি। আমার ভাই চিকিৎসা শেষে বাড়িতে আসার পর সেই মামলা ৮ এপ্রিল এজাহার হিসাবে গণ্য করে। এর প্রায় একমাস পর চার আসামিকে নাটকীয় গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওইখানে ভিডিওতে আমরা দেখলাম আজীম শরীফ উপস্থিত, অথচ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। পুরো ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ।’

বরগুনার পুলিশ সুপার (সদর ও বেতাগী সার্কেল) মেহেদি হাসান বলেন, গ্রেপ্তারের সময় পুলিশের অনুমতি ছাড়া ভিডিও ধারণের নিয়ম নেই, তবে বিশেষ কোনো অভিযান বা কোনো আসামি গ্রেপ্তারের সময় অনুমতি নিয়ে গণমাধ্যম ভিডিও ধারণ বা লাইভ সম্প্রচার করতে পারে। ইউসুফ শরীফকে গ্রেপ্তারের সময় কেউ লাইভ বা ভিডিও করেছে কিনা অভিযানে অংশ নেয়া পুলিশ সদস্যদের জানা নেই।’

তিনি বলেন, ‘আসামিদের নিয়ে আসার সময় পথে যদি কেউ ভিডিও করে আমরা সে দায় নিতে পারিনা।’

গ্রেপ্তারের সময় আসামি আজীম শরীফের উপস্থিতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া কর্মকর্তার সাথে আমার কথা হয়েছে। তিনি আমাকে জানিয়েছেন, সেখানে আজীম শরীফ উপস্থিত ছিলেন না। তবে আজীম শরীফ থাকার পরেও যদি তাকে গ্রেপ্তার না করা হয়, তবে আমরা বিষয়টি খোঁজ নেব।’

অভিযোগ রয়েছে, ইউপি নির্বাচন নিয়ে বিরোধিতার জেরে ২৩ মার্চ রাত দশটার দিকে সরিষামুড়ির ভোড়া এলাকায় ইউসুফ শরীফ ও তার ছেলেসহ সহযোগীরা রফিক বিশ্বাসকে কুপিয়ে জখম করে ফেলে রেখে যায়। তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়।

এ ঘটনায় ৮ এপ্রিল ১৪ জনকে আসামি করে বেতাগী থানায় একটি মামলা করেন রফিকের ভাই আজীম বিশ্বাস।

এর আগে ইউপি নির্বাচনকেন্দ্রিক বিরোধিতার জেরে ২০২০ সালের ২০ নভেম্বর বিকেলে সরিষামুড়ি ইউনিয়নের কালিকাবাড়িতে বর্তমান চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইমাম হাসান শিপন জোমাদ্দারকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়।

এ ঘটনায় ইউসুফ শরীফ ও তার দুই ছেলেসহ ১৪ জনকে আসামি করে বেতাগী থানায় মামলা করা হয়। ২০২১ সালের ১৮ মার্চ এই মামলায় শরীফ হাইকোর্ট থেকে জামিন নেন।

এ বিভাগের আরো খবর