সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ প্রকল্পে রেস্টুরেন্ট-টয়লেট নির্মাণ করা নিয়ে যে বিতর্ক দেখা দিয়েছে, তার জবাব দিয়েছে সরকার। প্রকল্পটির পরিচালক বলছেন, ‘এখানে কোনো রুটি-ভাতের দোকান হচ্ছে না।’
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণের তৃতীয় পর্যায়ের প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে গাছ কাটা নিয়ে পরিবেশবাদীদের প্রতিবাদের মুখে পড়েছে সরকার। পরিবেশবাদীরা বলছেন, যে গাছগুলো কাটা হয়েছে সেগুলো ছিল বিলুপ্তপ্রায় পাখির আবাসস্থল।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, মূলত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে আন্তর্জাতিক মানের করে গড়ে তুলতেই এ উদ্যোগ। আগামী বর্ষা মৌসুমে উদ্যানে এক হাজার গাছ রোপনের পরিকল্পনার কথাও জানান তারা।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। গত দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে অর্ধশতাধিক পুরোনো গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। কাটা পড়েছে উদ্যানের পুরনো গগন শিরিষ, সেগুনের মতো গাছও। এ ছাড়া কেটে ফেলার জন্য চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে আরও শতাধিক গাছ।
এ গাছ কাটার প্রতিবাদে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সরব। পরিবেশবাদি বেশ কয়েকটি সংগঠনও পালন করছে প্রতিবাদি কর্মসূচি। গাছ বাঁচাতে মুক্তিযোদ্ধাদের নামে গাছগুলোর নামকরণও করা হয়েছে। সরকারকে দেয়া হয়েছে আইনি নোটিশ। এ অবস্থা প্রশ্ন উঠেছে, আসলে কী হচ্ছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে?
স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ের পরিচালক মো. হাবিবুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা চাচ্ছি একটা মাস্টারপ্ল্যানের মাধ্যমে পুরো উদ্যানটাকে আন্তর্জাতিক মানের করে গড়ে তুলতে।
‘একটা কথা বারবার বলা হচ্ছে যে, এখানে খাবারের দোকান করা হচ্ছে। এখানে কোনো রুটি বা ভাতের দোকান হচ্ছে না। উদ্যানে ঘুরতে এসে এখানকার নানান স্থাপনা দেখতে দেখতে একজন মানুষ ক্লান্ত হয়ে পড়তে পারেন, তার একটু পানির পিপাসা পেতে পারে বা তার টয়লেট ফ্যাসিলিটির প্রয়োজন হতে পারে।
‘তখন যাতে তিনি একটা জায়গায় বসে বিশ্রাম নিতে পারেন, সে জন্য পুরো উদ্যানে সাতটি “ফুড কিয়স্ক” তৈরি করা হবে, যেখানে পানি ও হালকা স্ন্যাকসের ব্যবস্থা থাকবে। এর পেছন দিকে নারী এবং পুরুষদের জন্য আলাদা টয়লেট ফ্যাসিলিটি থাকবে।’
উদ্যানে কী কী হতে যাচ্ছে, তাও জানান প্রকল্প পরিচালক।
তিনি জানান, পুরো উদ্যানে পাকিস্তানি শাসনবিরোধী ২৩ বছরের মুক্তিসংগ্রাম ও ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্বলিত ভাস্কর্য স্থাপন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের স্থানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থানে ভাস্কর্য, ইন্দিরা মঞ্চ, ওয়াটার বডি ও ফাউন্টেইন নির্মাণ, ৫০০ গাড়ির ভূগর্ভস্থ কার পার্কিং ও শিশু পার্ক থাকবে।
মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে কিছু গাছ কাটা পড়ার কথাও স্বীকার করেন তিনি। তবে গণমাধ্যমে প্রকল্পের খণ্ডিত কার্যক্রম প্রচারিত হওয়ায় বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে বলেও মনে করেন তিনি।
প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘আগামী বর্ষা মৌসুমে প্রায় ১ হাজার গাছ লাগানো হবে, যাতে সারা বছর উদ্যানের কোনো না কোনো গাছে ফুল থাকে এবং মানুষ এখানে প্রবেশ করে একটা আমেজ পায় যে, সে একটা বেড়ানোর জায়গায় এসেছে – এভাবে পরিকল্পিতভাবে বৃক্ষরোপন কার্যক্রম বিন্যাস করা হয়েছে।’