সিলেটে পুলিশ হেফাজতে রায়হান আহমদের মৃত্যুর সাত মাস পর হত্যা মামলার অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
এতে প্রধান আসামি বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সাবেক ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ ছয়জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে আকবরসহ পাঁচজনই বরখাস্ত হওয়া পুলিশ সদস্য।
আদালত পুলিশের প্রসিকিউশন শাখার কাছে বুধবার বেলা ১১টার দিকে অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়েছে বলে জানান পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার (এসপি) খালেদ-উজ জামান।
তিনি জানান, পুলিশের প্রসিকিউশন শাখার কর্মকর্তারা এটি ভার্চুয়াল আদালতে উপস্থাপন করবেন।
খালেদ বলেন, রায়হান হত্যায় এসআই আকবর ছাড়া অন্য অভিযুক্তরা হলেন সহকারী উপপরিদর্শক আশেকে এলাহী ও হাসান উদ্দিন, কনস্টেবল হারুনুর রশিদ ও টিটু চন্দ্র দাস এবং সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল নোমান।
এর মধ্যে নোমানই পলাতক; অন্যরা কারাগারে।
পিবিআইয়ের এসপি জানান, অভিযোগপত্রের বিষয়ে বিস্তারিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হবে।
এ হত্যা মামলার অভিযোগপত্র জমা দেয়ার দীর্ঘসূত্রিতা নিয়ে বিভিন্ন সময় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে রায়হানের পরিবার। অভিযোগপত্র প্রস্তুত হয়ে গেছে বলেও প্রায় এক মাস পার করে দিয়েছে পিবিআই।
তবে এসপি খালেদ বলছেন, অভিযোগপত্রে যেন কোনো খুঁত না থাকে, তদন্ত নিয়ে যেন প্রশ্ন না ওঠে, সে জন্য তদন্তে সবগুলো দিক খতিয়ে দেখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আলোচিত এ মামলার আসামি পুলিশ হওয়ায় একটি নির্ভুল, ত্রুটিমুক্ত ও গ্রহণযোগ্য অভিযোগপত্র তৈরি করতে কিছুটা সময় লেগেছে। এ ছাড়া করোনার বিরূপ পরিস্থিতির কারণেও দেরি হয়েছে।
সিলেট নগরের আখালিয়া এলাকার বাসিন্দা রায়হানকে গত বছরের ১১ অক্টোবর রাতে ধরে আনে বন্দরবাজার ফাঁড়ি পুলিশ। পরদিন ১২ অক্টোবর সকালে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রায়হানের লাশ পাওয়া যায়।
রায়হান হত্যা মামলার প্রধান আসামি বরখাস্ত হওয়া এসআই আকবর ভূঁইয়া। ফাইল ছবি
রায়হানের পরিবারের অভিযোগ, টাকার দাবিতে রায়হানকে ফাঁড়িতে আটকে রেখে রাতভর নির্যাতন করা হয়। ভোরে রায়হানের চাচা টাকা নিয়ে ফাঁড়িতে গেলেও শেষ রক্ষা হয়নি। এর আগেই মারা যান রায়হান।
১২ অক্টোবর রাতে হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে সিলেটের কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন রায়হানের স্ত্রী তিন্নি।
রায়হানের মৃত্যুর ঘটনার পর বন্দরবাজার ফাঁড়ির ছয় পুলিশকে সাময়িক বরখাস্ত করে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এই ছয়জন এখন কারাগারে।
তারা হলেন বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন ইনচার্জ এসআই আকবর, টুআইসি এসআই হাসান আলী, এএসআই আশেকে এলাহী, কনস্টেবল হারুনুর রশিদ, কনস্টেবল তৌহিদ মিয়া ও কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস। গ্রেপ্তারের পর তাদের সবাইকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। প্রধান অভিযুক্ত বহিষ্কৃত এসআই আকবরকে সিলেটের কানাইঘাট সীমান্ত থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এই ছয়জনের মধ্যে অভিযোগপত্র থেকে বাদ গেছে কনস্টেবল তৌহিদ মিয়ার নাম।
রায়হান হত্যা মামলার তদন্ত শেষে ৩০ জানুয়ারির মধ্যে অভিযোগপত্র দিতে নির্দেশ দেয় আদালত।
তবে এ সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষ না হওয়ায় সময় বাড়াতে গত ১০ ফেব্রুয়ারি সিলেটের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. আব্দুল মুমিনের আদালতে আবেদন করে পিবিআই।
১৪ ফেব্রুয়ারি শুনানির পর আদালত ৩০ কার্যদিবস সময় বাড়ায়। এরপর করোনা পরিস্থিতির কারণে অভিযোগপত্র জমা দেয়ার সময় পেছাতে থাকে বলে জানায় পিবিআই।