নামের মিলের কারণে কারাভোগকারী হাছিনা বেগম বলেছেন, বিনা দোষে আমি ১৭ মাস জেল খেটেছি। আমি দোষীদের বিচার চাই।
মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটায় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে তিনি প্রতিক্রিয়া জানান। আদালতের মাধ্যমে তিনি মঙ্গলবার মুক্তি পেয়েছেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হাছিনা বেগম বলেন, ‘পুলিশ যখন আমাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছিল তখন অনেক কিছু বলেছি। টেকনাফ থানায় নিলে বলেছি তাদের ভুল হচ্ছে। কিন্তু পুলিশ বলেছে, আমি নাকি সব কথা মিথ্যা বলেছি। আমার কথা তারা বিশ্বাস করেনি।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে হাছিনা বেগম বলেন, ‘পুলিশকে বারবার বলেছি এটা আমার মামলা না। কিন্তু তারা বলেছে এটা কক্সবাজারের মামলা না, চট্টগ্রামের মামলা। আমাকে টেকনাফ থানা থেকে কক্সবাজারে চালান করে দিলে সেখানেও বলেছি, স্যার এটা আমার মামলা না। পুলিশ বলেছে, এটা ১৭ সালের মামলা।’
নিজের ভোগান্তির কথা তুলে ধরে হাছিনা বেগম বলেন, ‘কক্সবাজারে আমাকে দশ দিন রাখা হয়, এরপর চট্টগ্রামে চালান করে। চট্টগ্রাম কারাগারেও বলেছি, এটা আমার মামলা না। কিন্ত কেউ শোনেনি।’
বিনা দোষে জেল খাটার কষ্ট নিয়ে হাছিনা বেগম বলেন, ‘১৭ মাসে আমার সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। আমার ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে এখন পথের মধ্যে। বাড়িঘর সবকিছু বেচাকেনা হয়ে গেছে। জায়গা বন্ধক রেখে আমার মেয়ে এক উকিলের মাধ্যমে আমার জামিনের চেষ্টা করে। সেই উকিলও আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। এক পুলিশ আমার মেয়ের কাছ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।’
কারামুক্ত হয়ে কেমন লাগছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার ভালো লাগছে। কিন্তু আমি কেন ১৭ মাস বিনা দোষে জেল খেটেছি, সরকার তো আমার সময়গুলো ফেরত দিতে পারবে না। আমি এই অন্যায়ের বিচার চাই।’
হাছিনা বেগমের আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ বলেন, ‘অমানবিক বিষয়টি জানার পর আমি এগিয়ে আসি। নিজের পকেট থেকে টাকা দিয়ে কোর্টে পিটিশন দিয়েছি। কোর্ট পুলিশকে নির্দেশ দিলেও সাত মাসে যাচাই রিপোর্ট আসেনি। আবার কোর্টে আবেদন করলে পুলিশ রিপোর্ট দেয়।
‘পুলিশ তখন জানায়, কারাবন্দি হাছিনা বেগমের বয়স ৪০-৪২ বছর। কিন্তু যে আসামি তার বয়স ছিল ২৬-২৭ বছর। তাদের দুজনের গ্রামের বাড়িও আলাদা। দুজনের সন্তানের সংখ্যা ভিন্ন। আমরা এই আদালত অথবা উচ্চ আদালতের কাছে পুলিশের আগের গাফিলতির বিষয়টি তুলে ধরে ক্ষতিপূরণ দাবি করব।’
মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে কারা কর্তৃপক্ষ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রকৃত আসামি হাসিনা আক্তার ও নির্দোষ হাছিনা বেগমের ছবিসংবলিত প্রতিবেদন দাখিল করে। এরপর আদালত সবকিছু পর্যালোচনা করে প্রায় দেড় বছর কারাবন্দি হাছিনা বেগমের মুক্তির আদেশ দেয়।
মাদক মামলায় ছয় বছরের সাজা পাওয়া হাসিনা আক্তারের পরিবর্তে হাছিনা বেগম কারাভোগ করছিলেন। বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ।
তিনি জানান, ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানার মইজ্যারটেক এলাকা থেকে দুই হাজার ইয়াবাসহ হাসিনা আক্তার ও হামিদ হোসেন নামের দুজনকে আটক করে পুলিশ। এ দম্পতি কক্সবাজার জেলার টেকনাফ পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা।
এ ঘটনায় পুলিশ কর্ণফুলী থানায় মামলা করে। তখন আসামি হাসিনাকে চার বছর বয়সী ছেলে ও দুই বছরের মেয়েসহ কারাগারে পাঠায় আদালত। এরপর ২৭ নভেম্বর স্বামীসহ জামিনে মুক্তি পান হাসিনা আক্তার। মুক্তির পর তারা আত্মগোপনে চলে যান। পুলিশের ভুলে পরে নির্দোষ হাছিনা বেগম কারাভোগ করছিলেন।