মায়ের মরদেহ দাফন করতে ঢাকা থেকে স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে রওনা হয়েছিলেন খুলনার তেরখাদার মনির শিকদার। মাকে শেষ বিদায় দেয়া আর হয়নি। স্ত্রী ও দুই সন্তানের সঙ্গে নিজেও চলে গেলেন পরপারে।
মাদারীপুরের শিবচরে সোমবার সকালে বালুবোঝাই বাল্কহেডের ধাক্কায় স্পিডবোট ডুবিতে প্রাণ হারান ২৬ জন। এর মধ্যে মনির, তার স্ত্রী ও দুই মেয়ে রয়েছে।
মনির ছাড়া অন্য তিনজন হলেন তার স্ত্রী হেনা বিবি, দুই মেয়ে চার বছরের সুমি ও সাত বছরের রুমি খাতুন। বেঁচে গেছে শুধু পরিবারের বড় মেয়ে আট বছরের মিম।
দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া একমাত্র সদস্য মিম বলে, ‘দাদু মারা গেছে। তাকে দেখতে আসছিলাম। আমি, আমার আব্বু, আম্মু আর দুই বোন। ঘাটে আইসে ধাক্কা খাইছিল গাড়ির (বাল্কহেড) সাথে। গাড়িডা (স্পিডবোট) ভাঙগার সাথে সাথে আমি গাড়ির তলে পড়ে গেছিলাম। একটা ব্যাগের উপরে ভেসে উঠছিলাম। তারপর আমারে উঠাইছে।’
নৌ-পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা মিমকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
মিম তার বাবার ছাড়া অন্য কারও মোবাইল নম্বর বলতে না পারায় প্রশাসন এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কেউ তার স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না।
বিকেল চারটার দিকে মিমকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়া হয় কাঁঠালবাড়ী দোতারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে। সেখানে রাখা ছিল ২৬টি মরদেহ। এত মরদেহের ভিড়ে মা-বাবা ও দুই বোনের মরদেহ শনাক্ত করে সে।
এ সময় মিমের কান্নায় উপস্থিত সবারই চোখ ভিজে আসে।
এদিকে রাত ৯টার দিকে পারোখালী গ্রামে চারটি মরদেহ পৌঁছানোর পর সেখানেও হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে তাদের দাফন করা হয়।
বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথের কাঁঠালবাড়ী ঘাট এলাকায় সোমবার সকালে বাল্কহেডের ধাক্কায় ডুবে যাওয়া স্পিডবোটে ছিল মনির ও তার পরিবার। ওই দুর্ঘটনায় তিন শিশুসহ প্রাণ হারান ২৬ জন। দুর্ঘটনার পর স্পিডবোটের চালকসহ পাঁচজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। মিম তাদের একজন।
মনিরের ছোট ভাই কামরুল শিকদার জানান, তার ভাই রাজধানীর মিরপুর মসজিদ মার্কেটে কাপড়ের ব্যবসা করতেন। থাকতেন মিরপুর সাড়ে ১১ নম্বর এলাকায়। রোববার সন্ধ্যায় তাদের মা মারা যান। মাকে দাফন করতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সেখান থেকে গ্রামে আসছিলেন মনির।
তেরখাদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশাররফ হোসেন জানান, মাদারীপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রত্যেক মৃত ব্যক্তির জন্য ২০ হাজার টাকা এবং মরদেহ পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। তারা মরদেহ, টাকা এবং জীবিত উদ্ধার করা মিমকে তার নানির কাছে বুঝিয়ে দিয়েছেন।
তেরখাদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া ইসলাম জানান, দুর্ঘটনার পর শিবচরের ইউএনও তেরখাদার একই পরিবারের চারজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন। পরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে সমন্বয় করে দ্রুত মরদেহ আনার ব্যবস্থা করেন।