বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মৃত মা নয়, স্বামী-সন্তানকে দাফন করলেন আদুরি

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ৪ মে, ২০২১ ০০:৫২

শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়া আদুরি স্বামী আরজু সরদার ও ছেলে ইয়ামিন সরদারকে বিদায় জানিয়েছেন চোখের জলে। সোমবার রাত ১০টার দিকে ফরিদপুরের শেখর ইউনিয়নের পঁচা মাগুরা গ্রামে তাদের জানাজা হয়। পরে স্থানীয় কবরস্থানে বাবা-ছেলেকে দাফন করেন স্বজনরা। এ সময় বার বার কান্নায় ভেঙে পড়েন আদুরি।

মায়ের সঙ্গে শেষ দেখা হয়নি আদুরির। তার অপেক্ষায় থাকতে থাকতে সোমবার দুপুরে তার মাকে দাফন করেন স্বজনরা।

দাফনের ওই সময়ের কয়েক ঘণ্টা আগে ভয়াবহ এক দুর্ঘটনায় পড়ে আদুরির পরিবার। মাদারীপুরের শিবচরে বাল্কহেড ও স্পিডবোটের সংঘর্ষে প্রাণ হারান তার স্বামী ও একমাত্র সন্তান। গুরুতর আহত হন আদুরিও।

শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়া এই নারী স্বামী আরজু সরদার ও ছেলে ইয়ামিন সরদারকে বিদায় জানিয়েছেন চোখের জলে। সোমবার রাত ১০টার দিকে আরজু সরদারের নিজ বাড়ি ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার শেখর ইউনিয়নের পঁচা মাগুরা গ্রামে তাদের জানাজা হয়। পরে স্থানীয় কবরস্থানে বাবা-ছেলেকে দাফন করেন স্বজনরা। এ সময় বার বার কান্নায় ভেঙে পড়েন আদুরি।

শেখর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইস্রাফিল মোল্যা বলেন, ‘তাদের মৃত্যু খুবই মর্মান্তিক। এলাকার মানুষ এ ধরনের ঘটনা আগে কখনও দেখেনি। সবাই শোকাহত। স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে এলাকার পরিবেশ।’

তিনি আরও বলেন, ‘আরজু সরদারের প্রথম স্ত্রীর ঘরে একটি মেয়ে ছিল, সে আগেই মারা গেছে। দ্বিতীয় স্ত্রী আদুরি বেগমের ঘরে আসে ইয়ামিন সরদার। এখন একা হয়ে গেল আদুরি।’

আলফাডাঙ্গা উপজেলার চরডাঙ্গা গ্রামের সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আরিফুল ইসলাম আদুরির পরিবারের বরাত দিয়ে জানান, শাশুড়ি মনোয়ারা বেগমের মৃত্যুর খবর শুনে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে ঢাকা থেকে চরডাঙ্গা গ্রামের শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন আরজু সরদার।

স্পিডবোটে পদ্মা নদী পার হওয়ার সময় তারা দুর্ঘটনার শিকার হন। ঘটনাস্থলেই আরজু সরদার ও তার শিশুসন্তান ইয়ামিন মারা যায়। গুরুতর আহত হন স্ত্রী আদুরি বেগম।

স্বামী-সন্তানকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ আদুরি। ছবি: নিউজবাংলা

নিজের শরীরে আঘাত, তার ওপর স্বামী-সন্তান হারানোর শোক। সব মিলিয়ে নির্বাক হয়ে গেছেন আদুরি। মাঝেমধ্যে চিৎকার করে উঠছেন তিনি। তাকে প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন সান্ত্বনা দিচ্ছেন। কিন্তু কিছুতেই স্বামী ও বুকের মানিককে হারানোর শোক ভুলতে পারছেন না আদুরি।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, আরজু স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় থাকতেন। ঢাকায় ব্যবসা করতেন তিনি।

বাংলাবাজার ফেরিঘাটের ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক আশিকুর রহমান বলেন, মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া থেকে যাত্রী নিয়ে একটি স্পিডবোট বাংলাবাজার ফেরিঘাটের দিকে যাচ্ছিল। স্পিডবোটটি বাংলাবাজার ফেরিঘাটের পুরোনো কাঁঠালবাড়ি ঘাটের কাছাকাছি আসার পর বালুবোঝাই বাল্কহেডের ধাক্কায় সেটি ডুবে যায়। এ ঘটনায় প্রাণ হারান ২৬ জন।

দুর্ঘটনার পর মাদারীপুর স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরের উপপরিচালক আজাহারুল ইসলামকে প্রধান করে ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন জেলা প্রশাসক রহিমা খাতুন।

এ ছাড়া নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তার ঘোষণা দেয়া হয়। জেলা প্রশাসক রহিমা খাতুন বলেন, তদন্ত কমিটিকে আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

লকডাউনে স্পিডবোট বন্ধ থাকার পরও কেন দুর্ঘটনা-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্পিডবোটটি মুন্সিগঞ্জ থেকে ছেড়ে বাংলাবাজার আসে। তারা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে স্পিডবোট ছাড়ে। এসব বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ ঘটনায় আহত স্পিডবোটের চালককে আটক করা হয়েছে। তাকে পুলিশের নজরদারিতে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলে জানান শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিরাজ হোসেন।

এ বিভাগের আরো খবর