মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলায় মসজিদের ইমামতির চাকরি হারানোর এক মাস পর আত্মহত্যা করা মাওলানা আব্দুর রহিম পাটোয়ারীর শেষ দিনগুলো কেটেছে চরম নিঃসঙ্গতা আর অবহেলায়।
মৃত্যুর পর নিজ এলাকাতেও দাফন হয়নি আব্দুর রহিমের। ছেলে থাকেন বিদেশে, মেয়ে শ্বশুরবাড়িতে। মৃত্যুর পর মরদেহ নিতে অনীহা দেখিয়েছেন স্ত্রী ও মেয়ে।
আব্দুর রহিমকে শেষপর্যন্ত দাফন করা হয়েছে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার গুয়াগাছিয়া ইউনিয়ন কবরস্থানে। এর পাশের একটি মসজিদেই তিনি ১৫ বছর ইমামতি করেছেন।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার চরকিশোরগঞ্জ এলাকার গুদারাঘাট নামাজ ঘর থেকে গত ২৫ এপ্রিল মাওলানা আব্দুর রহিম পাটোয়ারীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
এর প্রায় এক মাস আগে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার পুরান বাউশিয়া পশ্চিম পাড়া জামে মসজিদ থেকে তিনি চাকরি হারান। মাসের পাওনা বেতন হিসেবে তাকে চার হাজার টাকা বুঝিয়ে দেয় মসজিদ কর্তৃপক্ষ।
মসজিদ কমিটির সভাপতি রাজা মোল্লা নিউজবাংলাকে জানান, ৪২ বছর বয়সী আব্দুর রহিমের দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। সম্প্রতি জটিলতা বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসার জন্য তাকে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসায় গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হয়।
সোনারগাঁ উপজেলার চরকিশোরগঞ্জ এলাকার গুদারাঘাট নামাজ ঘর থেকে আব্দুর রহিমের মরদেহ উদ্ধার করা হয়
রাজা মোল্লা বলেন, ‘এর মাঝে মসজিদ কমিটির অন্য সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে নতুন ইমাম ঠিক করা হয়। ২৮ মার্চ আব্দুর রহিমকে চাকরি থেকে অব্যাহতির বিষয়টি মোবাইল ফোনে জানিয়ে পাওনা টাকা বিকাশে পাঠিয়ে দেয়া হয়।’
ওই মসজিদের কয়েক জন মুসল্লি জানান, কয়েকদিন আগে তাকে নামাজের মধ্যে কাশতে দেখা যায়। এতে অনেকেই ভয় পাচ্ছিলেন তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কিনা।
রাজা মোল্লা নিউজবাংলাকে জানান, বিভিন্ন জনের কাছ থেকে তারা জানতে পেরেছেন চাকরি হারানোর পর আব্দুর রহিম মুন্সিগঞ্জ সদরে কয়েক জায়গায় চাকরির চেষ্টা করেন। তবে কোথাও চাকরি না পেয়ে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার চর কিশোরগঞ্জের গুদারাঘাট নামাজ ঘরে থাকতে শুরু করেন।
রাজু মোল্লার ছোট ভাই বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘যোগাযোগের জন্য আব্দুর রহিম তিনটি নম্বর দিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি চলে যাওয়ার পর সবগুলো নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।’
সোনারগাঁ উপজেলার চর কিশোরগঞ্জের গুদারাঘাট নামাজ ঘর এলাকার আখতার হোসেন নিউজবাংলাকে জানান, আব্দুর রহিম রমজানের প্রথম থেকে এ নামাজ ঘরে আশ্রয় নেন। আশপাশে বাড়িঘর না থাকায় মাঝেমধ্যে না খেয়ে থাকতে হতো। শারীরিকভাবেও তিনি অসুস্থ ছিলেন।
ওই এলাকার আরেক বাসিন্দা জনি মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘একবার সিএনজি অটোরিকশার চালকেরা টাকা তুলে তাকে ডাক্তার দেখিয়েছিল। অনেকেই তাকে মাঝে মাঝে খাবার দিতেন।’
স্থানীয় ট্রলার চালক মোতালেব মিয়া জানান, শেষের দিকে হাঁটাচলা করতেও আব্দুর রহিমের কষ্ট হতো। প্রচণ্ড অসুস্থতা ও খাদ্য সংকটের কারণে তিনি আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন।
মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার পুরান বাউশিয়া পশ্চিম পাড়া জামে মসজিদে নিয়মিত নামাজ পড়েন আবু জায়েদ। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আব্দুর রহিম খুব কম বাড়িতে যেতেন। গেলেও বেশি সময় থাকতেন না। অনেকের ধারণা ছিল, স্ত্রীর সঙ্গে তার সম্পর্ক তেমন ভালো ছিল না।’
সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান জানান, প্রাথমিকভাবে একে আত্মহত্যা বলে মনে হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।
ওসি জানান, আব্দুর রহিমের আত্মহত্যার পর তার মরদেহ গ্রামের বাড়ি পাঠাতে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে তারা এ বিষয়ে আগ্রহ দেখায়নি। পরে আব্দুর রহমানের মরদেহ দাফন করা হয় পশ্চিম পাড়া জামে মসজিদের পাশের কবরস্থানে।