ফরিদপুরে রিমান্ডে আসামির মৃত্যু পর পরিবারের তোলা হত্যার অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘পুলিশের নির্যাতনে মৃত্যু হয়নি আসামি আবুল হোসেন মোল্লার। তাকে কোনো ধরনের শারীরিক বা মানসিকভাবে টর্চার করা হয়নি।’
জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে রোববার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
গেল ৫ এপ্রিল রাতে সালথা উপজেলায় বিভিন্ন সরকারি অফিসে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশের করা মামলায় ১৬ এপ্রিল গ্রেপ্তার দেখানো হয় আবুল হোসেনকে। ২৮ এপ্রিল তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠায় আদালত। রিমান্ডে থাকা অবস্থায় গেল শনিবার তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মৃতের মেয়ে তানিয়া আক্তার বলেন, ‘আমার বাবা নির্দোষ। গ্রামে কোনো রাজনীতি করতো না। তাকে অন্যায়ভাবে আসামি করা হয়েছে। এখন তাকে রিমান্ডে নিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। আমি সঠিক তদন্ত এবং ন্যায়বিচার চাই।’
আসামির মৃত্যুর বিষয়ে গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুনীল কুমার কর্মকার জানান, আবুল হোসেনের রিমান্ড চলছিল। তিনি সেহরি শেষে ভোর সোয়া পাঁচটার দিকে শৌচাগারে যান। অনেকক্ষণ ধরে তার কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে নিরাপত্তারক্ষী দরজা খুলে দেখেন, তিনি মেঝেতে পড়ে আছেন। তাকে দ্রুত ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ওই সময় জেনারেল হাসপাতালে দায়িত্বে ছিলেন চিকিৎসক তোফাজ্জেল হোসেন। তিনি বলেন, ‘পুলিশ আবুল হোসেনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসে। তবে মৃতের শরীরে দৃশ্যমান কোনো আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়নি।’
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার বলেন, ‘শনিবারই আমরা ওই ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামাল পাশাকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করি। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তারা প্রতিবেদন দিয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে পুুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আসামি আবুল হোসেনের মৃত্যুর সঙ্গে পুলিশের কোনো ধরনের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের সম্পর্ক নেই। ওই ঘটনায় ডিবি পুলিশের এএসআই রমজান খন্দকার বাদী হয়ে একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য আবুল হোসেনের মরদেহ ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। ময়নাতদন্ত শেষে আবুল হোসেনের মরদেহ তার ভাতিজা ইয়াদ আলীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’
পুলিশ সুপার জানান, সালথার সহিংসতার ঘটনায় মোট ৯টি মামলা হয়েছে। এই সব মামলায় ৩৭০ জনের নামসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৩/৪ হাজার জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এ মামলাগুলোতে মোট ১০৭ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
গত ৫ এপ্রিল লকডাউন বাস্তবায়নকে কেন্দ্র করে সরকারি কর্মচারীর লাঠিপেটায় এক ব্যক্তি আহত হওয়ার পর রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে ফরিদপুরের সালথা উপজেলা।
এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা উপজেলা পরিষদ, থানা, সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বাসভবন, উপজেলা কৃষি অফিস, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস ও উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।
ইউএনওর গাড়ি ও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) গাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। পরে ফরিদপুর, ভাঙ্গা ও আশপাশের থানার অতিরিক্ত পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও র্যাব ঘটনাস্থলে গিয়ে রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।