বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

হেফাজত নেতা হারুনের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

  •    
  • ২৯ এপ্রিল, ২০২১ ২২:৪৫

মুফতি হারুন ইজহারকে বৃহস্পতিবার রাতে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। চট্টগ্রামের লালখান মাদ্রাসায় গ্রেনেড বিস্ফোরণের মামলার অন্যতম আসামি তিনি। ২০০৯ সালের শেষ দিকে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস ও ভারতীয় হাইকমিশনে হামলার পরিকল্পনায় যুক্ত ছিলেন ইজহার। শাপলা চত্বরে নাশকতার ঘটনায় করা তিনটি মামলায়ও আসামি তিনি। তাকে হাটহাজারীতে সহিংসতার ঘটনায় মদদদাতা হিসেবে দাবি করেছে র্যাব।

হেফাজতে ইসলামের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক মুফতি হারুন ইজহারকে বৃহস্পতিবার রাতে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।

চট্টগ্রাম সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম আঞ্জুমান আরার ভার্চুয়াল আদালত এ আদেশ দেন।

বুধবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র‌্যাব)। চট্টগ্রামের লালখান বাজারের জামিয়াতুল উলুম আল ইসলামিয়া মাদ্রাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

বৃহস্পতিবার বিকেলে হারুনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে নিউজবাংলাকে জানান র্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. খায়রুল ইসলাম।

মুফতি হারুনের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। চট্টগ্রামের লালখান মাদ্রাসায় গ্রেনেড বিস্ফোরণের মামলার অন্যতম আসামি তিনি।

২০১৩ সালের ১০ জুলাই লালখান বাজার মাদ্রাসায় ভয়াবহ গ্রেনেড বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে তিনজন নিহত হয়। আহত হয় বেশ কয়েকজন।

মাদ্রাসার যে কক্ষে বিস্ফোরণ ঘটে, তার পাশের কক্ষেই ছিল মুফতি হারুন ইজহারের কার্যালয়। বিস্ফোরণের পরপর সে পালিয়ে যায়। পুলিশ ওই কক্ষ তল্লাশি করে চারটি তাজা গ্রেনেড এবং বিপুল পরিমাণ গ্রেনেড তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করেছিল।

মুফতি ইজহারের রুমে তল্লাশি করে বিস্ফোরক তৈরিতে ব্যবহৃত ১৮ বোতল এসিড পাওয়া যায়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে নগরীর খুলশী থানায় বিস্ফোরক ও এসিড আইনে দুটি মামলা করেছিল।

মুফতি হারুন ইজহারের বাবা মুফতি ইজাহারুল ইসলাম বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটভুক্ত ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের সভাপতি ও হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কমিটির নায়েবে আমির।

দুটি মামলাতেই মুফতি ইজাহারুল ও ছেলে হারুনকে আসামি করা হয়।

ওই ঘটনায় তিনি গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলেন। এ ঘটনায় ৩টি ও হেফাজতের নাশকতার ৮ মামলাসহ মোট ১১টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া রাজধানীর শাপলা চত্বরে হেফাজতের লংমার্চের সময় সংঘর্ষ ও নাশকতার ঘটনায় করা তিনটি মামলায়ও আসামি তিনি।

জঙ্গি সংগঠনের সাথেও হারুনের যোগাযোগ আছে উল্লেখ করে র্য্যাব আরও জানায়, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক হারুনের বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলেন।

তার বাবা ইজাহারুল ইসলামের পরিচালনাধীন লালখান বাজারে পাহাড়ের পাদদেশের জামিয়াতুল উলুম আল-ইসলামিয়া মাদ্রাসা ঘিরে গড়ে উঠেছিল আন্তঃদেশীয় জঙ্গিদের ঘাঁটি।

সেখান থেকে ২০০৯ সালের শেষ দিকে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস ও ভারতীয় হাইকমিশনে হামলার ছক তৈরি হয়েছিল। এ হামলার পরিকল্পনা করেছিল পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর ই-তৈয়্যবা। এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন হারুন ইজহার।

২০০৯ সালের শেষের দিকে খবর পাওয়া যায়, যে কোনো সময় ঢাকার দুটি দূতাবাসে জঙ্গি হামলা হতে পারে। এ তথ্যের ভিত্তিতে ও একটি টেলিফোন কলের সূত্র ধরে জানা গিয়েছিল, হামলার ছক হারুনের বাবা মুফতি ইজহারুল ইসলামের মাদ্রাসায় বসেই করা হয়েছিল। এর সঙ্গে যুক্ত আন্তঃদেশীয় কয়েকজন জঙ্গি মুফতি ইজহারুলের মাদরাসায় অবস্থান করছিলেন। এ তথ্য পেয়েই গোয়েন্দা পুলিশ ওই মাদ্রাসায় অভিযান চালায়, গ্রেপ্তার করা হয় ইজহারুল ইসলামের ছেলে হারুন ইজহার এবং পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরভিত্তিক সংগঠন সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়্যবার সদস্য ও ভারতীয় নাগরিক শহিদুল, সালাম, সুজন ও আল আমিন ওরফে মইফুলকে।

মুফতি হারুন ইজহার কওমী মাদ্রাসার আওতায় ‘মানহাজি’ নামে পরিচিত একটি গ্রুপ হেফাজতের মধ্যে নতুন সংগঠন ‘যুব হেফাজত’ করারও একটি প্রস্তাব ফেসবুকে করেছে বলে অভিযোগ করা হয় র্য্যাবের পক্ষ থেকে।

এছাড়া হারুন সাম্প্রতিক সময়ে জনসাধারণের মাঝে উগ্রবাদের উসকানি দিয়েছে জানিয়ে র্য্যাব জানায়, মুফতি হারুন ইজহার গাজওয়াতুল হিন্দের সূচনা করে বলে বিভিন্ন স্থানে বিবৃতি দিয়েছে এবং জিহাদ ‘ফরজ’ হয়েছে বলেও ঘোষণা দিয়েছেন।

হারুনের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় ১৮টি মামলা রয়েছে। পর্যায়ক্রমে সবকটি মামলাতেই তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে বলে জানিয়েছেন র্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক।

হাটহাজারীর সহিংসতায় মদদদাতা হারুন

মুফতি হারুন ইজাহার চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে সহিংসতার ঘটনায় মদদদাতা হিসেবে দাবি করেছে র্যাব।

বৃহস্পতিবার বিকেলে র্যাব-৭ চট্টগ্রামের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মশিউর রহমান জুয়েল বলেন, ‘হাটহাজারীতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার মদদদাতা ছিলেন হারুন ইজহার। ঘটনার পর থেকে তিনি নজরদারিতে ছিলেন। গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তার জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

হাটহাজারী থানায় হওয়া মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। পরে তাকে নগরের পতেঙ্গায় র্যাব-৭ কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে র্যাব।

গেল ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আসার দিন হাটহাজারীর থানা ভবন, ভূমি অফিস, ডাকবাংলোতে হামলা হয়। সেসময় পুলিশের গুলিতে চারজন নিহত হন।

অন্যদিকে, হারুন ইজহারের আইনজীবী মোহাম্মদ আবদুস সাত্তার বলেন, মুফতি হারুন ইজাহার থাকেন নগরের লালখান বাজারে। তিনি হাটহাজারীর ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। তাকে রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।

হারুন ইজহার কারাগারে

মুফতি হারুন ইজহারকে বৃহস্পতিবার রাতে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। চট্টগ্রাম সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম আঞ্জুমান আরার ভার্চুয়াল আদালত এ আদেশ দেন।

চট্টগ্রাম জেলা কোর্ট পরিদর্শক হুমায়ুন কবির এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, হাটহাজারী থানায় করা তিন মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো রিমান্ড আবেদন ছিল না।

তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের হাটহাজারী মডেল থানায় সরকারি বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মদদদাতা হিসেবে অভিযোগ আনা হয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর