বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কাউন্সিলর খোরশেদের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ সেই নারীর

  •    
  • ২৬ এপ্রিল, ২০২১ ২৩:১৪

‘এমন কোনো জায়গা নাই সে আমাকে হ্যারাস করেনি। তার যদি লজ্জা থাকত তাহলে এমন করত না। কারণ, সে জানে আমার কাছে তার কী কী প্রমাণ আছে। আমি দেশে আসলে এই সকল প্রমাণ সবার সামনে দেখাব।’

করোনায় আক্রান্ত মৃত ব্যক্তিদের দাফন-সৎকার করে আলোচিত নারায়ণগঞ্জের কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের বিরুদ্ধে পাল্টা হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন সেই নারী।

ফেসবুক লাইভে এসে সাইদা আক্তার বলেন, ‘এমন কোনো জায়গা নাই সে (খোরশেদ) আমাকে হ্যারাস করেনি। তার যদি লজ্জা থাকত তাহলে এমন করত না। কারণ সে জানে আমার কাছে তার কী কী প্রমাণ আছে। আমি দেশে আসলে এই সকল প্রমাণ সবার সামনে দেখাব।’

সাইদার ভাই সাইফুল ইসলাম নিউজবাংলাকে জানান, রোববার রাত আড়াইটার দিকে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লাইভে আসেন তার বোন। এ সময় তিনি দুবাইতে অবস্থান করছিলেন।

এর আগে ওই নারীর বিরুদ্ধে হেনস্তার অভিযোগ করেন কাউন্সিলর খোরশেদ। সস্ত্রীক লাইভে এসে কেঁদে ফেলেন তিনি। দাবি করেন, সাইদাকে বিয়ে করতে তাকে চাপ দিচ্ছেন। তিনি রাজি না হওয়ায় দিয়েছেন হুমকি। ক্ষতি করতে চেয়েছেন স্ত্রী ও সন্তানের।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার এই অভিযোগ নারায়ণগঞ্জে আলোচনার সৃষ্টি করে। এর এক দিন পরই তার বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করলেন সাইদা।

ফেসবুক লাইভে এসে সাইদা আক্তার বলেন, ‘আমি একজন ব্যবসায়ী। ২০০৩ সাল থেকে ব্যবসা শুরু করেছি। বর্তমানে একটি কোম্পানির মালিক। ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর খোরশেদ আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এনেছে, তা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।

‘খোরশেদ বলেছে আমি ওনার বাসায় কাজি নিয়ে গিয়েছি। রাজনীতি করা একজন ব্যক্তি যিনি করোনা হিরো নামে পরিচিত, তার বাসার কাছে যাওয়ার সাহস একজন নারীর কীভাবে হয়। একজন মহিলা কি কাজি নিয়ে তার বাসার সামনে হাজির হতে পারে, এটা নারায়ণগঞ্জের মানুষের কাছে আমার প্রশ্ন।’

তিনি বলেন, ‘খোরশেদ ও তার ওয়াইফ (স্ত্রী) দিনের পর দিন আমাকে বিরক্ত করেছে। বিভিন্নভাবে আমাকে হয়রানি করছে। সে কয়েকবার পুলিশ ও র‌্যাবের কাছে গিয়েছে কিন্তু কখনও পরিপূর্ণ কাগজ দেখাতে পারেনি। সে অভিযোগ করেছে আমি নিজেকে বিসিএস ক্যাডার হিসেবে পরিচয় দিই। আমি এতটা মূর্খ হয়ে যাই নাই যে নিজেকে এভাবে প্রমাণ করব। সে যদি এই ব্যাপারে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারে, তাহলে আমার যে শাস্তি হবে আমি তা মেনে নেব।’

সাইদা অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাকে নিয়ে সে অকথ্য ভাষা ব্যবহার করাতে আমি তাকে কয়েকটি মেসেজ দিয়েছি। যেন তিনি এটা না করে কিন্তু তারপরও সে বিভিন্নভাবে আমাকে হয়রানি করেছে। সে অভিযোগ এনেছে আমি তার বউ ও বাচ্চাদের মেরে ফেলার চেষ্টা করেছি এবং কয়েকবার মেসেজের মাধ্যমে হুমকি দিয়েছি। পারলে সে এই রকম কোনো একটা মেসেজ বা রেকর্ড দেখাক যে আমি হুমকি দিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগে আমি তার বাসার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় তার লোকেরা আমার গাড়ির পেছন থেকে দৌড়ে সামনে আসে। এই দেখে আমি তার বাসার সামনে গিয়েছি তখন এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তার (খোরশেদ) স্ত্রী আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে এবং আমার গায়ে হাত তোলে। তখন ভয়ে আমার ড্রাইভার পালিয়ে যায়।

‘পরে আমি থানায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করি। শুধু সম্মানের ভয়ে আমি এত দিন চুপ ছিলাম। কিন্তু এখন সে আমার মানসম্মান নিয়ে খেলা করছে। কিন্তু সে এই ব্যপারে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারবে কী। তাদের এই আচরণের ব্যাপারে আমি কয়েকবার মীমাংসা করার জন্য অনুরোধ করেছি। তার ভাই তৈমুর আলম খন্দকারকে জানিয়েছি কিন্তু তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।’

সাইদা বলেন, ‘আমি দেশের বাইরে চলে আসার পরই তাদের সব মনে পড়েছে। আমি মেয়র আইভী ও এমপি শামীম ওসমানের কাছে আমার ও বাচ্চাদের সুরক্ষা দাবি করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এমন কোনো জায়গা নাই সে আমাকে হ্যারাস করেনি। তার যদি লজ্জা থাকত তাহলে এমন করত না। কারণ, সে জানে আমার কাছে তার কী কী প্রমাণ আছে। আমি দেশে আসলে এই সকল প্রমাণ সবার সামনে দেখাব।’

খোরশেদ যা বলেছিলেন

শনিবার রাতে লাইভে এসে খোরশেদ এক নারীর দ্বারা হেনস্তার শিকার হচ্ছেন বলে জানান। ওই নারীর পরিচয় দিতে গিয়ে খোরশেদ বলেন, ‘তার নাম সাইদা আক্তার। এরই মধ্যে তার তিনটি বিয়ে হয়েছে। তিনি ব্যবসায়ী। তার দুই ছেলে-মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। বিভিন্ন উচ্চপদস্থ লোকের সঙ্গে তার পরিচয় আছে। তিনি নিজেকে বিসিএস ক্যাডার পরিচয় দিয়ে মানুষকে জিম্মি করেন। মানুষের সঙ্গে ভালো ভালো কথা বলে বিভিন্ন স্ক্রিনশটকে কেন্দ্র করে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা করেন।’

কাউন্সিলর খোরশেদ ও তার স্ত্রী

কাউন্সিলর খোরশেদ বলেন, ‘আমি করোনার শুরু থেকেই আক্রান্তদের সেবা প্রদান করি ও সম্মুখে থেকে লড়াই করি, দাফন-সৎকার করি। একপর্যায়ে গত মে মাসে আমি ও আমার স্ত্রী করোনায় আক্রান্ত হই। এ সময় অক্সিজেনের অভাবে আমার স্ত্রীকে একপর্যায়ে আইসিইউতে ভর্তি করতে হয়। তখনই মনে হয় অক্সিজেনের জন্য করোনায় আক্রান্ত যারা সমস্যায় পড়বেন, তাদের অক্সিজেন সাপোর্ট দেব বিনা মূল্যে। এ সময় একটি সংবাদের নিচে এ নারী কমেন্ট করে তিনি অক্সিজেন দিতে চায় এবং আমার সঙ্গে ফেসবুকে যোগাযোগ করে অক্সিজেন সিলিন্ডার দেয়। তখন থেকেই তিনি আমার সঙ্গে ফেসবুকে কানেকটেড হয় এবং কথা বলা শুরু করে।‘একপর্যায়ে আমি বুঝতে পারি তার মতলব ভিন্ন এবং আমি তাকে তখন দূরে সরাতে চেষ্টা করি এবং বোঝাই। তার ভার্সিটিপড়ুয়া ছেলেকেও আমি ঘটনা জানাই, তখন সে আমাকে বলে তার মা হয়তো দুষ্টুমি করছে এ রকম কিছু সম্ভব নয়। তাতেও কাজ হবে না বুঝে আমি নভেম্বর-ডিসেম্বরে তার ভগ্নিপতিকে জানাই। এতে ওই নারী আরও ক্ষুব্ধ হয় এবং আমার পেছনে ওঠেপড়ে লাগে।’তিনি বলেন, ‘একবার ওই নারী আমাকে বিয়ে করবে ঠিক করে গাড়ি নিয়ে কাজি নিয়ে আমার বাড়িতে আসে আমাকে উঠিয়ে নেয়ার জন্য। পরে আমার স্ত্রী ও লোকজন তাকে আটকায়। সে আমাদের জীবন বিষিয়ে তুলেছে। আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষসহ সবার কাছে গেছে, তবে আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ যে সবাই তার কূটকৌশল বুঝতে পেরে তাকে অবজ্ঞা করেছে।’খোরশেদ বলেন, ‘সম্মানকে ভয় পাই বলেই এত দিন মুখ খুলিনি। আমি ধৈর্য ধরেছি কারণ আল্লাহ হয়তো একটি ফয়সালা করবেন। তবে দুদিন আগে নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় দুটি পত্রিকায় আমাকে জড়িয়ে এ-সংক্রান্ত নিউজ হওয়ায় আমি নিজেই বিষয়টি সবার কাছে বলতে এসেছি।’তিনি আরও বলেন, ‘২১ জানুয়ারির পর থেকে হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার ও টেলিফোনে আমাদের হুমকি দিচ্ছে এবং হত্যার কথাও জানাচ্ছে ওই নারী। আমার পরিবারের সবাইকে মারাত্মক মানসিক অত্যাচার করছেন। সর্বশেষ আমার স্ত্রী ও সন্তানকে তুলে নিয়ে হত্যা করবে বলেও হুমকি দেয়। আমি এসব ঘটনায় শুরু থেকেই সরকারি সংশ্লিষ্ট সব দপ্তর ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে লিখিতভাবে জানিয়েছি এবং অবহিত করেছি। বিভিন্ন ঘটনা ঘটার পরপরই তাদের অবহিত করা হয়।’নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম নিউজবাংলাকে বলেছেন, ‘কাউন্সিলর খোরশেদ যেসব অভিযোগ করেছেন পুলিশ সে বিষয়ে তদন্ত করছে। সত্যতা পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

কে এই সাইদা আক্তারসাইদা আক্তারের পৈতৃক বাড়ি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার ইসদাইর এলাকায়। বাবার নাম মৃত জহিরুল ইসলাম।জহিরুলের ১০ সন্তানের মধ্যে সাইদা তৃতীয়।

শহরের চানমারি এলাকায় বাড়ি করেছেন সাইদা। ৯ তলা ভবনের তৃতীয় তলায় ছেলে-মেয়েকে নিয়ে তিনি বসবাস করেন। নির্মাণাধীন ভবনটির তৃতীয় তলা পর্যন্ত কাজ শেষ হয়েছে।

চানমারি এলাকায় সাইদার ৯ তলা বাড়ি

সাইদার ভাই সাইফুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা পাঁচ ভাই ও পাঁচ বোন। এর মধ্যে সাইদা তৃতীয়। ২০১৬ সালে তিনি (সাইদা) তারেকুর রহমান স্বপন নামে একজনকে বিয়ে করেন। এর আগে তিনি আরও দুইজনকে বিয়ে করেছিলেন।‘আপার ফিলিং স্টেশনের ব্যবসা আছে। আগে তার তেলের ব্যবসা ছিল। ব্যবসার কাজে তিনি বর্তমানে দুবাই আছেন।’মোবাইল ফোনে নিউজবাংলার কথা হয় তারেকুর রহমান স্বপনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ২০১৬ সালের ৩ নভেম্বর আমাদের বিয়ে হয়। কিন্তু সে কোথাও প্রকাশ করেনি আমি তার স্বামী।‘সাইদা তার প্রথম স্বামীসহ আরও কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত। এ নিয়ে তার সঙ্গে ঝগড়া হয়। ২০১৭ সালের ১৩ ডিসেম্বর আমি ও আমার মা রুফিয়া বেগমের নামে মামলা করে সে। এজাহারে ৫ লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে আমাদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়। এখন পর্যন্ত সেই মামলায় আদালতে হাজিরা দিয়ে যাচ্ছি।’

এ বিভাগের আরো খবর