বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘ভয়ানক রাত, মরার আগ পর্যন্ত মনে থাকবে’

  •    
  • ২৩ এপ্রিল, ২০২১ ২৩:২২

‘আগুনে আমরা ছয়তলায় আটকা পড়ি। প্রায় ২ ঘণ্টা পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জানালার গ্রিল কেটে আমাদের বের করেন। এরপর তাদের মইয়ের উপরে করে পাশের একটি নির্মাণাধীন ভবনে নামিয়ে দেন।’

পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় আবাসিক ভবনে রাসায়নিক গুদামে অগ্নিকাণ্ডে মাকে নিয়ে বেঁচে ফেরার অভিজ্ঞতা কখনও ভুলবেন না বলে জানিয়েছেন ইউসুফ নামের এক বাসিন্দা।

তিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। ভাড়া থাকেন আরমানিটোলার ৯/১১ হাজি মুসা ম্যানসনের ছয়তলায়। আগুনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার বর্ণনা দেন তিনি।

বৃহস্পতিবার রাতে সাহরির আগে পড়ছিলেন ইউসুফ। একটু পরই তার মাকে ঘুম থেকে ডেকে সাহরি খাবেন চিন্তা করেছিলেন। হঠাৎ দেখেন ফ্রিজের নিচ দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে।

ইউসুফ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ফ্রিজের নিচ দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে ভেবে আমি লাইন অফ করে দিই। এর পরে মাকে ডাক দিই। আমি আর আমার মা দেখলাম বাসার মেইন দরজার নিচ দিয়ে ধোঁয়া আসছে। এর পর নিচের সবার চিল্লাচিল্লি শুনে বুঝতে পারি বাসায় আগুন লেগেছে।’

ইউসুফ বলেন, ‘আমরা আটকা পড়ি। প্রায় ২ ঘণ্টা পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জানালার গ্রিল কেটে আমাদের বের করেন। এরপর তাদের মইয়ের উপরে করে পাশের একটি নির্মাণাধীন ভবনে নামিয়ে দেন। এ এক ভয়ানক রাত, যেটা মরার আগের দিন পর্যন্ত মনে থাকবে।’

বৃহস্পতিবার রাত ৩ টা ১৮ মিনিটে এই ভবনের নিচতলায় রাসায়নিকের গুদামে আগুন লাগে। এতে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত ২১ জন।

আহতদের মধ্যে মোসাম্মত রেহানার স্বামী রয়েছেন। দুই সন্তানকে নিয়ে এই দম্পতি থাকেন ভবনটির তিনতলার একটি ফ্ল্যাটে।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন ‘আমার দুই সন্তান আল্লাহর রহমতে সুস্থ আছে। কিন্তু আমার স্বামী এখন হাসপাতালে ভর্তি। আমার সব শেষ হয়ে গেছে।’

শুক্রবার বিকেলে ভবনের সামনে গিয়ে দেখা গেছে, দক্ষিণ সিটি করপোশেনের ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ভবনের দ্বিতীয় তলা ও নিচতলার গুদাম থেকে রাসায়নিক দ্রব্য বের করছেন কয়েকজন শ্রমিক। দুটি বড় পিকআপ ও পাঁচটি ছোট পিকআপে রাসায়নিক দ্রব্য নিয়ে যাচ্ছে সিটি করপোরেশন।

ভবনটির দ্বিতীয় তলায় দেখা যায়, দেয়াল কালো হয়ে গেছে ধোঁয়ায়। সিঁড়ি দিয়ে উঠে হাতের বা পাশের ফ্ল্যাটটিতে থাকে একটি পরিবার। ফ্লাটের ভেতরে দেখা যায় পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সহায়তায় রাসায়নিক দ্রব্য নামিয়ে আনছেন শ্রমিকরা। এই ফ্ল্যাটের সব কিছুই অক্ষত আছে। তবে মেঝে বেশ উত্তপ্ত।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শ্রমিক বলেন, ‘এই ফ্যালাটে সারা ঘর ভরা মাল (রাসায়নিক দ্রব্য)। বারান্দায়, খাটের নিচে সব হানে রাইখা দিছে এডি। ঘরের ভিতরে যে গরম এডি বাইর করতে আমাগো খবর হইয়া যাইতাছে। হ্যারা মনে হয় এর উপরে খায়, এর উপরে ঘুমায়।’

তবে ওই পরিবারের কোনো সদস্যকে পাওয়া যায়নি। সব রাসায়নিক দ্রব্য বের করার পর ভবনটিকে সিলগালা করে দিয়েছে সিটি করপোরেশন। এ দিকে ভবনের মালিক পলাতক। ভাড়াটিয়ারা তাদের নিজ নিজ ফ্ল্যাটে তালা দিয়ে চলে গেছেন।

রাসায়নিক অপসারণ কার্যক্রম তদারকিতে নেতৃত্ব দেন ডিএসসিসির অঞ্চল-৪-এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা হায়দার আলী।‌

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ছয়তলা এই ভবনের নিচতলায় ১২টি রাসায়নিক দোকান ও গুদাম ছিল। এ সব দোকান পরিচালনায় সিটি করপোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স, ফায়ার সার্ভিস ও বিস্ফোরক পরিদপ্তরের ছাড়পত্র ছিল না। এখন গুদাম ও দোকানগুলোতে কীভাবে আগুন লেগেছে, তা জানা যায়নি। ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে ঝুঁকি এড়াতে ওই ভবনের দোকান এবং গুদাম থেকে রাসায়নিক দ্রব্য অপসারণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ভবনটির বিদ্যুৎ-সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে বাড়ির ভেতর এখনও ধোঁয়া ও গরম আছে। ফায়ার সার্ভিস বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে।

এক প্রশ্নের জবাবে নির্বাহী কর্মকর্তা হায়দার বলেন, ‘আমরা বাড়ির মালিকের কোনো সন্ধান পাইনি। তবে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘পুরান ঢাকায় রাসায়নিক ব্যবসা করার জন্য কাউকেই ট্রেড লাইসেন্স দেয়া হয়নি। আগে যাদের দেয়া হয়েছিল, কয়েক বছর আগ থেকেই তাদের লাইসেন্স নবায়ন বন্ধ রয়েছে।’

ভবন ও গুদাম মালিকের বিরুদ্ধে মামলা

অবহেলাজনিত মৃত্যু ঘটানো এবং অবৈধ রাসায়নিক পদার্থ রাখার অভিযোগে ভবন মালিক ও গুদাম মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহিন ফকির বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।

এ বিভাগের আরো খবর