রাজধানীর ধোলাইরপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ হলে সেটি ভেঙে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেয়ার হুমকি দেয়া কওমি আলেম নূর হোসাইন নুরানীকে রিমান্ডে পাওয়ার আবেদন করেছে পুলিশ।
মধ্যরাতে গ্রেপ্তারের পর শুক্রবার সকালে মুন্সিগঞ্জ জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে তুলে পুলিশ তাকে সাত দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করে।
আগামী ২৭ এপ্রিল শুনানি হবে জানিয়ে তাকে কারাগারে পাঠান বিচারক নাজনীন রেহানা।
পুলিশ জানিয়েছে নুরানী হেফাজতের নানা কর্মসূচিতে সক্রিয় থাকেন। পাশাপাশি আহমদিয়াবিরোধী আন্দোলন করা খতমে নবুওয়াত আন্দোলন বাংলাদেশ-এর সভাপতি।
মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার মুন্সীরহাট মাদ্রাসা থেকে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে কোন মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে তা এখনও জানায়নি পুলিশ।
মুন্সিগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘হেফাজতের প্রত্যেকটি কর্মসূচিতে সামনের কাতারে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন নূর হোসেন নুরানী। হেফাজত নেতা মামুনুল হকের পক্ষে বিভিন্ন জায়গায় বক্তব্য প্রদান এবং বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় বিষয় নিয়ে স্পর্শকাতর মন্তব্য করেছেন তিনি।’
মুন্সিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মিনহাজুল ইসলাম বলেন, নুরানীর বিরুদ্ধে হেফাজতের ডাকা হরতালে বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরিতে উসকানি দেয়া ছাড়াও বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে আগে কোনো মামলা আছে কি না সে বিষয়ে খোঁজ নেয়া হবে।
গত ১৪ নভেম্বর ধোলাইরপাড়ের এই সমাবেশেই বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ হলে বুড়িগঙ্গায় ফেলার হুমকি দেন নুরানী
সম্প্রতি এক বিক্ষোভ সমাবেশে মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য মৃণাল কান্তি দাসের ভাতিজা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের আইন বিষয়ক উপসম্পাদক আপন দাসকে মুন্সিগঞ্জে ঢুকতে দেয়া হবে না বলে হুমকি দিয়েছিলেন নুর হোসেন নুরানী।
রাজধানীর ধোলাইরপাড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণের বিরুদ্ধে গত ১৪ নভেম্বর একটি সমাবেশ করে ইসলামী আন্দোলন। সেখানে বক্তব্য রাখেন নুর হোসেন নুরানীও।
সেদিন তিনি বলেন, ‘মূর্তি কীভাবে ভাঙতে হয় নবীপ্রেমিক মুসলমানরা জানেন। মূর্তির সঙ্গে বাংলাদেশের মুসলমানরা কোনো দিন আপস করবে না। ধোলাইরপাড়ে মূর্তি বানানো হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভেঙে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেয়া হবে।’
এই বক্তব্যে সে সময় তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। নুরানীর সেই সমাবেশের পর হেফাজতও এ নিয়ে কথা বলে। তারাও ভাস্কর্য নির্মাণ হলে কঠোর আন্দোলনের হুমকি দেয়।
আর এর প্রতিক্রিয়ায় সরকারপন্থিরাও মাঠে নামে। হেফাজতের হুমকির প্রতিবাদে মাঠে নামেন সরকারি কর্মকর্তারা। এমনকি বিচারকরাও রাজপথে নেমে প্রতিবাদ জানিয়ে জাতির পিতার সম্মান অক্ষুণ্ণ রাখার দাবি জানান।
বঙ্গবন্ধুর সেই ভাস্কর্যটি এখনও স্থাপন করা হয়নি। বরং সেটি সেখান থেকে সরিয়ে নেয়ার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে
তবে একপর্যায়ে পিছু হটে সরকার। দুই পক্ষের মুখোমুখি অবস্থানের মধ্যে সে সময় কওমিপন্থিরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সঙ্গে দেখা করেন ডিসেম্বরে। পরে এ নিয়ে আর কোনো পক্ষ কিছু বলেনি।
সেই ভাস্কর্যটি অবশ্য এখনও স্থাপন করা হয়নি। বরং প্রকল্প পরিচালক ইঙ্গিত দিয়েছেন, ধোলাইরপাড়ের সেই জায়গা থেকে সরিয়ে অন্য কোথাও সেটি স্থাপন করা হবে। যদিও এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য আসেনি।