করোনাভাইরাসের টিকার কোনো ডোজ না নিয়েই টিকা গ্রহণের সনদ পাওয়ার ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, আইটিসি মন্ত্রণালয় এবং হাসপাতালের কর্মকর্তারা একে অন্যের ওপর দায় চাপাচ্ছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, টিকা গ্রহীতাদের জন্য সরকারের বিশেষ মোবাইল অ্যাপের সফটওয়্যার জটিলতার কারণে এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে বেশ কয়েকদিন ডেটাবেজ হালগাদ করা যায়নি। এ কারণে তথ্যবিভ্রাটের বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে।
টিকার কোনো ডোজ না নিয়েও টিকা গ্রহণের সনদ পেয়েছেন নিউজবাংলার প্রতিবেদক এস এম নূরুজ্জামান। টিকা নিতে তিনি অনলাইনে নিবন্ধন করেছিলেন প্রায় তিন মাস আগে। তবে ঢাকার বাইরে থাকায় এবং অসুস্থতার কারণে তিনি টিকা নেয়ার দুটি নির্ধারিত তারিখের কোনোটিতেই টিকাদান কেন্দ্রে যেতে পারেননি। এরই মধ্যে ২০ এপ্রিল তিনি অনলাইনে নিজের নামে টিকা গ্রহণের সনদ পান।
আরও পড়ুন: করোনার টিকা না নিয়েই মিলল সনদ!
এই ঘটনার পাশাপাশি টিকার দুটি ডোজ নেয়ার পরেও সনদ না পাওয়ার অভিযোগ পেয়েছে নিউজবাংলা।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ের জাতীয় অর্থোপেডিক ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি টিকার প্রথম ডোজ নেন মইনুল ইসলাম ও রিজিয়া হক দম্পতি। এরপর ১৫ এপ্রিল নেন টিকার দ্বিতীয় ডোজ। এরপর রিজিয়া হক অনলাইনে টিকা গ্রহণের সনদ পেলেও তার মইনুল ইসলামের সনদ আসেনি।
মইনুল ইসলাম নিউজবাংলাকে জানান, সুরক্ষা অ্যাপে ঢুকলে তাকে বলা হচ্ছে, দ্বিতীয় ডোজ এখনও সম্পন্ন হয়নি।
এ ধরনের ঘটনার কোনো পরিষ্কার ব্যাখ্যা দিতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।
নূরুজ্জামানের সনদ পাওয়ার বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (এমআইএস) পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আসলে কোথায় ভুল হলো বুঝতে পারছি না। এটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোনো ভুল নয়। টিকার সনদে যে কেন্দ্রের নাম আসছে সেই কেন্দ্রে থেকে ভুল তথ্য দিতে পারেন।’
রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল (সিপিএইচ) থেকে নুরুজ্জামানের টিকা পাওয়ার কথা ছিল। সিপিএইচ-এর উপপরিচালক ডা. মো. এমদাদুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখানে আমাদের কোনো ভুল নেই। একজন মানুষ টিকা না নিলে আমরা কীভাবে তার ডেটাবেজ সফটওয়্যার আপ করব।’
অন্যদিকে, মইনুল ইসলামের সনদ পাওয়া নিয়ে জটিলতার বিষয়ে জাতীয় অর্থোপেডিক ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের আইটি বিভাগের দায়িত্বরত কর্মকর্তা রিপন হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মূল ঝামেলা হলো স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও আইসিটি বিভাগের। তারাই এ কাজের সঙ্গে যুক্ত।’
সুরক্ষা অ্যাপে কারিগরি জটিলতার বিষয়টি জানিয়ে রিপন হোসেন বলেন, ‘সফটওয়্যার জটিলতার কারণে গত ৭ এপ্রিল থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত যারা টিকা নিয়েছেন, তাদের কারও কারও তথ্য আমরা ডেটাবেজে তুলতে পারছি না।
‘বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে লিখিত, মৌখিক এমনকি সশরীরে গিয়ে জানানো হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছে, বিষয়টি তারা আইসিটি বিভাগকে জানাবে।’
যাদের তথ্য ১৫ এপ্রিলের পরে হালনাগাদ করা হয়েছে তারা ২৩ এপ্রিল থেকে সনদের এসএমএস পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন রিপন হোসেন।
টিকা না দিয়েও সনদ কীভাবে পাওয়া সম্ভব, এমন প্রশ্নে জাতীয় অর্থোপেডিক ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের আইটি বিভাগের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এর কোনো ব্যাখ্যা আমার কাছে নেই। হয়ত ভুল করে করে টিকার সনদ চলে গেছে। আমার মনে হয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও আইসিটি বিভাগের জটিলতার কারণেই এমন হয়েছে।’
সুরক্ষা অ্যাপে কারিগরি জটিলতার বিষয়টি এমআইএস পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমানও স্বীকার করেছেন। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সফটওয়্যারে যে কোনো মুহূর্তে কারিগারি জটিলতা হতে পারে। এটা তো আমাদের হাতে নেই। যেখানে সমস্যা দেখা দিয়েছে, সেখানে তাৎক্ষণিক সমাধানের চেষ্টা করেছি।’
এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহজুড়ে সফটওয়্যারে জটিলতা ছিল কিনা, এমন প্রশ্নের সরাসরি জবাব না দিয়ে তিনি বলেন, ‘দিনক্ষণ হিসাব করে বলতে পারব না। তবে বেশকিছু জায়গা থেকে এমন অভিযোগ আসছে। বিষয়টি নিয়ে দ্রুত কাজ করে সমাধান করা হয়েছে।’
টিকা না নিয়েও সনদ পাওয়ার বিষয়ে বুধবার আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকের সঙ্গে কথা বলেছে নিউজবাংলা। তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যগুলোই আমরা সংরক্ষণ ও ব্যবহার করে থাকি। এক্ষেত্রে কী হয়েছে সেটি তথ্য প্রদানকারী কর্তৃপক্ষই ভালো বলতে পারবে।’