‘শিশুবক্তা’ হিসেবে পরিচিত মাওলানা রফিকুল ইসলামকে এবার রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে গাজীপুরের আদালত।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা এক মামলায় জেলা দায়রা জজ আদালতের বিচারক শেখ নাজমুল নাহারের বেঞ্চ বুধবার দুপুরে রফিকুলের বিরুদ্ধে দুই দিনের রিমান্ডের আদেশ দেয়।
বুধবারই রফিকুলকে ঢাকার মুখ্য মহানগর আদালতের বিচারক চার দিনের ও ময়মনসিংহের মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক এক দিনের রিমান্ডে নিতে আদেশ দিয়েছেন।
রফিকুলের বিরুদ্ধে গাজীপুর মেট্রোপলিটনের বাসন থানায় গত ১১ এপ্রিল ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন জেলা যুবলীগ কর্মী মোস্তাফজিুর রহমান।
হেফাজতের ডাকা হরতালে পুলিশের ওপর হামলা, ভাঙচুর ও নাশকতার অভিযোগে ময়মনসিংহ নগরীর কোতোয়ালি থানায় মামলায়ও তাকে বুধবার সকালে একদিনের রিমান্ডের আদেশ দেয়া হয়।
ভার্চুয়াল শুনানি শেষে বুধবার সকালে রফিকুলকে রিমান্ডে নেয়ার আদেশ দেন জেলার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল হাই। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার বাদী কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক ইফতার শফিক।
তিনি জানান, গত ২৮ মার্চ হরতাল চলাকালে নগরীর চড়পাড়া মোড়ে পুলিশ বক্স ভাঙচুর, বাসে আগুন এবং পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের অনুসারীরা। এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় হওয়া মামলার এজাহারভুক্ত আসামি রফিকুল। তাকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বুধবার আদালতে ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করা হয়। বিচারক একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
একই দিন নাশকতার অভিযোগে রাজধানীর মতিঝিল থানায় এক মামলায় রফিকুলকে চার দিনের জন্য হেফাজতে পেয়েছে পুলিশ।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মতিঝিল জোনাল টিমের পুলিশ পরিদর্শক কামরুল হাসান তালুকদার বুধবার আসামি রফিকুল ইসলামের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।
শুনানি শেষে ঢাকার মুখ্যমহানগর আদালতের (সিএমএম) হাকিম আবু সুফিয়ান মো. নোমানের ভার্চ্যুয়াল আদালত চার দিনের রিমান্ডের আদেশ দেয়।
আদনান শান্ত নামের এক ব্যক্তি মাওলানা রফিকুল ইসলামসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় মামলাটি করেন।
এজাহারে বলা হয়, ইউটিউব ও বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে মাওলানা রফিকুল ইসলাম দেশ ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের উসকানিমূলক বক্তব্য ছড়াচ্ছেন। তার এসব বক্তব্য দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। বিভ্রান্ত হয়ে তারা দেশের সম্পত্তির ক্ষতি করছে।
রাষ্ট্রবিরোধী উসকানিমূলক ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে গত ৮ এপ্রিল রাত সাড়ে তিনটার দিকে রফিকুলকে নেত্রকোণার নিজ বাড়ি থেকে আটক করে র্যাব। ওই সময় তার কাছ থেকে চারটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।
তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একাধিক মামলাসহ কয়েকটি মামলা করা হয়। এর মধ্যে গাজীপুরে করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ১৬ এপ্রিল দুই দিনের পুলিশি রিমান্ডে পাঠায় আদালত।
খর্বকায় ও শিশুতোষ কণ্ঠের অধিকারী হওয়ায় রফিকুলকে অনেকে ‘শিশুবক্তা’ বলে মনে করলেও তিনি নিজে দাবি করেছেন, তিনি মোটেও শিশু নন। তার বয়স ২৬ বছর।
গত ২৫ মার্চ মতিঝিল এলাকায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরবিরোধী মিছিল ও ভাঙচুরের সময় রফিকুল ইসলামকে আটক করেছিল রমনা থানার পুলিশ। সেখানে তিনি মৌখিক আশ্বাস দিয়েছিলেন, আর এমন উসকানিমূলক বক্তব্য দেবেন না।
সে কথা না রাখার কারণ জানতে চাইলে তিনি র্যাবকে জানান, পুলিশের আটকের বিষয়টি তিনি ‘সিরিয়াসলি’ নেননি। ভেবেছিলেন, জনপ্রিয়তার কারণে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে না।