- সেহরির সময় মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে নির্মাণাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রের শ্রমিক মাহমুদ রেজার। মাকে জানিয়েছিলেন, কয়েক দিন ধরে বিদ্যুৎকেন্দ্রে ঝামেলা হচ্ছে, হতে পারে বড় কোনো গণ্ডগোল।
সে কথা শুনে মা বলেছিলেন, ফজরের নামাজ পড়েই বাড়ি ফিরে আসতে। রাজিও হয়েছিলেন মাহমুদ। বাড়ি তিনি ফিরেছেন। তবে সুস্থ অবস্থায় নয়; নিথর দেহে।
মাহমুদের বাড়ি বাঁশখালীর গন্ডামারা ইউনিয়নের পূর্ব বড়ঘোনায়। বাড়ি থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে এস আলম গ্রুপের এস এস পাওয়ার প্ল্যান্ট নামের ওই বিদ্যুৎকেন্দ্র। সেখানে শনিবার সকালে শ্রমিকদের বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে পাঁচজন নিহত হন। তাদেরই একজন মাহমুদ।
বাড়ির পাশেই রোববার সন্ধ্যায় তার দাফন হয়। সেখানে গিয়ে কথা হয় তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে।
তারা জানালেন, মীর খান নামে এলাকায় পরিচিত ছিলেন ১৮ বছর বয়সী মাহমুদ। পড়তেন স্থানীয় একটি মাদ্রাসার দশম শ্রেণিতে। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট তিনি। তিন বছর আগে বাবার মৃত্যু হয়।
কাজের জন্য ওমান পাড়ি জমান তার বড় ভাই। করোনায় সেখানে কর্মহীন হয়ে পড়েন তিনি। এরপর ঋণে চলে তাদের সংসার। সেই ঋণ বাড়তে থাকলে মাহমুদ কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন।
প্রতিবেশীদের অনেকে এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টে কাজ করেন। তাদের হাত ধরেই মাত্র ১০ দিন আগে ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রে খণ্ডকালীন চাকরি নেন মাহমুদ।
তার মা নূরাইন জান্নাত নিউজবাংলাকে জানান, বিদ্যুৎকেন্দ্রে কিছু ঝামেলা হচ্ছে, এমন কথা ফোনে বলেছিলেন মাহমুদ।
তিনি জানান, শুক্রবার রাতে তার সঙ্গে কথা হয়েছিল মাহমুদের। সেহরির সময়ও কথা হয়। ছেলে বলেছিল, নামাজটা পড়েই চলে আসবে। কিন্তু ওরা জলজ্যন্ত ছেলেকে আসতে দিল না, লাশ পাঠাল।
প্রতিবেশী আব্দুস ছালাম বলেন, মধ্যবিত্ত পরিবার হওয়ায় লকডাউনে অর্থকষ্টে পড়ায় মাহমুদকে চাকরিতে যেতে সম্মতি দিয়েছিলেন তার মা। পাশাপাশি বড় ভাইয়ের বিদেশ যাওয়া নিয়ে তিন লাখেরও বেশি টাকার ঋণে জড়িয়ে যায় তার পরিবার। এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টে চাকরি করতে যাওয়ার এটাই মূল কারণ ছিল।
পূর্ব বড়ঘোনা ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আলী হোছাইন এসেছিলেন পরিবারটিকে সান্ত্বনা দিতে। পরিবারের সদস্য ও এলাকার লোকজনের সঙ্গে তিনি এই শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনার বিচার দাবি করেছেন।