জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক তারেক শামসুর রেহমানের হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল, এরপর তিনি পড়ে গেলে মাথার হাড় ভেঙে রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয়।
তারেক শামসুর রেহমানের মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে নিউজবাংলাকে এমন ধারণা জানান শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সেলিম রেজা।
রাজধানীর উত্তরার অ্যাপার্টমেন্ট প্রজেক্টে নিজের ফ্ল্যাট থেকে শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অধ্যাপক তারেক শামসুর রেহমানের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগে বন্ধ ফ্ল্যাটে ডাকাডাকি করে কোনো সাড়া না পেয়ে প্রতিবেশীরা পুলিশে খবর দেন। পরে দরজা ভেঙে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
রাজউক উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রজেক্ট দোলনচাঁপা ভবন-১, ১৩০৪ নম্বর ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন রেহমান। তার পরিবারের সদস্যরা আমেরিকায় থাকেন, ভাই থাকেন পিরোজপুর। অধ্যাপক রেহমানের মরদেহ ফ্ল্যাটের টয়লেটের সামনে পড়েছিল। মৃত্যুর আগে তিনি বমি করেছেন বলে প্রাথমিক আলামতের ভিত্তিতে জানায় পুলিশ।
আরও পড়ুন: তারেক শামসুর রেহমানের শেষ দিনগুলো ছিল নিঃসঙ্গ
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রোববার দুপুরে অধ্যাপক রেহমানের মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়।
হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সেলিম রেজা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তিনি হার্ট অ্যাটাকের পরে বাথরুমের সামনে পড়ে যান। তিনি ডান কাত হয়ে পড়েছিলেন, এ কারণে ডান হাতে আঘাত পেয়েছেন। পড়ে যাওয়ার সময় মাথায় আঘাত পান। এতে মাথার হাড় ভেঙে ভেতরে রক্তক্ষরণ হয়। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট চূড়ান্ত হলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।’
অধ্যাপক রেহমানের প্রতিবেশী সাইদুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দুপুরে ময়নাতদন্তের পরে তার মরদেহ পরিবার বুঝে পায়। বেলা সাড়ে ৩টায় উত্তরার অ্যাপার্টমেন্ট প্রজেক্টের ১৮ নম্বর সেক্টরের জামে মসজিদে জানাজা সম্পন্ন হয়। এরপর তারেক শামসুর রেহমানের মরদেহ তার ছোট ভাই গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরে নিয়ে গেছেন। সেখানে তাকে দাফন করা হবে।’
অধ্যাপক তারেক শামসুর রেহমান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন। বছর দুয়েক আগে তিনি অবসরে যান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর তারেক শামসুর রেহমান আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রিধারী।
আন্তর্জাতিক রাজনীতি, আন্তরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক ও বৈদেশিক নীতি এবং তুলনামূলক রাজনীতি নিয়ে লেখালেখিতে সুনাম রয়েছে তার। এসব বিষয়ে রয়েছে তার বেশ কিছু গ্রন্থ। এর মধ্যে ‘বিশ্ব রাজনীতির ১০০ বছর’ অন্যতম।
অধ্যাপনার পাশাপাশি ড. রেহমান পত্রপত্রিকায় সমকালীন বিশ্ব পরিস্থিতি নিয়ে নিয়মিত কলাম লিখতেন।
তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে- ইরাক যুদ্ধ পরবর্তী আন্তর্জাতিক রাজনীতি, গণতন্ত্রের শত্রু-মিত্র, নয়া বিশ্বব্যবস্থা ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি, বিশ্ব রাজনীতির চালচিত্র, উপ-আঞ্চলিক জোট, ট্রানজিট ইস্যু ও গ্যাস রপ্তানি প্রসঙ্গ, বাংলাদেশ: রাষ্ট্র ও রাজনীতি, বাংলাদেশ: রাজনীতির ২৫ বছর, বাংলাদেশ: রাজনীতির চার দশক, গঙ্গার পানি চুক্তি: প্রেক্ষিত ও সম্ভাবনা, সোভিয়েত-বাংলাদেশ সম্পর্ক।