চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে বিদ্যুৎকেন্দ্রে পাঁচ শ্রমিক নিহতের ঘটনায় জেলা প্রশাসন ও পুলিশের গঠিত তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে।
রোববার বেলা ১১টার দিকে তদন্ত কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির এক সদস্য নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সকাল ১১টার দিকে চট্টগ্রামের বাঁশখালী বিদ্যুৎকেন্দ্রে পরিদর্শন করেছি। শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তদন্ত চলছে। আমরা আবারও যাব। বিস্তারিত তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসবে।’ শনিবার সকালে বাঁশখালীর বিদ্যুৎকেন্দ্রে শ্রমিক বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে পাঁচজন নিহত হয়। আহত হয় অন্তত ২০ জন।
নিহতদের মরদেহ রোববার দুপুরে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এর আগে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ মর্গে তাদের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয় বলে জানান জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মহিউদ্দিন মাহমুদ সোহেল।
বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঘটনায় পুলিশ ও এসএস পাওয়ার প্ল্যান্ট কর্তৃপক্ষ শনিবার গভীর রাতে দুটি মামলা করেছে। বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিউল কবির নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে বাঁশখালী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. রাশেদ দুই থেকে আড়াই হাজার অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করেছেন। পাওয়ার প্লান্টের চিফ কো-অর্ডিনেটর ফারুক আহমেদ প্ল্যান্টে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে ২২ জনের নাম উল্লেখসহ ১ হাজার ৪০ থেকে ৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
প্রাণহানির ঘটনা খতিয়ে দেখতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের চার সদস্যের তদন্ত কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থল ঘুরে গেছেন।’
অন্যদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি জাকির হোসেনকে প্রধান করে গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিও কাজ শুরু করেছে। এ কমিটিকেও সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন জানান, কমিটি কাজ শুরু করেছে।
বাঁশখালীতে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ২০১৬ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারি এস আলম গ্রুপের এসএস পাওয়ার লিমিটেডের সঙ্গে ও চীনা প্রতিষ্ঠান সেপকো ও এইচটিজির মধ্যে চুক্তি হয়। ২০১৭ সাল থেকে গণ্ডমারা এলাকায় প্রায় ছয় শ একর জমিতে আড়াই শ কোটি ডলার ব্যয়ে এটির নির্মাণকাজ শুরু হয়।
চুক্তি হওয়ার পর থেকেই গ্রামবাসীদের একটি পক্ষ এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিরোধিতা করেন পরিবেশ দূষিত হওয়ার কথা বলে। আরেকপক্ষ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পক্ষ নেয়।
এর জেরে ২০১৬ সালের এপ্রিলে দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়। তখন নিহত হন চার গ্রামবাসী। আহত হয় পুলিশসহ অন্তত ১৯ জন। এ ঘটনার পাঁচ বছর পর ফের হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকায়।