নড়াইল আধুনিক সদর হাসপাতালের বিভিন্ন খাতের সেবা ফি’র প্রায় ৭০ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদনে ৩৪টি জাল চালানের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।
হাসপাতালটির হিসাবরক্ষক জাহান আরা খানম লাকির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে মঙ্গলবার।
তদন্তে অভিযুক্ত লাকি হাসপাতালের চার মাসের পাওনা ৩ লাখ ৯৬ হাজার ৯৭০ টাকা ব্যাংকে জমা দিয়েছেন বলে জানান।
এ ঘটনায় নতুন করে খুলনা বিভাগীয় তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তিন সদস্যের কমিটিতে প্রধান করা হয়েছে মাগুরা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক স্বপন কুমার কুণ্ডুকে।
লাকি ২০১৯ সালের ১৮ জুলাই নড়াইল সদর হাসপাতালে হিসাবরক্ষক হিসেবে যোগ দেন। যোগ দেয়ার পর বহির্বিভাগ, জরুরি বিভাগ, রোগী ভর্তি, প্যাথলজি, এক্স-রে, আলটাসনোগ্রাফি, কেবিন, অ্যাম্বুলেন্স, অপারেশন, কোভিড-১৯ বাবদ ফিসহ অন্যান্য ফি হাসপাতালে সেবা গ্রহীতাদের কাছ থেকে নেয়া হয়। এসব ফি সোনালী ব্যাংকের চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা হওয়ার কথা।
তবে জানা যায়, ২০১৯ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২০ মাসে প্রায় ৭০ লাখ টাকা ব্যাংকে জমা হয়নি। টাকা জমা না দিয়ে জাল চালান দেখানোর অভিযোগ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার থেকে লাকিকে স্টেশন ত্যাগ করতে নিষেধাজ্ঞা দেয়, সেই সঙ্গে তাকে দায়িত্ব থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেয়া হয়। বিষয়টি তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়।
কমিটির সদস্য সচিব আ. ফ. ম মশিউর রহমান বাবু জানান, তদন্তে ৩৪টি জাল চালানের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। তদন্ত প্রতিবেদন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কাছে জমা দেয়া হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে আরও জানা যায়, একইভাবে এর আগের হিসাবরক্ষক মাহফুজুর রহমান সাত বছরের সেবা ফি’র প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা জমা দেননি। বিষয়টি অডিটে ধরা পড়লে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) যশোর কার্যালয়ে মামলা হয়, যা এখন বিচারাধীন।
সোনালী ব্যাংকের নড়াইল শাখার ম্যানেজার আবু সেলিম নিউজবাংলাকে জানান, সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কাছে দেয়া লাকির ৪৩টি চালান পরীক্ষা করে নয়টি সঠিক পাওয়া গেছে। বাকিগুলোর সিল ও স্বাক্ষর জাল। এই নয় চালানে ব্যাংকে জমা হয়েছে ১৩ লাখ ১২ হাজার ৫২০ টাকা।
সোমবার চারটি চালানের আরও ৩ লাখ ৯৬ হাজার ৯৭০ টাকা জমা পড়েছে। ৩০টি চালানের প্রায় ৫৩ লাখ টাকা এখনও বাকি।
অভিযুক্ত লাকি জানান, মার্চসহ চার মাসের ফি তিনি হস্তান্তর করেছেন। বাকি মাসের হিসাব তার কাছে নেই।
তিনি বলেন, ‘এসব মাসের টাকা তত্ত্বাবধায়ক স্যার কাকে দিয়ে ব্যাংকে পাঠিয়েছেন তা আমি বলতে পারব না। এ দায়ভার আমার নয়।’
সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আব্দুর শাকুর বলেন, ‘হিসাবরক্ষক প্রতি মাসে একটি চালান প্রস্তুত করে আমার কাছে উপস্থাপন করেন। আমি সেটা যাচাই-বাছাই করে চালানের নীচে স্ব-হস্তে লিখে দেই ‘সমুদয় টাকা সরকারি কোষাগারে জমা প্রদানের জন্য বলা হলো’। এরপর আমি স্বাক্ষর করি।
‘হিসাবরক্ষকের দায়িত্ব এই চালানে উল্লিখিত টাকা সোনালী ব্যাংকে গিয়ে জমা দেয়া এবং চালানটি নথিজাত করা। এ দায় তার।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুনেছি নতুন করে একটি বিভাগীয় তদন্ত কমিটি হয়েছে। তবে এখনও কোনো চিঠি পাইনি।’