ঝালকাঠির নলছিটিতে আগুন দিয়ে অর্ধশতাধিক বাবুই পাখির ছানা পুড়িয়ে দেয়া জালাল সিকদারকে ক্ষমা করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। আর জালাল জানালেন, অপরাধ নয় ভেবে তিনি পাখি হত্যা করেছেন।
ঘটনাটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে ইউএনও রুম্পা সিকদার জালালকে রোববার নিজ কার্যালয়ে ডেকে নেন। সেখানে এসিল্যান্ড সাখাওয়াত হোসেন ও নলছিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী আহমেদের উপস্থিতিতে তাকে নিঃশর্ত ক্ষমা করে দেন।
এমন অমানবিক ঘটনায় কেন ক্ষমা করা হলো, তা জানতে চাইলে ইউএনও বলেন, জালাল একজন গরীব কৃষক। তিনি পাখি হত্যার দায় স্বীকার করে হাত জোড় করে ক্ষমা চেয়েছেন। ভবিষ্যতে এমন কাজ আর করবেন না বলে প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। তাই এবাবের মতো ক্ষমা করা হয়েছে।
এ সময় জালাল সিকদার বলেন, ‘পাখির বাচ্চা মেরে ফেলা যে একটা অপরাধ, তা আমি জানতাম না। জানলে এ কাজ আমি করতাম না।’
ইউএনও নিউজবাংলাকে আরও বলেন, ‘পাখির ছানাগুলোকে মেরে ফেলা হয়েছে ঠিক, কিন্তু আগুনে পোড়ানোর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।’
তবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) আহম্মেদ হাছান জানান, তিনি সেখানে বাবুই ছানাগুলোকে আগুন দিয়ে পোড়ানোর আলামত পেয়েছেন।
জালালকে ক্ষমা করে দেয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন এলাকার পশু-পাখিপ্রেমী লোকজন।
স্থানীয় আলী ইমাম খান নিউজবাংলাকে জানান, জালালের বিরুদ্ধে আগেও পশু-পাখির সঙ্গে অমানবিক আচরণের অভিযোগ আছে।
তিনি বলেন, ‘জালালকে ন্যূনতম শাস্তি দেয়া উচিত ছিল। এর আগেও তার ধানক্ষেতে পাশের বাড়ির গৃহস্থের হাঁস ঢুকে পড়ায় এই জালাল জীবিত হাঁসের দুই পা ধরে মাঝখান থেকে ছিঁড়ে ফেলে।’
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা জানে আলম জনি বলেন, ‘এই অপরাধীকে ক্ষমা করে দেয়ায় ভবিষ্যতে তাকে আরও বড় ধরনের অপরাধ করার সুযোগ দেয়া হলো।’
স্থানীয় দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘মিডিয়ায় সংবাদটি ছড়িয়ে পড়লে জালাল সিকদার বেশ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। কিন্তু ইউএনও সাহেব তাকে নিঃশর্ত ক্ষমা করে দেয়ার পর এলাকায় এসে তার আচরণ বদলে গেছে। ন্যূনতম শাস্তি দিলে ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ থেকে সে বিরত থাকত, যা এখন থাকবে না।’
জালালের বাড়ি নলছিটির ভৈরবপাশা গ্রামে। সেখানে তার ক্ষেতের ধান খাওয়ায় গত শুক্রবার (৯ এপ্রিল) বিকেলে পাশের তালগাছে থাকা বাবুই পাখির বাসায় আগুন দেন তিনি। এতে পুড়ে যায় অর্ধশতাধিক বাবুই পাখি ও ছানা।
জালাল বলেন, বাবুই পাখির বাসায় তিনি বাঁশের মাধ্যমে আগুন দেন।
আগুনে বাবুইয়ের ১১টি বাসা পুড়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে ৩৩টি মৃত ছানা পাওয়া গেছে। তবে পুড়ে যাওয়া আরও কিছু পাখির হদিস পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় জুলহাস মল্লিক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাবুই পাখির অপরাধ, তারা নাকি ক্ষেতের ধান খেয়ে ফেলে। এমন ঘৃণ্য কাজ একজন মানুষ করতে পারে, তা ভাবতেই অবাক লাগে।’
ঝালকাঠি সদর উপজেলা বন কর্মকর্তা কার্তিক চন্দ্র মণ্ডল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মৌখিকভাবে অভিযোগ পেয়েছি। এটা যদিও খুলনা বন ও বণ্যপ্রানী বিভাগের আওতায়।
‘আমাদের ঝালকাঠি অফিস হলো সামাজিক বন বিভাগের। তবু আমি ঘটনাস্থলে যাব।’
পাখির নীড়ে আগুন দেয়া নিয়ে জানতে চাইলে জালাল সিকদার বলেন, ‘আমার ক্ষেতে ধান প্রতিদিন পাখিতে খেয়ে ফেলায় আমি আর্থিক লোকসানের দিকে যাচ্ছিলাম। তাই রাগের বশে এমন কাজ করেছি। কিন্তু এখন আমি এ ঘটনায় অনুতপ্ত।’