আলোচিত সমালোচিত ‘শিশুবক্তা’ রফিকুল ইসলাম মাদানির বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আরও একটি মামলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার মতিঝিল থানায় মামলাটি করা হয়। তবে মামলার বাদী হিসেবে সৈয়দ আদনান নামে এক ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হলেও তার বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি।
মতিঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াসির আরাফাত খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রফিকুল ইসলাম মাদানির বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। আজ বিকেল সাড়ে চারটার দিকে সৈয়দ আদনান বাদী হয়ে মামলা করেছেন।’
বাদীর সম্পর্কে ও এজাহার বিষয়ে জানতে চাইলে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘বাদীর পরিচয় আমার জানা নেই। আর এজাহার নিয়ে কাজ চলছে। আগামীকাল পাওয়া যাবে।’
রাষ্ট্রবিরোধী উসকানিমূলক ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে রফিকুলকে গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে নেত্রকোণার পূর্বধলার লেডির কান্দার নিজ বাড়ি থেকে রফিকুলকে আটক করে র্যাব-১৪-এর একটি দল।
তবে বিষয়টি বুধবার দুপুরে সংবাদমাধ্যমকে নিশ্চিত করা হয়। গ্রেপ্তারের পর রফিকুলের বিরুদ্ধে গাজীপুর মেট্রোপলিটন এলাকার গাছা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে র্যাব।
র্যাবের করা মামলায় রফিকুলের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ, বিভিন্ন সময়ে তিনি দেশ ও সমাজের জন্য উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলাসহ জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছেন।
মামলায় বলা হয়, রফিকুল বাংলাদেশের স্বার্থপরিপন্থি বিভিন্ন অপতৎপরতায় লিপ্ত। ধর্মীয় অর্থাৎ কোরআন-হাদিসের অপব্যাখ্যা দেয়ার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে উসকানি দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বিনষ্ট করতে উদ্বুদ্ধ করেন।
তিনি তার ওয়াজে প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্রের প্রতি শত্রুতামূলক মনোভাব ও সরকারের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টির জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্য প্রদান করে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করেন বলেও অভিযোগ করা হয়েছে এজাহারে।
মামলায় তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ হিসেবে গত ১০ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের বোর্ড বাজার এলাকার একটি ওয়াজের বক্তব্যকে উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি মানি না রাষ্ট্রপতি, আমি কচুর প্রধানমন্ত্রী মানি না। কিসের প্রশাসনের অর্ডার? আমি কোনো অর্ডার মানি না। আমার সংবিধানে প্রধানমন্ত্রী নাই, রাষ্ট্রপতি নাই, এমপি নাই। আমি মানি না প্রধানমন্ত্রী, মানি না স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। আমাকে রিমান্ডে নিবা? জেলে নিবা? ফাঁসি দিবা তাই তো?’
এজাহারে রফিকুল ইসলাম আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
রফিকুলের এসব ধারাবাহিক উসকানিমূলক বক্তব্যের কারণে তার অনুসারীরা ২৬ মার্চ ও পরবর্তী সময়ে বায়তুল মোকাররম মসজিদসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সহিংসতা চালায়। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সম্পদের ক্ষতি করে বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।
দেখতে খর্বকায় ও শিশুতোষ কণ্ঠের অধিকারী হওয়ায় রফিকুল ইসলাম মাদানিকে অনেকে ‘শিশুবক্তা’ বলে মনে করলেও তার দাবি, তিনি মোটেও শিশু নন। তার বয়স ২৬ বছর।
এর আগে ২৫ মার্চ মতিঝিল এলাকায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরবিরোধী মিছিল ও ভাঙচুরের সময় রফিকুল ইসলাম মাদানিকে আটক করেছিল রমনা থানার পুলিশ। সেখানে তিনি মৌখিক আশ্বাস দিয়েছিলেন, আর এমন উসকানিমূলক বক্তব্য দেবেন না।
কথা রাখেননি রফিকুল। বরং ছাড়া পেয়ে তার ঔদ্ধত্যপনা আরও বাড়ে। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের একটি রিসোর্টে কথিত দ্বিতীয় স্ত্রীসহ স্থানীয়দের হাতে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম-মহাসচিব মামুনুল হকের অবরুদ্ধ হওয়া নিয়ে একাধিকবার উসকানিমূলক বক্তব্য দেন রফিকুল। এরপরই তাকে আটক করার খবর দেয় র্যাব।