সুনির্দিষ্ট বিধি বা আইন প্রণয়ন না করা পর্যন্ত দুর্নীতির মামলার আসামি বা সন্দেহভাজন কোনো ব্যক্তির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেবে বিশেষ জজ আদালত; দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) নয়।
উল্লিখিত অভিমত দিয়ে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি) চেয়ে আবেদন করেছে দুদক।
আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় এমন আবেদনের বিষয়টি বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছি।’
বিদেশ যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে নরসিংদীর আতাউর রহমান ওরফে সুইডেন আতাউর হাইকোর্টে রিট করেন। তার রিটের শুনানি নিয়ে রুল জারি করে হাইকোর্ট।
ওই রুলের শুনানি শেষে উচ্চ আদালত গত ১৬ মার্চ রায় দেয়।
এর আগে ৪ এপ্রিল হাইকোর্ট অভিমত দিয়েছিল, কোনো ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষের খেয়াল-খুশি অনুযায়ী নাগরিকের চলাফেরার সাংবিধানিক অধিকার নিয়ন্ত্রণ করা অসাংবিধানিক।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার এক রায়ের পর্যবেক্ষণে এ অভিমত দেয়।
বিদেশ যাওয়ার ওপর দুদকের নিষেধাজ্ঞা চ্যালেঞ্জ করে নরসিংদীর আতাউর রহমান ওরফে সুইডেন আতাউরের করা রিটের শুনানি শেষে এ পর্যবেক্ষণ দেয় উচ্চ আদালত। ওই দিন এ সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়।
১২ পৃষ্ঠার রায়ে আদালত বলে, ‘আমাদের বলতে দ্বিধা নেই যে, নাগরিকের চলাফেরার সাংবিধানিক অধিকার কোনো ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষের খেয়াল খুশি অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণ বা বারিত করা অসাংবিধানিক। এটা বাস্তবতা যে, দুর্নীতি কিংবা মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত মামলাসমূহ অনুসন্ধান বা তদন্ত কিছুটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। যদিও বা সংশ্লিষ্ট বিধিতে অনুসন্ধান বা তদন্তের সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয়া আছে।’
একজন নাগরিকের চলাফেরার স্বাধীনতা ব্যক্তি জীবনের স্বাধীনতার অন্তর্ভুক্ত, যা শাশ্বত। এ স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে হলে আইন নির্ধারিত নিয়মে বা পদ্ধতিতে করতে হবে; অর্থাৎ কোন নাগরিকের চলাফেরার মৌলিক অধিকার নিয়ন্ত্রণ বা বারিত করতে হলে তা করতে হবে আইন বা বিধি অনুসারে, জনস্বার্থে। যার বিরুদ্ধে এ ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে তার অধিকার রয়েছে এ ধরনের পদক্ষেপের কারণ জানার।
‘আমাদের বলতে দ্বিধা নেই যে, নাগরিকের চলাফেরার সাংবিধানিক অধিকার কোন ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষের খেয়াল খুশি অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণ বা বারিত করা অসাংবিধানিক।’
হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চেয়ে দুদক আবেদন করে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০২০ সালের ২৪ আগস্ট আতাউর রহমানের সম্পদের তথ্য চেয়ে নোটিশ দেয় দুর্নীতি দমন কমিশন। এই নোটিশের পর ২২ অক্টোবর তিনি তার সম্পদের তথ্য দুদকে জমা দেন। এরপর অনুসন্ধানের নামে এই তদন্তকালে দুদক গত বছরের ২০ ডিসেম্বর আতাউর রহমানের বিদেশ যাবার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে পুলিশের বিশেষ শাখায় (এসবি) চিঠি দেয়।
ওই চিঠির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আসেন আতাউর রহমান। এরপরই এ রায় দেয় হাইকোর্ট।